Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অবিনাশের বিশ্বমানের গোলে লিগ মুঠোয়

ময়দানে কি এখন রকেট যুগ চলছে! সাই ম্যাচে মেহতাব হোসেনের পর বুধবার এ বার যা বেরিয়ে এল, ইস্টবেঙ্গলের অবিনাশ রুইদাস আর কালীঘাটের কল্লোল পালের পা থেকে। শেষে নায়ক অবিনাশকে মিডিয়ার থেকে আগলে বারাসত স্টেডিয়ামের দর্শকদের কাছে নিয়ে গিয়ে অভিনন্দন কুড়োচ্ছিলেন ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক গুরবিন্দর সিংহ। ঠিক তখনই গ্যালারি থেকে মুখ তুলল পোস্টারটা। সাদা কাগজে আলতা দিয়ে লেখা রকেট স্পিড। সুপার হিট— অবিনাশ রুইদাস।

নায়ক অবিনাশের বুট পালিশ খাবরার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

নায়ক অবিনাশের বুট পালিশ খাবরার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৬
Share: Save:

কালীঘাট এমএস-৩ (ক্রিস্টোফার-২, কল্লোল)

ইস্টবেঙ্গল-৪ (র‌্যান্টি, রাহুল, ডং, অবিনাশ)

ময়দানে কি এখন রকেট যুগ চলছে!

সাই ম্যাচে মেহতাব হোসেনের পর বুধবার এ বার যা বেরিয়ে এল, ইস্টবেঙ্গলের অবিনাশ রুইদাস আর কালীঘাটের কল্লোল পালের পা থেকে। শেষে নায়ক অবিনাশকে মিডিয়ার থেকে আগলে বারাসত স্টেডিয়ামের দর্শকদের কাছে নিয়ে গিয়ে অভিনন্দন কুড়োচ্ছিলেন ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক গুরবিন্দর সিংহ। ঠিক তখনই গ্যালারি থেকে মুখ তুলল পোস্টারটা। সাদা কাগজে আলতা দিয়ে লেখা রকেট স্পিড। সুপার হিট— অবিনাশ রুইদাস।

পোস্টার দেখে মুখ টিপে হাসছিলেন কালীঘাট বিনাশকারী বজবজের অবিনাশ। বললেন, ‘‘বলটা পায়ে পড়তেই ঠিক করেছিলাম শট মারব।’’

নিটফল— কালীঘাট এমএসকে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে হারিয়ে এ দিনই লিগ ময়দানের গোষ্ঠ পাল মূর্তি টপকে লেসলি ক্লডিয়াস সরণিতে প্রায় ঢুকিয়ে ফেলল ইস্টবেঙ্গল। আট ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ২২। দ্বিতীয় বার ‘হেক্সা লিগ’ জিততে বিশ্বজিতের দলের দরকার আর মাত্র এক পয়েন্ট (মোহনবাগান-টালিগঞ্জ ম্যাচের ভবিষ্যৎ না ধরে)। লাল-হলুদ তাঁবুতে পঁচাত্তরের সেই সোনাঝরা বছরের কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় আর সুভাষ ভৌমিক তাঁদের মধ্যগগনে এ রকম আগুনে শটের পেটেন্ট পকেটে নিয়ে ঘুরতেন। ম্যাচ শেষে তাঁরাও উচ্ছ্বসিত অবিনাশকে নিয়ে।

পি কে বললেন, ‘‘রকেটের মতোই গোলে ঢুকল। কী পাওয়ার!’’ আর সুভাষের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘বিশ্বমানের গোল।’’

আর অবিনাশ রুইদাস নিজে কী বললেন? এ দিন দ্বিতীয়ার্ধটা তিনি খেললেন অনভ্যস্ত লেফট ব্যাকে। বাঁ হাতে চে গেভারার উল্কি করানো তরুণ ঝড়ের বেগে বাইক চালানোর জন্য বন্ধুদের কাছে বিখ্যাত। বলছিলেন, ‘‘জীবনের সেরা গোল পেলাম আজ। গোলটা বাবা-মাকেই উৎসর্গ করছি।’’

এ দিনের টিভি বিশেষজ্ঞ প্রাক্তন ফুটবলার সৌমিত্র চক্রবর্তী আবার অবিনাশের জন্য সমস্যায়। ‘‘ম্যাচ সেরার জন্য বিকাশ জাইরুকে বেছেই ফেলেছিলাম। কিন্তু অবিনাশের গোলটা দেখে নাম বদলাতেই হল।’’

চোদ্দো দিনের ব্যবধানে প্রথমার্ধে ০-২ পিছিয়ে থেকে জিতে ফেরা। আর্মি ম্যাচের পর বুধবার কালীঘাট। এ দিন ম্যাচটা ৫-৩ জিততে পারত লাল-হলুদ। রফিকের ঠেলা বল প্রথমার্ধে গোললাইন পেরোলেও রেফারি কেন গোল দিলেন না তা বোঝা যায়নি। দ্বিতীয় বার এ রকম নাটকীয় জয়ের দিনে মাঠ ফেরত প্রবীণদের কারও কারও প্রশ্ন, সুকুমার-বলরাম, সুভাষ-শ্যাম-সুরজিত, বিকাশ-কৃশানু-চিমা— লাল-হলুদের কালজয়ী এই ফরোয়ার্ড লাইনের সঙ্গে এক ব্র্যাকেটে কি বসতে পারেন এ বারের ডং-র‌্যান্টিরা!

লাল-হলুদে প্রথম হেক্সা লিগ আনার কারিগর প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তর, ‘‘বিশ্বজিতের টিমের আক্রমণটা ভাল। তবে বলরাম, সুভাষরা এগিয়ে।’’ আর বলরামের সতীর্থ সুকুমার সমাজপতি বললেন, ‘‘এখনও ওদের সঙ্গে এক আসনে বসার সময় আসেনি র‌্যান্টিদের। তবে আজকের নাটকীয় জয় বোঝাল টিমটা ভাল এগোচ্ছে।’’

লাল-হলুদ কোচ বলে গেলেন, ‘‘ছেলেরা লিগে দু’টো ম্যাচে পিছিয়ে থেকে জয় আনল। কঠিন কাজ! ’’

তবে ডার্বির ঠিক আগের ম্যাচ দেখাল বিশ্বজিতের টিমের রক্ষণ অ্যাকিলিসের গোড়ালির মতোই। এ দিন বেলো রজ্জাকদের রক্ষণ চিজোবা ক্রিস্টোফারকে যে ভাবে জোড়া গোল ‘গিফট’ করল, তার পরে প্রশ্ন উঠছে, দেবজিৎ, ওমোলোর মতো ভারতীয় ফুটবল কাঁপানো দুই প্রাক্তন ডিফেন্ডার কোচিং স্টাফে থাকতে কী ভাবে রক্ষণ এত নড়বড়ে হয়? কেন রোজই রক্ষণ এক লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে? আট ম্যাচে ২০ গোল করলেও ৮ গোল হজমও করে ফেলেছে ইস্টবেঙ্গল। আর মেহতাব-খাবরার মতো দুই ভারতসেরা ডিফেন্সিভ মিডিও থাকতে মিডল করিডর দিয়ে বিপক্ষের আক্রমণ এত ধেয়ে আসছে কেন? বিপক্ষের মিডিওরা লাল-হলুদের ফরোয়ার্ড ও মাঝমাঠের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব কেন রোজ কাজে লাগিয়ে যাচ্ছে? যদিও লাল-হলুদের গোল হজম নিয়ে রেফারির অফসাইড না দেওয়াকে দায় করছেন কেউ কেউ।

যা দেখে বাগান কোচ সঞ্জয় সেনের আশা ও আশঙ্কা, ‘‘কালীঘাট যদি তিন গোল করতে পারে, তা হলে...।’’ তবে ওরা কিন্তু গোল খেয়েও জিতছে।

রবিবার ডার্বিতে বিশ্বজিতের ‘ডং কো পকড় না মুশকিল হি নহি...’ নাকি সঞ্জয়ের ‘রোক সকো তো রোক লো’— কোন স্লোগানটা ডুডু-বেলো দ্বৈরথের পর যুবভারতী মাতাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিল বুধ সন্ধের বারাসত।

ইস্টবেঙ্গল: লুইস, রাহুল, দীপক, বেলো (র‌্যান্টি), সৌমিক (গুরবিন্দর), অবিনাশ, মেহতাব, খাবরা, বিকাশ, রফিক (তুলুঙ্গা), ডং।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

East Bengal Kalighat Barasat Stadium
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE