Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দু’মাসেই শ্রীনি-সংসার সাফ করার চ্যালেঞ্জ

রোববারের শেষ বিকেলে তাঁকে মুম্বইয়ের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এই জন্যই পাওয়া গেল যে, নাগপুরের এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ডোমেস্টিক নয়, এখান থেকেই ছাড়ে। ডিপার্চার গেট গিয়ে ঢুকে যাওয়ার মুখে তিন ঘণ্টা আগে নিযুক্ত নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্ট আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন। সকালে হোটেলে তাঁর একত্রিশ তলার আরবসাগর ফেসিং ঘর আর বিমানবন্দর— দু’জায়গাতেই শশাঙ্ক মনোহর এক্সক্লুসিভ কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে।রোববারের শেষ বিকেলে তাঁকে মুম্বইয়ের ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে এই জন্যই পাওয়া গেল যে, নাগপুরের এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ডোমেস্টিক নয়, এখান থেকেই ছাড়ে। ডিপার্চার গেট গিয়ে ঢুকে যাওয়ার মুখে তিন ঘণ্টা আগে নিযুক্ত নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্ট আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন। সকালে হোটেলে তাঁর একত্রিশ তলার আরবসাগর ফেসিং ঘর আর বিমানবন্দর— দু’জায়গাতেই শশাঙ্ক মনোহর এক্সক্লুসিভ কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে।

গৌতম ভট্টাচার্য
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০০:২৯
Share: Save:

প্রশ্ন: আপনি সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন দু’মাস নেবেন কাজটা তুলতে। এটা তো ২০ আস্কিং রেট স্বেচ্ছায় নেওয়া।

মনোহর: কেন?

প্র: টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মতো তো যে, লাস্ট পাঁচ ওভারে ২০ করে করতে হবে।

মনোহর: (হাসি) তেমনই মনে হচ্ছে বুঝি? বাট আমি কোনও প্রবলেম দেখছি না।

প্র: আজ থেকে দু’মাস মানে কি ৪ ডিসেম্বর আবার আপনি মিডিয়ার সামনে আসবেন?

মনোহর: হ্যাঁ ঠিক দু’মাস বাদে আসব। তখন না হয় আমাকে বিচার করে দেখা হোক।

প্র: ক্রিকেট বোর্ডের এই সংস্কার অভিযান কবে শুরু হবে?

মনোহর: আজ থেকে। এখুনি।

প্র: আপনি যেমন সর্বাত্মক সংস্কারের কথা বলেছেন, সেটা এই কাঠামোয় কী করে সম্ভব? এত আর্থিক পাহারাদারির কথা বলেছেন, কিন্তু আপনার বোর্ড সদস্যরা তো এখন সাত তারা জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। তারা হঠাৎ মধ্যবিত্ততায় ফিরতে চাইবে কেন?

মনোহর: যা নিয়ম করছি সবাইকে মানতে হবে। কোনও ট্যাঁ-ফু নেই। কেউ নিজে কোনও টিকিট কাটতে পারবে না। প্লেন টিকিট, হোটেল বুকিং সব করবে বোর্ড। প্রত্যেকটা মিটিং হবে মুম্বইয়ে। কোনও চেন্নাই, কলকাতা, দিল্লি কোথাও যাওয়া-টাওয়া নেই। ফালতু হোটেল ভাড়া নেই। মুম্বইয়ে বোর্ডের অফিসে প্রতি বার বৈঠক হবে। কমিটি মেম্বারের সংখ্যাও আমি কমিয়ে দিচ্ছি। আগে গাদা গাদা লোক কমিটিতে ঢুকে পড়ত। সব আমি কমাচ্ছি।

প্র: কিন্তু ওই কমিটির টিএ, ডিএ-টা তো বিরাট আকর্ষণের জায়গা। শ্রীনির আমলে এক-একটা বৈঠকে সাত-আটজন করে সদস্যকে আমন্ত্রণ জানানো হত। তাঁরা মোটা টাকা ডিএ, টিএ পেতেন। রাতারাতি এগুলো বন্ধ হবে কী করে?

মনোহর: নিয়ম মেনে চলতেই হবে। আর আমি ইনভাইটি মেম্বারদের ব্যাপারটা একদম তুলে দিচ্ছি। একজন ইনভাইটিও থাকবে না কোনও কমিটিতে।

প্র: ভারতীয় ক্রিকেট রসিকদের আসল আগ্রহ কিন্তু এই সব টিএ-ডিএ নয়। তাদের যাবতীয় আগ্রহ ক্রিকেট টিম ঘিরে। আপনি ক্রিকেট সারাক্ষণ ফলো করেন বলে আরওই জানবেন, আগের জমানায় শ্রীনির সঙ্গে একটা অদ্ভুত বোঝাপড়া ছিল ধোনির। প্রচুর এক্সট্রা ক্ষমতা এর ফলে ধোনি এনজয় করেন। সেটা কি অক্ষুণ্ণ থাকবে?

মনোহর: আমি এই সব নিয়ে এখন ভাবছি না। আমার প্রাথমিক লক্ষ্য আর্থিক স্বচ্ছতা তৈরি। আর ক্রিকেট ফ্যানের মনে বিশ্বাসযোগ্যতাটা আনা।

প্র: কী ভাবে আনবেন বিশ্বাসযোগ্যতাটা?

মনোহর: আমি চাই প্লেয়ারদের ওপর এই যে সতর্ক দৃষ্টি রাখা বা কোথায় কে কী করছে এগুলো নিশ্চিত করা— তার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাহায্য নেব। আমি অনুরাগকে নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব। করে বলব, এই গোয়েন্দাগিরির দিকটা নিখুঁত ভাবে দেখার জন্য যথেষ্ট পরিকাঠামো আমাদের নেই। আপনারা প্লিজ আমাদের তরফে এই দায়িত্বটা নিন।

প্র: আপনার এই সংস্কার আনার পরিকল্পনা ভারতীয় ক্রিকেটে অভূতপূর্ব। তার মধ্যে আর কী কী রয়েছে?

মনোহর: প্রতিটি সদস্য সংস্থাকে এ বার থেকে তাদের অডিটেড রিপোর্ট অনলাইন করতে হবে। ওদের অডিটর ছাড়াও বোর্ড নিযুক্ত অডিটর গিয়ে ওদের খাতা পরীক্ষা করবেন। দেখবেন, যে মোটা টাকা ওরা গ্রান্ট হিসেবে পাচ্ছে তার ঠিক ব্যবহার করছে কি না? যদি না করে, পরের গ্রান্ট আটকে যাবে। বোর্ডের হিসেবেও স্বচ্ছতা আনা হবে। বোর্ডের ব্যালান্স শিট এখন থেকে আমরা অনলাইন করে দেব।

প্র: শশাঙ্ক, আজকে গদিতে বসার পর আপনার কি দু’বছর আগে এই ঘরেই একটা বোর্ড মিটিং মনে পড়ছিল? যেখানে চরম অপমানিত হয়ে আপনাকে বেরিয়ে যেতে হয়। আপনি এসেছিলেন শ্রীনির বিরুদ্ধে নৈতিক আওয়াজ তুলতে। প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন বাকিরাও আপনার সঙ্গে আওয়াজ তুলবে। কিন্তু শ্রীনির চাতুর্যে সে দিন আপনাকে একঘরে করে দেওয়া হয়েছিল।

মনোহর: মনে পড়ছিল না। কারণ ওটা ছিল ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং। জেনারেল মিটিং ছিল না। ওয়ার্কিং কমিটিতে সে বার ওদেরই আধিপত্য ছিল। কাজেই দিনটাও ছিল ওদের। আর একটা কথা এখানে বলি। বোর্ডের সভায় চেয়ারম্যানের ভোট খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। তার একটা ভোট থাকে, আবার কাস্টিং ভোটও থাকে। আমি নিজের সেই চেয়ারম্যান্‌স ভোটটা তুলে দিচ্ছি। কাস্টিং ভোটটা শুধু রাখলাম।

প্র: আর ইম্পর্ট্যান্ট কোনও সংস্কার?

মনোহর: স্বার্থের সংঘাত ব্যাপারটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট। এটাকে আমাকে ঠিক করতেই হবে যে, না প্লেয়ার, না অফিশিয়াল, কারও যেন স্বার্থের সংঘাত না হয়।

প্র: আপনার ছেলে অদ্বৈত বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত। দুটো কমিটিতে আছেন। তিনি কী করবেন?

মনোহর: অদ্বৈত কালকেই রেজিগনেশন দিচ্ছে দুটো কমিটি থেকেই।

প্র: বলছেন কী?

মনোহর: ইয়েস।

প্র: আপনি বলছিলেন বোর্ডে এক জন এথিক্স অফিসারও আনছেন।

মনোহর: হ্যাঁ। আর সেই এথিক্স অফিসার বোর্ডের বাইরের লোক হতে হবে। পরিচ্ছন্ন প্রশাসন নিশ্চিত করার জন্য যা যা করণীয়, সব করব। কারণ মানুষের মনে বোর্ডের ভাবমূর্তি খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে। সেটাকে দ্রুত ঘোরাতে হবে।

প্র: ভাবমূর্তি কলঙ্কিত হওয়ার পেছনে নাটের গুরু যিনি, তাঁকে নিয়ে কী ভাবছেন?

মনোহর: ভাবছি যে, ২০১৩ পর্যন্ত শ্রীনি কিন্তু ঠিকই ছিল। তখনও ওর ব্যক্তিগত ইন্টারেস্টের ব্যাপারটা আসেনি। ওটা সামনে আসতেই ও আপস করা শুরু করল। আর এই আপস যদি এক বার শুরু হয়ে যায়, তা হলে সেটা ভয়ঙ্কর ভাবে বাড়তে বাড়তে একটা মানুষ চোরাবালির দিকে এগিয়ে যায়!

প্র: সংস্কার চালু করার সঙ্গে তদন্তও কি করবেন যে, কে বা কারা বোর্ডকে আজকের চেহারায় নিয়ে এসেছে?

মনোহর: না। সকলকে নিয়ে বোর্ড চালাতে চাই। প্রতিহিংসার ছাঁচে গিয়ে নয়।

প্র: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আজকেই প্রথম বোর্ডের সভায় বসলেন। কী মনে হয়, সৌরভের প্রশাসনিক ভবিষ্যৎ কেমন?

মনোহর: সৌরভ ব্রাইট। ওর ভালই করা উচিত কিন্তু ও এমন এক জনের উত্তরাধিকারী হিসেবে এসেছে, তাঁর এমন উঁচু অবস্থান যে, সেটা ধরা খুব খুব কঠিন।

প্র: আর অভিষেক ডালমিয়া?

মনোহর: ওর খুব মন দিয়ে যত্ন করে তৈরি হওয়া উচিত। যাতে ওর বাবার যে বিশালত্ব, তার অন্তত কাছাকাছি যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE