Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নতুন ‘ক্যাপ্টেন’ খুঁজতে ইস্টবেঙ্গলে বৈঠক শুক্রবার

নতুন ‘ক্যাপ্টেন’ ঠিক করতে কাল, শুক্রবার ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে আলোচনায় বসছেন কর্মসমিতির সদস্যরা! ফুটবল টিমের ‘ক্যাপ্টেন’ নন, কর্তাদের ‘ক্যাপ্টেন’! সারদা কাণ্ডে ক্লাবের সর্বময় কর্তা দেবব্রত সরকারকে বুধবার সিবিআই হঠাত্‌ করে গ্রেফতার করার পর ময়দানে রীতিমতো চাঞ্চল্য। আর ইস্টবেঙ্গল তাঁবু জুড়ে সংশয়ের গভীর ছায়া। ক্লাবের দৈনন্দিন কাজ কে পরিচালনা করবেন, তা নিয়ে লাল-হলুদে তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত ধন্দও।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০৩
Share: Save:

নতুন ‘ক্যাপ্টেন’ ঠিক করতে কাল, শুক্রবার ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে আলোচনায় বসছেন কর্মসমিতির সদস্যরা!

ফুটবল টিমের ‘ক্যাপ্টেন’ নন, কর্তাদের ‘ক্যাপ্টেন’!

সারদা কাণ্ডে ক্লাবের সর্বময় কর্তা দেবব্রত সরকারকে বুধবার সিবিআই হঠাত্‌ করে গ্রেফতার করার পর ময়দানে রীতিমতো চাঞ্চল্য। আর ইস্টবেঙ্গল তাঁবু জুড়ে সংশয়ের গভীর ছায়া। ক্লাবের দৈনন্দিন কাজ কে পরিচালনা করবেন, তা নিয়ে লাল-হলুদে তৈরি হয়েছে চূড়ান্ত ধন্দও।

দেবব্রত ওরফে ময়দানের পরিচিত নিতুকে তাঁর ঘনিষ্ঠ লোকজন এবং কর্মসমিতির অনেক সদস্যই ‘ক্যপ্টেন’ বলে ডাকেন। কারণ ক্লাবের জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, সব যে নিতুই করে থাকেন। সেই কর্তা গ্রেফতার হয়ে যাওয়ার পর তাই ক্লাবের ‘রিমোট’ কার হাতে থাকবে, তা নিয়েই ডামাডোল।

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সর্বেসর্বা হলেও দেবব্রতবাবু কোনও পদাধিকারী নন। কর্মসমিতির ২৯ জন সদস্যের অন্যতম এক জন। অথচ বকলমে তিনিই সব। তাঁর গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ময়দানের লাল-হলুদ তাঁবু যেন আরও শুনশান হয়ে যায়। শুরু হয় ফিসফাস। ফুটবলারররা ফোন করতে থাকেন ঘনিষ্ঠ কর্তাদের। ক্লাবের ফোন বেজে চলে নাগাড়ে। ঘটনায় হতচকিত ক্লাব সচিব কল্যাণ মজুমদার বিকেলে তাঁবুতে চলে আসেন। পরে আসেন কর্মসমিতির আরও কয়েক জন সদস্য। রাত ন’টা পর্যন্ত ক্লাব সচিব কল্যাণবাবু-সহ কর্মসমিতির উপস্থিত সদস্যরা এই পরিস্থিতিতে কী করা হবে তা নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যান। সেখানে ঠিক হয়, পুরো কর্মসমিতি দাঁড়াবে নিতুর পাশে। আলিপুর আদালতে নিয়োগ করা হবে নামী আইনজীবী। তবে দেবব্রতবাবুর অনুপস্থিতিতে কে চালাবেন ক্লাবের কাজ, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত ঝুলে থাকে। ঠিক হয় কর্মসমিতির সভা ডাকা হবে শুক্রবার। এবং সেই কাজটা যে কঠিন তা মানছেন প্রায় সব কর্তাই।

ক্লাব কর্তারা এ ব্যাপারে কতটা দিশাহারা তা বোঝা যায় ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্যের কথায়। বলছিলেন, “নিতুকে কী ভাবে ছাড়িয়ে আনা যায়, আমরা এখন সেটা নিয়েই ব্যস্ত। কে ক্লাব চালাবে তা পরে ঠিক করব। সচিব তো সভা ডেকেছেন।” সচিবের সঙ্গে আলোচনা সেরে বেরিয়ে কর্মসমিতির সদস্য ঋত্বিক দাশ আবার বললেন, “যত দিন না নিতুদা ফিরছেন, তত দিন সচিব নিয়মিত আসবেন ক্লাবে। আমরা সবাই মিলে ক্লাব চালাব।” কিন্তু অন্যদের সঙ্গে কথা বলে মনে হল এটা শুধুই কথার কথা। ক্লাবের এক প্রভাবশালী কর্তা বললেন, “ক্লাবের হাল যিনিই ধরুন, তাঁকে সবাই মানবে তো? সবার যা ইগো প্রবলেম।”

ক্লাব এই মূহূর্তে বিরোধী শূন্য। সবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন হয়ে গিয়েছে। ফলে ছন্নছাড়া বিরোধীগোষ্ঠী ক্লাব দখল করে নেবে, এ রকম ভয় নেই শাসকদের। দুই বিরোধী নেতা পার্থ সেনগুপ্ত এবং সুপ্রকাশ গড়গড়ি সেটা নিয়ে ভাবছেনও না। প্রাক্তন ফুটবল সচিব সুপ্রকাশ বললেন, “নির্বাচন তো সবে হল। এক জন না থাকলে কী হবে। ইস্টবেঙ্গল অন্যরা চালাবে।” আর প্রাক্তন সচিব, আইনজীবী পার্থ সেনগুপ্তর মন্তব্য, “এখনও কিছু ভাবিনি।”

এর বাইরে থাকে ফুটবল টিম। সেটা তৈরি হয়ে গিয়েছে। মাঠে নেমেও পড়েছে আর্মান্দো কোলাসোর টিম। স্পনসরের চেক আসছে নিয়মিত। আপাত দৃষ্টিতে এই মুহূর্তে ক্লাবের ‘বড়’ কাজ কিছু নেই। কিন্তু সেই ধারণাটা একেবারেই ভুল। কোচ বা ফুটবলার নিয়ে নিয়মিত সমস্যা লেগে থাকে। মরসুম শুরু হয়ে যাওয়ায় প্রচুর ম্যাচ সংগঠন করতে হয় ক্লাবকে। ক্রিকেট-সহ নানা বিষয়ে প্রতিদিনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। পাওনাদারদের কাকে কত টাকা দেওয়া হবে, কোচ, ফুটবলার বা ক্লাবের জন্য কখন কী কেনা হবে দৈনন্দিন এ সব কাজ করতে হয় বড় ক্লাবের কর্তাদের। লাল-হলুদে যা নিতুই করতেন। সকাল থেকে দুপুর, বিকেল থেকে রাত-- সঙ্গীদের নিয়ে নিতুর মতো ১৪-১৫ ঘণ্টা ক্লাব তাঁবুতে থাকার কোনও লোকই যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!

অনুষ্ঠান ছাড়া প্রেসিডেন্ট প্রণব দাশগুপ্ত ক্লাবে আসেন না। অনুষ্ঠান না থাকলে সচিব কল্যাণবাবু সপ্তাহে নিয়ম করে সন্ধ্যায় দু’দিন আসেন। ফুটবল সচিব সন্তোষবাবু ব্যবসা নিয়ে এত ব্যস্ত যে, ক্লাবে আসেন খুবই কম। জুনিয়র ফুটবলাররা অনেকে তাঁকে ফুটবল সচিব হিসেবে চেনেই না। এর উপর আছে এক কর্তার সঙ্গে অন্য কর্তার ইগোর লড়াই। সবই সামাল দিতেন নিতু।

ক্লাব কর্তারা এখনও বুঝতে পারছেন না সিবিআই কত দিন তাদের হেফাজতে রাখবে নিতুকে। বেশি দিন রাখলে কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের ঘোর বিপদ। শোনা যাচ্ছে কর্মসমিতির সভায় ঠিক হবে, আপাতত দৈনন্দিন কাজ দেখাশোনা করবেন সচিব কল্যাণবাবু। আর কর্মীদের নিয়ে ফুটবল বিভাগ দেখবেন ফুটবল সচিব। কিন্তু প্রশ্ন হল, লাল-হলুদ সচিব বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এমন সব বিতর্কিত মন্তব্য করেন যা নিয়ে ঝামেলা শুরু হয়ে যায় কোচ-ফুটবলারদের সঙ্গেই। তাঁর মন্তব্যে কতবার যে চটেছে পড়শি ক্লাবরা! প্রাক্তন কর্পোরেট কর্তা হওয়ায় অফিসের মতো ইস্টবেঙ্গলেও ‘বস’-এর মতো আচরণ করেন। তিনি দায়িত্ব পেলে কতটা সামলাতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় ক্লাবের অন্দরমহলেই।

আসলে ইস্টবেঙ্গলে যে এই মুহূর্তে ‘ক্যাপ্টেন’ হওয়ার কোনও লোকই নেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE