আরসিজিসিতে দুই গল্ফার নাইট রবিন উথাপ্পা ও ব্র্যাড হগ। মঙ্গলবার। ছবি: উৎপল সরকার।
আর পাঁচটা দিনের সঙ্গে মঙ্গলবারের কেকেআর পৃথিবীর মিল খুঁজে বোধহয় লাভ নেই। কারণ, মিল পাওয়া যাবে না। টিম একটা গোটা দিন ক্রিকেটের সংশ্রব থেকে দূরে থাকছে, আইপিএলে সেটা প্রায়ই হয়। নেট সেশন রোজ করতেই হবে, ব্যাট-বল হাতে নিজের ক্ষমতা নিত্য ঝালিয়ে নিতেই হবে, এমন বাধ্যবাধকতা থাকে না আইপিএলে। কিন্তু তাই বলে ক্রিকেট ছেড়ে একটা ক্রিকেট টিমের অন্য একটা খেলায় গোটা দিনের জন্য ঢুকে পড়া— এমনটাও খুব একটা দেখা যায় না।
কেকেআর মঙ্গলবার গোটা দিনটা ক্রিকেট নয়, গল্ফের দুনিয়ায় কাটাল। রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাবে। একটা আলাদা নামকরণই হল তার— নাইট গল্ফ। প্যাট কামিন্সকে এত দিন জানা ছিল, ঘণ্টায় দেড়শো কিলোমিটারে পেস বোলিংটা করেন। অস্ট্রেলীয় পেসার লাইনে রাখলে তাঁকে খেলা মুশকিল হয়। প্যাট কামিন্স আজ বুঝিয়ে দিলেন, তিনি গল্ফটাও বেশ ভাল খেলেন। রায়ান টেন দুশখাতের টিমকে হারিয়ে তাঁর টিমই চ্যাম্পিয়ন!
ঘটনা হল, গল্ফ কোর্সে কেকেআর এ দিন ডুবে থাকল ঠিক, কিন্তু ক্রিকেট থেকে একেবারে দূরে থাকতে পারল না। ইউসুফ পাঠানকে অটোগ্রাফ দিতে গিয়ে শুনতে হল, ২২ বলে ৭২ জাতীয় ইনিংস কবে আবার তাঁর ব্যাট থেকে বেরোবে? উত্তরে ইউসুফ হাসতে হাসতে বলে দিলেন, ‘‘তার জন্য আমাকে তো বাইশটা বল খেলতে হবে!’’ সুনীল নারিন না থেকেও অদৃশ্য ভাবে টিমের মননে থেকে গেলেন। টিমের কারও কারও কাছে এখনও সেটা একটা ধাক্কা। যার কম্পন নাকি এমন সাফল্যের সময়েও মৃদু অনুভূত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি করে টিমের অন্দরমহলে ঘোরাফেরা করল বোধহয় প্লে-অফে ওঠার অঙ্ক।
উমেশের পালা।
নাইট শিবিরের অলিখিত রীতি মেনে সোমবার রাতে কেক কাটলেন সানরাইজার্স বধের নায়ক। ছবি: টুইটার ।
সোজাসুজি বললে, ঘরের মাঠেই প্লে-অফ নিশ্চিত করে ফেলতে চাইছে কেকেআর। নিশ্চিত করে ফেলতে চাইছে, পরের দু’টো ম্যাচ জিতে। ‘‘আমরা ইডেনে ফাইনাল খেলার জন্য তৈরি হচ্ছি। কোনও রকম ভুল করা চলবে না। ইডেনে কেকেআর ফাইনাল খেলতে নামলে... নাহ্, ভাবা যাচ্ছে না,’’ বিকেলে বলছিলেন ইউসুফ। এখানেই না থেমে আরও বললেন, ‘‘সবচেয়ে ভাল হয়, পরের দু’টো ম্যাচ জিতে প্লে-অফ কলকাতা থেকেই নিশ্চিত করে ফেললে।’
যে আশাবাদের পিছনে যথেষ্ট যুক্তিও পেশ করা হচ্ছে। তিনটে কারণ তুলে আনা হচ্ছে।
এক) ইডেনের পিচ: বলা হচ্ছে, সানরাইজার্স ম্যাচে যে বাইশ গজ দেওয়া হয়েছিল কেকেআরকে, তা টিমের পক্ষে আদর্শ। কারণ কেকেআর স্পিন-নির্ভর টিম। নাইট অফস্পিনার জোহান বোথা বলছিলেন, ‘‘তার চেয়েও বড় হচ্ছে, আমাদের টিমে মণীশ, রবিনের মতো কিছু ব্যাটসম্যান আছে যারা স্পিনটা খুব ভাল খেলতে পারে।’’
দুই) তুখোড় ভারতীয় বোলিং: উমেশ যাদব-পীযূষ চাওলারা যেটা করছেন, সেটা আগামী দু’টো ম্যাচ চললে নাকি জেতা মোটেও কঠিন হবে না। প্লে-অফও তখন নিশ্চিত হয়ে যাবে। কামিন্স অস্ফুটে একবার বলেও ফেললেন, ‘‘উমেশ কোথায় মারাত্মক জানেন? ও খুব সহজে সুইং করাতে পারে। ওয়ার্নারকে যে বলটা করল, অবিশ্বাস্য!’’ আর কেকেআরের ভারতীয় বোলারদের এমন দুর্দান্ত বোলিংয়ের পিছনে তুলে আনা হচ্ছে বোলিং গুরু ওয়াসিম আক্রমের নাম। আক্রম নাকি বোলার ধরে ধরে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, কোন পিচে কী ভাবে রেখে যাওয়া উচিত। দেশজ বোলাররা তো বটেই, বিদেশিরাও তাতে সমান উপৃকত।
তিন) চুয়াল্লিশের বিস্ময়: হগ, ব্র্যাড হগ। যাঁকে কেকেআরের নতুন ‘সারপ্রাইজ প্যাকেজ’ বলতে ঘোরতর আপত্তি তাঁর টিমমেটদের। বোথা বিগ ব্যাশে খেলেছেন হগের সঙ্গে। বলছিলেন, ‘‘আপনারা বলছেন সারপ্রাইজ প্যাকেজ। আমি দেখেছি বিগ ব্যাশে ও কী ভাবে বলে-বলে ব্যাটসম্যানদের আউট করত।’’ বলা হচ্ছে, নারিনের অভাব কেকেআর এখনও টের পায়। ক্যারিবিয়ান মারণাস্ত্র বল করতে এলেই যে বিপক্ষ মুহূর্তে ২২-৩ হয়ে যেত, সেই ব্যাপারটা এখনও নেই। কিন্তু যে বিষ নারিন ছড়িয়ে দিতেন প্রতিপক্ষের শিরা-উপশিরায়, প্রায় একই বিষের বন্দোবস্ত হগও করছেন।
ওয়াসিম-টোটকা, সারপ্রাইজ প্যাকেজ, পছন্দের পিচ— সবই এক রকম প্রস্তুত। এখন ঘরের মাঠ থেকেই প্লে-অফের নিশ্চিত হওয়া শুরু হবে কি না, জানতে আর আটচল্লিশ ঘণ্টা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy