মগজাস্ত্র: আন্তোনিও কন্তের ফর্মেশন এখন বিশ্বফুটবলের ম্যাজিক ফর্মুলা। —ফাইল চিত্র।
তিন চার তিন।
বিশ্বফুটবলের কোচেদের জন্য এটাই এখন ম্যাজিক ফর্মুলা।
আন্তোনিও কন্তের নোটপ্যাড থেকে বেরিয়ে এই ফর্মেশন এখন হয়ে উঠেছে বিশ্ব ফুটবলের আলোচ্য বিষয়। কন্তে ক্লাবে আসার সময় চেলসি ছিল চাপের মধ্যে থাকা এক দল। যাঁরা জিততে ভুলে গিয়েছিল। কন্তের সামান্য একটা পরিবর্তন। ফর্মেশনকে ৩-৪-৩-এ পাল্টে দেওয়া। আর তাতেই ফের ইউরোপে নীল-গর্জন। সেই সেরা সময়ের চেলসি। যাঁরা রক্ষণ জমাট রাখবে। আবার প্রচুর গোল করে দর্শকদের আনন্দও উপহার দেবে।
এই ছকের বিশেষত্ব কী?
আই লিগে ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে সফল আর্মান্দো কোলাসো বলছেন, ‘‘ইউরো কাপ থেকেই এই ফর্মেশন কাজে লাগাচ্ছেন কন্তে। এটা খুব রক্ষণাত্মক ফর্মেশন। দেখলে মনে হয় তিনজন ডিফেন্ডার। দু’জন উইংব্যাক যারা থাকে তারাও পিছনে নামতে পারে। আসলে পাঁচজন থাকছে রক্ষণে।’’
মোহনবাগান কোচ সঞ্জয় সেন অবশ্য মনে করছেন শুধু রক্ষণের ক্ষেত্রে নয়। আক্রমণ করতে গেলেও এটা সেরা ফর্মেশন। ‘‘৪-৩-৩ হোক বা ৪-৪-২। প্রতিটাতেই আমরা দেখি আক্রমণাত্মক ফুটবলাররা পিছিয়ে আসছে। কিন্তু ৩-৪-৩ ফর্মেশনে আক্রমণাত্মক ফুটবলারদের নেমে আসতে হয় না। কারণ উইংব্যাকরা ক্রমাগত উঠছে নামছে। ডিফেন্সিভ কভার দিচ্ছে।’’
কন্তের ফর্মেশন বিখ্যাত হয়েছিল য়োহান ক্রুয়েফের জমানা থেকেই। ক্রুয়েফ বার্সেলোনার কোচ থাকাকালীন ডায়মন্ড সিস্টেমে খেলার চেষ্টা করতেন। সাম্প্রতিক কালে পেপ গুয়ার্দিওলা তাঁর বায়ার্ন দলে ব্যবহার করেছিলেন এই ফর্মেশন। লিভারপুলে থাকাকালীন ব্রেন্ডন রজার্সও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। ইতালীয় লিগে অর্ধেক ক্লাবই তিনজন সেন্টার ব্যাকে খেলতে ভালবাসে। কিন্তু ইপিএল মানেই সেই ৪-৩-৩ অথবা ৪-২-৩-১-এ খেলা। কন্তেই আচমকা তাঁর আধুনিকতায় পাল্টে দিয়েছেন ছবি।
সারা বিশ্ব যখন কাপাচ্ছে কন্তের এই ছক, তখন ভারতীয় ফুটবলে সেই আধুনিকতার ছিটেফোটাও দেখা যাচ্ছে না। কারণটা কী? সঞ্জয় সেন বললেন, ‘‘এ রকম ফর্মেশন দু’তিন দিনে করা যায় নাকি? আমরা আই লিগের আগে কত দিন আর সময় পাই অনুশীলন করার। অত কম সময়ে এ রকম ফর্মেশন কাজে লাগানো যায় না। আমার অন্তত সাহস নেই।’’ বেঙ্গালুরুর উদাহরণ টেনে সঞ্জয় আরও বলছেন, ‘‘বেঙ্গালুরু তো চেষ্টা করেছিল। দেখলেন তো কী হল।’’
মোহনবাগানের সবুজ তোঁতা জোসে ব্যারেটো প্রশ্ন তুললেন ফুটবলারদের মানসিকতা নিয়ে। ‘‘একটা খুব সহজ জিনিস হচ্ছে ফুটবলাররা যদি না মানাতে চায় তা হলে কোনও ফর্মেশনই কাজে লাগবে না। ভারতীয় ফুটবলে এটাই সমস্যা। মানিয়ে নেওয়ার ফুটবলার খুব কম আছে,’’ বলছেন ব্যারেটো।
৩-৪-৩-এ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দুই উইংব্যাক। তাঁরা যেমন ডিফেন্সে লোক বাড়াচ্ছে, তেমনই ফরোয়ার্ডদের জন্য উইংয়ে খেলাও ছড়াচ্ছে। চেলসিতে যেমন ভিক্টর মোজেস ও মার্কোস আলোন্সো। ভারতীয় ফুটবলারদের সেই দম আছে উইংব্যাকে খেলার? ব্যারেটো বলছেন, ‘‘অনেক গতি লাগে। নব্বই মিনিট টানা নড়াচড়া করতে হবে। ভিক্টর মোজেস বা মার্কোস আলোন্সো যেমন চেলসিতে করছে।’’ আর্মান্দো বলছেন, ‘‘এ রকম ফর্মেশনে পজিশনটাই আসল। ফুটবলারদের পজিশনের ওপর সব নির্ভর করে।’’
কন্তে ফর্মেশন পাল্টানোর আগে চেলসিকেও দুর্বল দেখাচ্ছিল। আর্সেনাল ও লিভারপুলের কাছে হেরে আশঙ্কা করা হয়েছিল কন্তের আয়ু খুব বেশি দিন নেই চেলসি কোচ হিসেবে। কিন্তু এই একটা ফর্মেশনই পাল্টে দিয়েছিল ভাগ্য। নিজের য়ুভেন্তাসের দিন থেকে ৩-৪-৩-এর উপর ভরসা রেখে এসেছেন কন্তে। ইউরোতেও ইতালির দায়িত্বে থাকা কন্তে ব্যবহার করেছিলেন এই ফর্মেশন।
পরিসংখ্যানও বলছে ৪-৩-৩ থেকে বেরিয়ে এসে চেলসির ছবিও পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে। মরসুম শুরুতে যাঁরা গোলের পর গোল খাচ্ছিল সেই চেলসি এই মুহূর্তে প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে মজবুত ডিফেন্স। সিজার আজপিলিকুয়েটা, দাভিদ লুইজ ও গ্যারি কাহিলের ত্রিফলা বিপক্ষ ফরোয়ার্ডদের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে। চেলসিকে শীর্ষে থাকতে সাহায্য করেছে। প্রিমিয়ার লিগে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে কম গোল খেয়েছে চেলসি। আবার টানা তেরো ম্যাচ জিতে থেকে নতুন রেকর্ডও তৈরি করেছে চেলসি।
তবে ইউরোপীয় ফুটবল যখন এমন বিপ্লব দেখছে, ভারতীয় ফুটবলে সেই আধুনিকতার খোঁজ এখনও নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy