Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

র‌্যান্টি ডিনামাইটে ধ্বংস লাজং

প্রথম গোলটা করার পর কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে কোনাকুনি দৌড়লেন। একটা আঙ্গুল আকাশে তোলা। যেন দৃপ্ত ঘোষণা— ‘আমি ফুরিয়ে যাইনি!’

তানিয়া রায়
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১০
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল ৪ : শিলং লাজং


(র‌্যান্টি-হ্যাটট্রিক, বিকাশ)

প্রথম গোলটা করার পর কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে কোনাকুনি দৌড়লেন। একটা আঙ্গুল আকাশে তোলা। যেন দৃপ্ত ঘোষণা— ‘আমি ফুরিয়ে যাইনি!’

কিছুক্ষণ পরে পঁচিশ গজের গোলা শটে পরের গোল। তার পর ছুটে আসা সতীর্থদের দিকে ফিরে মুখ, চাপড়ের পর চাপড় নিজের বুকে। যেন নীরবে বরাভয় নিজের টিমকে— ‘আমি তো আছি, ভয় কী’!

আর গোলকিপারকেও ড্রিবল করে হ্যাটট্রিকের পর তাঁর মুখে তৃপ্তির হাসি! চলতি আই লিগে প্রথম হ্যাটট্রিক। তৃপ্ত তো হবেনই লাল-হলুদের নাইজিরিয়ান গোলমেশিন।

প্রথমার্ধেই র‌্যান্টি মার্টিন্স নামক ডিনামাইটে টুকরো টুকরো হয়ে গেল ‘পাহাড়’। মাটিতে মিশে গেল শিলং লাজংয়ের যাবতীয় প্রতিরোধ।

তিরিশেও কী তেজ! কী জেদ! এক যুগ আগে এসেছিলেন এ দেশের ক্লাবে খেলতে। পাঁচ বার হয়েছেন দেশের এক নম্বর টুনার্মেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। তাতেও খিদে কমেনি একফোঁটা। হোসে ব্যারেটো ছাড়া এই অসাধারণ ধারাবাহিকতা এ দেশে খেলতে আসা কোনও বিদেশি ফুটবলারের আছে বলে জানা নেই।

বারাসত স্টেডিয়ামে র‌্যান্টিকে আটকানোর চেষ্টা কম করেনি পাহাড়ি টিম। আইবরের মতো অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার, বড় চেহারার বিদেশি ইয়ামাগাতাকে দিয়ে জোনাল মার্কিং করেও ঠেকানো যায়নি র‌্যান্টি-বিস্ফোরণ। যার দাপটে পাহাড় টপকে আই লিগ টেবলে এই প্রথম শীর্ষে বিশ্বজিৎ ভট্টচার্যের ইস্টবেঙ্গল।

শুধু হাজার হাজার লাল-হলুদ সমর্থকই নয়, ম্যাচ শেষে দেখা গেল আপাত আবেগহীন ইস্টবেঙ্গল কোচ বিশ্বজিৎও র‌্যান্টির পারফরম্যান্সে এতটাই মুগ্ধ যে, তুলনায় ব‌্যারেটো নামটাও মুখে আনতে নারাজ তিনি। ‘‘আরে বারো বছর ধারাবাহিক ভাবে টানা দুর্দান্ত খেলছে, গোলের পর গোল করছে, এ দেশে বিদেশি ফুটবলারের মধ্যে র‌্যান্টির বাইরে আমি তো এ আর কোনও নাম কথা মনে করতে পারছি না।’’

আর র‌্যান্টি? এমন পারফরম্যান্সের পরেও কোনও উচ্ছ্বাস দেখা গেল না তাঁর মধ্যে। কেবল ম্যাচ-বলটা স্মারক হিসেবে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া ছাড়া। বলাই যায় কামব্যাক স্মারক! বললেন, ‘‘আমার লক্ষ্যটা খুব পরিষ্কার। আর সেটা আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। আরও এক বার সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়া নিয়ে ভাবছি না।’’ বাগানের কর্নেলকে পিছনে ফেলার দিনেও নির্লিপ্ত। হয়তো কিছুটা অভিমানে।

অভিমান হওয়াই স্বাভাবিক। কলকাতা লিগের পর র‌্যান্টির পারফরম্যান্সে অসন্তুষ্ট লাল-হলুদ কর্তারা একটা সময় তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেছিলেন। শুধুমাত্র জেদ আর ভাল খেলার তাগিদ থাকলে যে সব সমালোচনার জবাব মাঠেই দেওয়া যায়, সেটা দেখিয়ে দিলেন র‌্যান্টি। যা রিজার্ভ বেঞ্চে বসে দেখলেন ডু ডং। কলকাতা লিগে লাল-হলুদের হার্টথ্রবকে এ দিন প্রথম একাদশেই রাখেননি কোচ। সান্ত্বনা পুরস্কার হিসাবে ডংকে শেষ ১৪ মিনিটে নামালেন বটে বিশ্বজিৎ, কিন্তু ততক্ষণে তিন পয়েন্ট পকেটে পুরে নিয়েছে ইস্টবেঙ্গল।

মহাতারকা বিদেশিকে না নামানোর যে সাহস বঙ্গসন্তান কোচ দেখিয়েছিলেন, সেটার মান রাখলেন স্বদেশি সঞ্জু, রফিকরা। অফ ফর্মের ডংয়ের চেয়ে এ দিন অনেক বেশি কার্যকরী হয়ে ওঠেন ওঁরা। ডান দিকে সঞ্জু আর রাহুল ভেকের ঝাপটায় বিরতির আগেই দিশাহারা লাগছিল লাজংকে। আর পাহাড়ি রক্ষণ চিরে রফিকের কোনাকুনি দৌড় ফালাফালা করে দিচ্ছিল আইবরদের। ফলে, র‌্যান্টি অনেকখানি জায়গা পেয়ে যাচ্ছিলেন। যেটা তিনি সুদে-আসলে উসুল করে নেন।

সব ভালর মাঝে অবশ্য বিশ্বজিৎকে চিন্তায় রাখবে অর্ণব-বেলোদের এ দিনের পারফরম্যান্স। একেবারে শুরুতে লাজং আক্রমণের সামনে নড়বড়ে লাগছিল ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে। বিপিন সিংহ, উইলিয়ামসরা গোলের সুযোগও পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু র‌্যান্টি-ধামাকা শুরু হতেই সব শেষ। কোথায় পেন ওরজি? আর কোথায় তাঁর দলের দৌড়। দ্বিতীয়ার্ধে বিকাশ জাইরুর গোলটা ছাড়াও ইস্টবেঙ্গল আরও সুযোগ পেয়েছিল।

তবে সেই সহজ সুযোগগুলো নষ্ট হওয়ার চেয়েও অবাকের— হ্যাটট্রিক করেও ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেলেন না র‌্যান্টি। পেলেন জাইরু। আর ফেডারেশন ক্লাবের জরিমানা করতে পারে জেনেও ঘরের মাঠে দুর্দান্ত জয়ের উচ্ছ্বাসে বাজি ফাটালেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা।

কিন্তু এ সব নিয়ে মাথা ঘামানোর যে কেউই নেই আজ। আজ যে র‌্যান্টি-জোয়ারে ভাসার দিন!

ইস্টবেঙ্গল: লুইস ব্যারেটো, রাহুল, অর্ণব, বেলো, সৌমিক, সঞ্জু (ডং), মেহতাব (লোবো), মেন্ডি (আব্রাঞ্চেস), বিকাশ, রফিক, র‌্যান্টি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE