Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিদেশি কোচ থাকলে রিওর টিকিট পেতাম না

সামনে অলিম্পিক্সের পদক জয়ের হাতছানি। প্রথম ভারতীয় মহিলা জিমন্যাস্ট। বাইশ বছরের সোনার মেয়ের দিকে তাঁকিয়ে সারা দেশ। অনন্ত চাপ। স্ট্র্যান্ড রোডে গঙ্গার পাশে ভাসমান হোটেলে বুধবার রিওর নীল নকশা নিয়ে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন দীপা কর্মকার। মিউজিক বাছার ব্যাপারটা আমার ইভেন্টে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওটা নিয়ে অনেক রিসার্চ করতে হয়। আমার বিভিন্ন আর্টিস্টিক মুদ্রার সঙ্গে কোন মিউজিক খাপ খাবে সেটা মাথায় রাখতে হয়। পারফেক্ট টেন যাতে তোলা যায়, সেটা মাথায় রাখতে হয়।

অলিম্পিক্সে ভারতের আশা। বুধবার কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের 
বর্ষসেরা অনুষ্ঠানে দীপা কর্মকার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

অলিম্পিক্সে ভারতের আশা। বুধবার কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের বর্ষসেরা অনুষ্ঠানে দীপা কর্মকার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

রতন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৫৯
Share: Save:

প্রশ্ন: রিও অলিম্পিক্সের জন্য মিউজিক অ্যালবাম বেছে ফেলেছেন?

দীপা: মিউজিক বাছার ব্যাপারটা আমার ইভেন্টে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওটা নিয়ে অনেক রিসার্চ করতে হয়। আমার বিভিন্ন আর্টিস্টিক মুদ্রার সঙ্গে কোন মিউজিক খাপ খাবে সেটা মাথায় রাখতে হয়। পারফেক্ট টেন যাতে তোলা যায়, সেটা মাথায় রাখতে হয়। আমার পরে এখন দেশের যে সেরা জিমন্যাস্ট সেই অরুণা রেড্ডি আমার প্রিয় বন্ধু। ওই ইউ টিউব ঘেঁটে কিছু অ্যালবাম বাছে। তার পর কোচ, আমি আর ও মিলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিই। অলিম্পিক্সের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। বাছাইয়ের কাজ চলছে।

প্র: আপনি যে ইভেন্টে অলিম্পিক্সে নামছেন সেই আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সের সঙ্গে নাচের যোগ অনেকখানি। কখনও নাচ শিখেছেন?

দীপা: নাচ শিখিনি কোনও দিন। শিখবই বা কখন। সেই সাত বছর বয়স থেকেই তো জিমন্যাস্টিক্সে। তবে মস্কোতে ট্রেনিং নেওয়ার সময় এক ঘণ্টা কোরিওগ্রাফারদের কাছে ক্লাস করতে হত। এখন সেটা লাগে না। ইউ টিউব দেখেই কাজ চলে যায়।

প্র: আয়নার সামনে অনুশীলন করে জিমন্যাস্টদের পারফেক্ট হতে হয়। কখনও সেখানে দাঁড়িয়ে নিজেকে বলেছেন, দীপা অলিম্পিক্সে পদক তুমি পাবেই?

দীপা: (হেসে) না। সেটা অনেকে করে শুনেছি। আমি বলিনি কখনও। তবে রিও-র ভিকট্রি স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি, আমার গলায় পদক ঝুলছে। জাতীয় সঙ্গীত বাজছে। চোখ বন্ধ করলে এটা মাঝেমধ্যে দেখতে পাই। শুনতে পাই। আর চোখ খুললেই ভাবি, পারব তো!

প্র: বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও দেখেছি, এ বার রিও-তেও দেখলাম ঠিক স্টার্ট নেওয়ার সময় চোখ বন্ধ আপনার। সেখানেও কি একই ব্যাপার?

দীপা: ঠিক বলেছেন। আসলে আমি ভাবি অ্যাপারেটাসগুলোর কথা। যেগুলো ব্যবহার করে সেরা হয়েছি।

প্র: এটা নিশ্চয়ই শেষ মুহূর্তের মোটিভেশন তৈরির জন্য। তাই তো?

দীপা: নিশ্চয়ই। যখন ফ্লোরে নামি, তার আগে আমার কোচও আমারই সেরা পারফরম্যান্সের কথা বলেন। যখন ব্যর্থ হই, তখনও একই কথা বলেন কোচ। এতে আমার কান্না থেমে যায়। নতুন করে জেদ তৈরি করি পদক জেতার জন্য।

প্র: ভল্ট ইভেন্টে আপনি এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা। কিন্তু আপনাদের ইভেন্টে এক্সিকিউশন বলে একটা কথা আছে। মানে বডি মুভমেন্ট, স্টাইল-এটা ঠিক না হলে তো পারফেক্ট টেন হওয়া কঠিন। সবাই বলছে সেটাতে আপনার খামতি আছে।

দীপা: রিও-তে অলিম্পিক্সের টিকিট পাওয়ার টুনার্মেন্টে নামার আগে তেইশ দিন ফোম পিট পেয়েছি। তাতেই সোনা এসেছে। এ বার পারফেক্ট হওয়ার জন্য অনেক বেশি সময় পাচ্ছি। হয়ে যাবে।

প্র: তা হলে বিদেশে ট্রেনিং নিতে যাচ্ছেন না?

দীপা: দরকার নেই। ওতে সময় নষ্ট হবে মানিয়ে নিতে। আমার নিজের কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীই যথেষ্ট। দিল্লিতে সাই আমাকে যা দিচ্ছে সেটা বিদেশের সমান। রিওতেও আমার সঙ্গে কোচ যাবেন, সেটা কনফার্ম করে নিয়েছি। আমার বিদেশি কোচের দরকার নেই।

প্র: কিন্তু বিদেশি কোচেরা নাকি অনেক বেশি আধুনিক। অনেক বিজ্ঞানসম্মত ট্রেনিং করান। অন্তত সবাই তো তাই বলে।

দীপা: আমার ক্ষেত্রে উল্টোটা। আমি যে ভল্টটা দিয়ে সেরা হলাম সেই প্রোদুনোভা ভল্টটাই তো বিদেশি কোচ এসে বন্ধ করে দিয়েছিলেন দু’বছর আগে। করতেই দিতেন না।

প্র: তাই নাকি? তিনি কে?

দীপা: জিম হল্ট। উনি তো এই ভল্টের বিরোধী ছিলেন। লিখে নিন উনি থাকলে আমি রিওর টিকিট পেতাম না।

প্র: আপনি আগরতলার মেয়ে। রিও-র টিকিটের পর আপনার নামের পাশে তো অনেক বিশেষণ। সোনার মেয়ে, বিস্ময় প্রতিভা, নতুন আইকন। কেমন লাগছে?

দীপা: দায়িত্ব বাড়িয়েছে। তবে আমি এখনও তারকা নই। কিছুই করিনি। অলিম্পিক্সের পদক পেলে ভাবব কিছু করেছি। মেডেল জিততে হবে রিওতে।

প্র: অলিম্পিক্সে আপনার সামনে পদক জয়ের বাধা কারা?

(পরপর পাঁচটা নাম গড়গড় করে বলে চলেন। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সিমন থেকে কোরিয়ার হং হোয়াং হো আছেন)

তার পর দীপা: ওদের সবাইকে চিনি। ওদের সঙ্গে বিশ্ব জিমন্যাস্টিক্সে লড়ে এলাম। মাথায় আছে পদক পেতে পাঁচটা হার্ডল পেরোতে হবে। না হলে সব শেষ।

প্র: দিনে সব মিলিয়ে আট ঘণ্টার মতো ট্রেনিং। এর বাইরে। সিনেমা দেখেন?

দীপা: দেখি। তবে কম। আমার প্রিয় নায়ক ও নায়িকা হৃতিক রোশন আর ক্যাটরিনা কাইফ। ওঁদের ছবি দেখতে ভাল লাগে।

প্রশ্ন: বিদেশে ট্রেনিং নিতে না গেলেও প্রস্তুতি টুনার্মেন্টে খেলবেন?

দীপা: তুরস্ক বা সিঙ্গাপুরে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।

প্রশ্ন: প্রথম বাঙালি হিসেবে পদক জেতার জন্য আপনার দিকে তাকিয়ে সবাই। দেশের প্রথম মহিলা জিমন্যাস্ট হিসাবে রিওতে নামবেন। এ তো অনন্ত চাপ?

দীপা: আমার কোনও চাপ নেই। ওসব নিয়ে ভাবিই না। (পাশে বসা কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীর দিকে তাকিয়ে) চাপ তো ওঁর। আমি শুধু অনুশীলন করে যাব। জানেন তো আমাদের খেলায় টেকনিকই আসল। ট্যাকটিক্স চলে না। ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই।

প্রশ্ন: সলমন খানকে অলিম্পিক্সের শুভেচ্ছা দূত করা নিয়ে তো ভারত দু’ভাগ। আপনি কোন দিকে?

দীপা: (কিছুটা জড়সড়) ও সবের মধ্যে ঢুকতেই চাই না। পদক ছাড়া আর কোথায় কী হচ্ছে তা নিয়ে ভাবার সময় নেই। রবিবার থেকেই তো দিল্লিতে প্রস্তুতি শুরু করছি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Deepa Karmakar Sports Journalist Club Rio tickets
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE