Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায় চলে গেলেন

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়

সাতাত্তরের কসমস ম্যাচে পেলের ফ্রি-কিক বাঁচিয়ে তৈরি করেছিলেন ইতিহাস। ঐতিহাসিক সেই ম্যাচের পর তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে ভেসেছিলেন স্বয়ং ফুটবল সম্রাট!

কসমস ম্যাচে উড়ে গিয়ে গোল বাঁচাচ্ছেন মোহনবাগানের প্রহরী। (ইনসেটে) তরুণ বয়সের শিবাজি।

কসমস ম্যাচে উড়ে গিয়ে গোল বাঁচাচ্ছেন মোহনবাগানের প্রহরী। (ইনসেটে) তরুণ বয়সের শিবাজি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪৯
Share: Save:

সাতাত্তরের কসমস ম্যাচে পেলের ফ্রি-কিক বাঁচিয়ে তৈরি করেছিলেন ইতিহাস। ঐতিহাসিক সেই ম্যাচের পর তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে ভেসেছিলেন স্বয়ং ফুটবল সম্রাট!

ভারতীয় ফুটবলের সেই ‘টাইব্রেকার সম্রাট’ গোলকিপার শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার রাতে নিজেই হয়ে গেলেন ইতিহাস।

এ দিন রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫। রেখে গেলেন স্ত্রী এবং এক পুত্রকে।

কয়েক বছর আগেই হৃদপিণ্ডে অস্ত্রোপচার হয়েছিল শিবাজির। তবে ময়দানের সঙ্গে কখনওই তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। সুস্থ হয়ে নিয়মিত মাঠে আসা শুরু করে দিয়েছিলেন। ছিলেন মোহনবাগান ক্লাবের টেকনিক্যাল কমিটির অন্যতম সদস্য।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল থেকে বেশ কয়েকটি ফুটবল অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছিলেন তিনি। মোহনবাগানের ফুটবল সচিব সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের পাড়ার বালি অ্যাথলেটিক ক্লাবের ফুটবল ফাইনালেও প্রধান অতিথি ছিলেন। সেখান থেকেই তিনি চলে যান আলিপুরের একটি অনুষ্ঠানে। সব অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর রাতের দিকে পার্ক সার্কাসে বন্ধুর বাড়ি যান স্ত্রীকে নিয়ে। আড্ডা দেওয়ার মাঝে হঠাৎ উঠে যান বাথরুমে। সেখানেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। দরজা ভেঙে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাঁকে বার করে দ্রুত ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

রাতেই সদ্যপ্রয়াত শিবাজিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সল্টলেকের বাড়িতে। বেশি রাতে শিবাজির মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে রাখা হয় তপসিয়ার পিস ওয়ার্ল্ডে। সোমবার সকাল দশটায় তাঁর মরদেহ ফের বাড়িতে নেওয়া হবে। সেখান থেকে মোহনবাগান তাঁবু ঘুরে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

শিবাজির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে আসে ময়দানে। গৌতম সরকার বললেন, ‘‘ভাবতে পারছি না শিবাজি আর নেই। ভাল গোলকিপার তো ও ছিলই। মানুষ হিসেবেও অসাধারণ ছিল।’’ শ্যাম থাপাও বললেন, ‘‘সাত বছর আমরা একসঙ্গে মোহনবাগানে খেলেছি। কী করে ভুলব সেই সব দিন। পেলের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে আমাকে বলেছিল, শ্যামদা টেনশন হচ্ছে। কিন্তু মাঠে নামার পরে ওকে দেখে মনে হয়নি টেনশনে আছে।’’ সুধীর কর্মকার বললেন, ‘‘সাতাত্তরে সেই কসমস ম্যাচের আগে শিবাজিকে বলেছিলাম, আমরা ভুল করলেই তুই চেচিয়ে সতর্ক করবি। পুরো ম্যাচটাই ও চিৎকার করে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছিল।’’ ওই ম্যাচে শিবাজির আর এক সতীর্থ প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘শিবাজির জন্যই আমরা মোহনবাগানে ত্রিমুকুট জিতেছিলাম।

এ দিনই এএফসি কাপ ম্যাচ খেলতে মলদ্বীপে পৌঁছেছে মোহনবাগান। সেখানে শিবাজির মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর ফুটবলাররা শোকস্তব্ধ হয়ে যান। মোহনবাগানে জীবনের স্মরণীয় ম্যাচগুলো খেললেও বড় ক্লাবে প্রথম তিনি খেলেন ইস্টবেঙ্গলের হয়েই। খেলেছেন মহমেডান, জাতীয় দলের হয়েও। ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটও খেলেছেন তিনি।

আরও পড়ুন:

আজ আইপিএল নিলামে নজর থাকুক এঁদের দিকে

মলদ্বীপে শোকস্তব্ধ সবুজ-মেরুন

শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ড্যারেল ডাফি, বলবন্ত সিংহরা। এএফসি কাপের ম্যাচ খেলতে রবিবার সন্ধ্যায় মলদ্বীপ পৌঁছয় মোহনবাগান। দীর্ঘ বিমানযাত্রার ক্লান্তি থাকায় ফুটবলারদের এ দিন বিশ্রাম দিয়েছিলেন সহকারী কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী। কিন্তু নৈশভোজের সময়ই প্রাক্তন সবুজ-মেরুন তারকা ও দলের টেকনিক্যাল কমিটির অন্যতম সদস্যের প্রয়াণের খবরে শোকের ছায়া নেমে আসে শিবিরে। রাতে মলদ্বীপে থেকে ফোনে শঙ্করলাল বললেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না যে শিবাজিদা মারা গিয়েছেন। একসঙ্গে আমরা এতগুলো বছর ছিলাম।’’

মলদ্বীপের ভ্যালেন্সিয়া এফসির বিরুদ্ধে মোহনবাগানের ম্যাচ ২১ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার। প্রধান কোচ সঞ্জয় সেন-সহ প্রথম দলের ছয় ফুটবলার যাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shibaji Banerjee Dead Goalkeeper
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE