Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হতাশায় ভোগার ছেলে নই, বর্তমানে বাঁচি

আমি একজন কর্মীর মতো নিজেকে রাখব। সব খেলার কিংবদন্তিদের সঙ্গে আলোচনা করব। কিন্তু দেখব, পুরোটাই যেন আলোচনায় শেষ না হয়। কাজ যাতে বেশি হয় দেখব।প্রায় ছ’মাস। প্রায় ছ’মাস আগে বাংলা ক্রিকেট থেকে চলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। অপমানিত হয়ে। দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন শুনে। সিএবি-তে নয়, মোহনবাগান ক্লাবে বসে বলতে হয়েছিল, আর নয়। বাংলা ক্রিকেট থেকে চলে যাচ্ছেন তিনি। আজীবনের মতো।

মন্ত্রিত্বলাভের দিনে। -পিটিআই

মন্ত্রিত্বলাভের দিনে। -পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৬ ০৪:১০
Share: Save:

৩০ ডিসেম্বর ২০১৫।

২৭ মে ২০১৬।

প্রায় ছ’মাস। প্রায় ছ’মাস আগে বাংলা ক্রিকেট থেকে চলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। অপমানিত হয়ে। দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন শুনে। সিএবি-তে নয়, মোহনবাগান ক্লাবে বসে বলতে হয়েছিল, আর নয়। বাংলা ক্রিকেট থেকে চলে যাচ্ছেন তিনি। আজীবনের মতো।

ছ’মাস পর আবার যখন বাংলার খেলাধুলোর আকাশে আবির্ভাব ঘটল তাঁর, গায়ে ক্রিকেটের সাদা জার্সিটা আর নেই। বরং যে জার্সি শুক্রবার থেকে তাঁর গায়ে উঠে গেল, তা সব রকমের খেলাধুলোর। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী নন ঠিকই, কিন্তু আজ থেকে লক্ষ্মীরতন শুক্ল ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী তো বটে!

ফেলে আসা ছ’টা মাস আজ মনে পড়ছে না? মনে পড়ছে, ক্রিকেটের শেষের সেই দিন?

‘‘পুরনো কথা ভেবে আর কী হবে? যেটা অতীত, তাকে অতীত-ই করে দেওয়া ভাল। আমি বর্তমানে বাঁচি,’’ এ দিন রাতে ফোনে আনন্দবাজারকে বলছিলেন লক্ষ্মী। বিকেলে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নাম ঘোষণা হওয়ার পর থেকে যাঁর মোবাইলে একের পর এক ফোন, মেসেজ ঢুকে চলেছে। রাত সাড়ে এগারোটাতেও মোবাইল পাঁচ মিনিটের জন্য ফাঁকা পাওয়া যাচ্ছে না। পরিচিত থেকে অর্ধ-পরিচিত—কে বাদ যাচ্ছেন?

‘‘আসলে কী জানেন, আমি কোনও দিন লড়াই ছেড়ে পালাইনি। জীবনকে আপনি যে ভাবে নেবেন, জীবন ঠিক সে ভাবেই আপনার কাছে ধরা দেবে। আমি হতাশায় ভোগার ছেলে নই। বরং খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর ভাবতাম, যা-ই করি এর পর ডিপ্রেশনে নিজেকে যেতে দেব না,’’ বলতে থাকেন লক্ষ্মী। সঙ্গে জুড়ে দেন, ‘‘তখন খুব একটা কেউ পাশে ছিল না। একমাত্র দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ছিলেন। একবারও বলেননি, লক্ষ্মী তোমাকে নির্বাচনে লড়তে হবে। বলেছিলেন, তুমি অ্যাকাডেমি করো। আমার মা নেই। উনি আমার মায়ের মতো। উত্তর হাওড়ার মানুষও আমার পাশে থেকেছেন। আজ প্রমাণ তো হল যে, জীবন ছ’মাসে কারও শেষ হয় না।’’

ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু ক্রিকেট যে এখনও তাঁকে ছাড়েনি তা এ দিন আবার বোঝা গেল। রেড রোডে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে একবার গিয়েছিলেন। তার পর নবান্ন ঘুরে আবার আসেন। এবং বাংলার নতুন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর জন্য উষ্ণ অভ্যর্থনার বন্দোবস্তই করেছিল সিএবি। কেউ কেউ তাঁকে মালাও পরিয়ে দেন। ‘‘কী করব? ইডেন আমার বাড়ির মতো। ওখানে না গেলে শান্তি আজও পাই না। যে কোনও ভাল কাজের আগে, ইডেনকে একবার ছুঁয়ে যেতে হয়,’’ বলছিলেন লক্ষ্মী। যাঁর অভিভূত কণ্ঠস্বর থেকে আরও বেরোতে থাকে, ‘‘ইডেনে আজ যা পেলাম, বহু দিন মনে থাকবে। বিশ্বরূপদা (বিশ্বরূপ দে), বুবুদা (চিত্রক মিত্র), টুম্পাইদা (সৃঞ্জয় বসু) আমাকে যে অভ্যর্থনা দিলেন, অসাধারণ। দাদির (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) সঙ্গেও দেখা হল। টুকটাক কথাও হয়েছে।’’

লক্ষ্মী বলে দিচ্ছেন, বাংলার ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তাঁর কাজ শুধু ক্রিকেটে আটকে থাকবে না। বরং ক্রিকেট বাদে অন্যান্য খেলাধুলোরও উন্নতিসাধনের চেষ্টা করবেন তিনি। ‘‘দিদি আমাকে স্পোর্টসের জন্য এখানে এনেছেন। ক্রিকেটের জন্য নয়। গত পাঁচ বছরে স্পোর্টসে প্রচুর উন্নতি করেছে এই সরকার। আমি একজন কর্মীর মতো নিজেকে রাখব। সব খেলার কিংবদন্তিদের সঙ্গে আলোচনা করব। কিন্তু দেখব, পুরোটাই যেন আলোচনায় শেষ না হয়। কাজ যাতে বেশি হয় দেখব। তা ছাড়া অরূপদা (বিশ্বাস) আছেন আমার উপরে। ওঁর থেকে প্রচুর শিখবও আমি।’’

আর ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্ল? বাংলা ছেড়ে দিলেও ক্লাব ক্রিকেট খেলতেন। এ দিনের পর তাঁর ক্রিকেটার সত্তার কি চিরতরে মত্যু হয়ে গেল? শুনে হাসতে থাকেন লক্ষ্মী। বলে দেন, ‘‘দিদি কিন্তু আমাকে বলেছেন খেলা না ছাড়তে। খেলে যেতে। দেখা যাক।’’ যদিও শনিবার জেসি মুখোপাধ্যায় সেমিফাইনাল তিনি মোহনবাগানের হয়ে খেলছেন না বলেই খবর। আর বাংলা? ়আবার কোনও দিন সেই জার্সিতে দেখা যাবে? লক্ষ্মী বললেন, ‘‘সে সব কথা আজ থাক।’’ বোঝা গেল, মন্ত্রী লক্ষ্মীরতন যা-ই করুন, পিছনের দিকে আর হাঁটবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lakshmi Ratan Shukla Belive in living
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE