হতাশাটা কত গভীর বৃহস্পতিবার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারতীয় সমর্থকদের মুখগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। ঠিক ততটাই উচ্ছ্বসিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ডাগআউট। সেমিফাইনাল জয়ের আনন্দে তো ওরা মাঠেই উৎসব শুরু করে দিল। দুর্দান্ত ভাবে রানটাও ওরা তাড়া করেছে। এটা ঠিক, ভাগ্যের সঙ্গ কিছুটা পেয়েছে তবু এই জয়টা ওদের প্রাপ্য ছিল।
গত দু’সপ্তাহ ধরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুরন্ত ক্রিকেট খেলছে। ওদের বিস্ফোরক ব্যাটিং, সঙ্গে বৈচিত্রপূর্ণ বোলিং আক্রমণ গেমপ্ল্যানগুলো খুব ভাল করে কাজে লাগিয়েছে। ডারেন স্যামির নেতৃত্বেরও প্রশংসা করতে হবে। বিশ্বকাপে নামার আগে বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে ঝামেলার পরও স্যামি দলটাকে সংঘবদ্ধ করতে পেরেছে।
ভারতের দিক থেকে এটা বলা যায়, ধোনিরা কিন্তু লড়াই করার মতো স্কোর করেছিল। তবে খুব সূক্ষ্মভাবে দেখলে অনেকে এটা বলতে পারেন, রাহানে খুব ভাল ব্যাটিং করলেও হয়তো আরও একটু আগে রানের গতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে পারত। তাতে হয়তো ১০-১৫ রান বেশি উঠত ভারতের।
এ সবের পাশাপাশি আরও এক বার দুর্ধর্ষ পারফরম্যান্স দেখা গেল বিরাটের। ইনিংসের গোড়ার দিকে ওকে একটু নড়বড়ে মনে হচ্ছিল, যে কারণে কয়েক বার আউটের সুযোগও দিয়ে ফেলেছিল হয়তো বিরাট। যেটা ও সচরাচর দেয় না। তবে এর পর কিন্তু বিরাট ম্যাচে জমিয়ে বসেছে, ঝড় তোলার মতো অবস্থা তৈরি করেছে আর দারুণ স্কিল আর শান্ত মেজাজে খেলে দেখিয়ে দিয়েছে। গোটা ইনিংসে মাত্র একটা ছক্কা হাঁকিয়েও দুশোর কাছাকাছি স্ট্রাইক রেট রাখা দুরন্ত ব্যাপার। এতেই বোঝা যায় ওর স্ট্রোক প্লে কী অসাধারণ।
ফিল্ডিং করতে নেমেও কিন্তু ভারত শুরুটা দারুণ করেছে। গেইল অবশ্য একটা লো ফুল টস ফস্কেছিল। অন্য দিন হলে যেটা ছক্কা হত। স্যামুয়েলসকেও ছন্দে দেখা যায়নি। হয়তো এই সময় ভারত কিছুটা ফোকাস হারিয়ে ফেলেছিল আর কিছুটা আত্মতুষ্টও হয়ে পড়েছিল। ওরা হয়তো আশা করেনি জনসন চার্লস এত ভাল খেলবে। চার্লসই দলের উঠে দাঁড়ানোর কাজটা শুরু করে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ভাগ্য ভাল ফ্লেচারের চোটের জন্য লেন্ডল সিমন্সকে দলে পেয়ে গিয়েছিল ওরা। আমার মনে হয় ও আরও ভাল অল রাউন্ড প্লেয়ার। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের প্লেয়ার হওয়ায় ওয়াংখেড়ের পরিবেশ-পরিস্থিতিও ওর জানা ছিল। তার উপর ওকে ভারতীয় বোলাররা প্রচুর ফুল আর ওয়াইড বলও দিয়েছে। যার বড় মূল্য চোকাতে হল ভারতকে। ওই সময়ে দুটো নো-বলের দামও ভারতকে দিতে হয়েছে।
গোটা টুর্নামেন্টের দিকে তাকালে আমার মনে হয় ভারতকে ভুগতে হয়েছে বিরাটের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল থাকার জন্য। বিরাট দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান, দুরন্ত ব্যাটিংও করেছে কিন্তু বাকি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ওকে সাপোর্ট করতে পারেনি। ওদের বোলিংয়েও সমস্যা ছিল। বিশেষ করে পাণ্ড্য। ওর ইকনমি রেট আমার মতে খুব বেশি।
ফাইনালে আমার আশা ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতবে। ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ তুলনায় একটু শক্তিশালী হলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ধ্বংসাত্মক ব্যাটিং কিন্তু খুব বিপজ্জনক। তার উপর গোটা টুর্নামেন্টে ভাল খেলা আর ভারতে ভারতকে হারানোর মতো কঠিন কাজ করে দেখানোয় ওদের আত্মবিশ্বাস নিশ্চয়ই তুঙ্গে থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy