সিরিজ জেতাল যে পার্টনারশিপ— ৩৮.২ ওভারে ২৫৬
পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে শেষ বার তিন অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন প্রায় ছ’বছর আগে। চলতি সিরিজের আগে শেষ বার ভারতের নীল জার্সি পরে মাঠে নেমেছিলেন, প্রায় তিন বছর আগে। ক্যানসার থেকে অফ ফর্ম, সমালোচনা থেকে টিমের বাইরে চলে যাওয়া— মাঝের সময়টা যা গিয়েছে যুবরাজ সিংহের, সে সব নিয়ে অনায়াসে একটা ফিল্ম বানিয়ে ফেলা যায়।
কিন্তু বৃহস্পতিবারের বরাবাটিতে তাঁর ইনিংস যে রুপোলি পর্দার চিত্রনাট্যকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে। হাত মুঠো করে বুকে বারবার ধাক্কা, চোখমুখে আবেগ— সেঞ্চুরি লাভের পরবর্তী দৃশ্যগুলোকে যে সিনেম্যাটিক বললেও কম বলা হয়।
ইংল্যান্ড সিরিজের টিমে পঁয়ত্রিশ বছরের যুবরাজের নাম থাকা নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। পুণেয় প্রথম ম্যাচে মাত্র পনেরো রানে আউট হয়ে যাওয়ার পরে তো আরওই। সেই সমালোচনার জবাব যে ভাবে দিলেন যুবরাজ, তার বিশেষণ বোধহয় তিনি নিজেই। অসাধারণ, অবাস্তব, দুর্দান্ত বা অবিশ্বাস্য নয়, তাঁর এই ইনিংসটা সবচেয়ে ভাল ধরা যাবে অন্য একটা শব্দে— যুবরাজকীয়!
“গোটা ঘরোয়া মরসুমেই ভাল ব্যাট করেছি। বল ভাল মেরেছি। ফিটনেস আর ব্যাটিং নিয়ে প্রচুর খেটেছি।
তিরিশ পেরনোর পর ফিটনেস নিয়ে বেশি খাটতে হয়। প্রথম ওয়ান ডে-তেও কিন্তু বল ভাল মারছিলাম।
জানতাম, দিনটা আমার হলে দারুণ কিছু করব। সঞ্জয় বাঙ্গারকে বললাম, মনে হচ্ছে এ বার বড় রান করব।”
—যুবরাজ সিংহ
১২৭ বলে ১৫০— ওয়ান ডে-তে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর। শুধু তাই নয়, যে সময় তিনি ব্যাট করতে নেমেছিলেন, ভারত তখন ২৫-৩। এবং ইনিংসের ভবিষ্যৎ ঘোরতর অনিশ্চিত। ‘‘হয়তো আমার অন্যতম সেরা ইনিংস,’’ ম্যাচের বিরতিতে বলেন যুবরাজ। আর ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে এসে বলে যান, বহির্জগতে কে কী বলছে, তাতে কান দেন না। ‘‘নিজের কাছেই নিজেকে প্রমাণ করার ছিল,’’ মন্তব্য যুবরাজের।
দেড়শো করার লক্ষ্য মনে মনে স্থির করা ছিল। ‘‘ক্রিকেট কেরিয়ার লোয়ার অর্ডারে শুরু করেছিলাম। যত উপরে উঠেছি, তত বেশি বল খেলার সুযোগ পেয়েছি। দেড়শো করার একটা টার্গেট ছিল,’’ বলেছেন যুবরাজ। সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘শেষ সেঞ্চুরি করি ২০১১ বিশ্বকাপে। আজ চেষ্টা করছিলাম একটা পার্টনারশিপ গড়তে। প্রথম দিকে ওরা ভাল বল করছিল। আমরা চাইছিলাম দু’এক রান করে ছন্দটা পেতে। হাতে অনেক সময় ছিল। চেষ্টা করেছি নিচু শট খেলতে, বেশি ঝুঁকি না নিতে।’’
যুবরাজের ভক্তরা অবশ্য এ সব ক্রিকেটীয় বিশ্লেষণ শোনার আগেই উচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, ইনিংসের এক-একটা রান ক্যানসার-আক্রান্তদের প্রতি জলজ্যান্ত মোটিভেশন। কেউ বলছেন, যুবরাজ রূপকথাকেও বাস্তব করে দিলেন। কারও আবার মনে পড়ে যাচ্ছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে ওয়াংখেড়েতে তাঁর সেই স্বপ্ন-সত্যি-করা পার্টনারশিপ। এ দিন যে ভাবে তিনি ক্রিস ওকসের বিপজ্জনক প্রথম স্পেল (৫-৩-১৪-৩) সামলে ইনিংস গড়ার কাজটা সযত্নে করে গেলেন, যে ভাবে পরে দুর্দান্ত সব শট খেললেন, তাতে এই উচ্ছ্বাস একটুও বাড়াবাড়ি মনে হবে না।
যুবরাজ মনে করেন, তাঁর এই ছন্দের নেপথ্যে রয়েছে সফল রঞ্জি মরসুম। সদ্যসমাপ্ত রঞ্জি মরসুমে তিনি আটটা ইনিংসে ৬৭২ রান করেছেন। গড় ৮৪। তার মধ্যে রয়েছে রঞ্জিতে তাঁর সেরা স্কোরও— ২৬০। ‘‘গোটা ঘরোয়া মরসুমেই ভাল ব্যাট করেছি। বল ভাল মেরেছি। ফিটনেস আর ব্যাটিং নিয়ে প্রচুর খেটেছি। তিরিশ পেরনোর পর ফিটনেস নিয়ে বেশি খাটতে হয়। প্রথম ওয়ান ডে-তেও কিন্তু বল ভাল মারছিলাম। জানতাম, দিনটা আমার হলে দারুণ কিছু করব। সঞ্জয় বাঙ্গারকে বললাম, মনে হচ্ছে এ বার বড় রান করব,’’ বলছেন তিনি।
সিরিজ শুরুর আগে সীমিত ওভারের নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন ধোনি। এবং যুবরাজ বলেছিলেন, চিন্তামুক্ত ধোনির সঙ্গে ভয়ডরহীন ব্যাটিং করতে তিনি মুখিয়ে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার ঠিক সেটাই করলেন। চতুর্থ উইকেটে ৩৮.২ ওভারে ২৫৬ তুলেছেন যুবরাজ এবং ধোনি। ‘‘ধোনি দুর্দান্ত খেলেছে। টিমে সবচেয়ে অভিজ্ঞ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এখন ও। আমি সব সময় বলেছি, মাহি যখন ক্যাপ্টেন্সি করে না তখন অনেক ফ্রি ভাবে খেলে। আজ তার ফল সবাই দেখল,’’ বলেছেন যুবরাজ।
দিনের শেষে অবশ্য ধোনি নয়, শিরোনাম ছিনিয়ে নিচ্ছেন যুবরাজই। রূপকথাকে বাস্তব কত বারই বা টেক্কা দিতে পেরেছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy