Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
মোরিনহো ০ গুয়ার্দিওলা ১

তিকিতাকার ব্লু প্রিন্টেই ম্যান সিটির কিস্তিমাত

গুয়ার্দিওলা বনাম মোরিনহো মানে দুই ভিন্ন ঘরানার লড়াই। গুয়ার্দিওলা বিশ্বাস করেন পাসিং ফুটবলে। যাঁর নীতি হচ্ছে, তুমি বলের কাছে যাবে না, বল তোমার কাছে যাবে। মোরিনহো আবার অনেক রক্ষণাত্মক ধাঁচের কোচ।

যুদ্ধ শেষে সন্ধি। শনিবার, ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। ছবি: এএফপি।

যুদ্ধ শেষে সন্ধি। শনিবার, ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। ছবি: এএফপি।

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫৫
Share: Save:

ম্যাঞ্চেস্টার সিটি ২ : ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ১
(দে’ব্রায়ান, ইহিয়ানাচো) (ইব্রাহিমোভিচ)

গুয়ার্দিওলা বনাম মোরিনহো মানে দুই ভিন্ন ঘরানার লড়াই।

গুয়ার্দিওলা বিশ্বাস করেন পাসিং ফুটবলে। যাঁর নীতি হচ্ছে, তুমি বলের কাছে যাবে না, বল তোমার কাছে যাবে। মোরিনহো আবার অনেক রক্ষণাত্মক ধাঁচের কোচ। যাঁর ফর্মেশনে ফুটবলারদের নির্দিষ্ট কোনও জায়গা থাকে না। তোমায় সারাক্ষণ ইঞ্জিনের মতো উপরনীচ করে যেতে হবে।

শনিবারের ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বিতে ফুটবলারদের থেকেও আমি বেশি উৎসুক ছিলাম দুই কোচের মগজাস্ত্রের লড়াই দেখতে। এল ক্লাসিকোতেও এই দুই কোচ মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। গুয়ার্দিওলার একজন মেসি ছিল। আর মোরিনহোর একজন রোনাল্ডো। লা লিগার থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ অনেক আলাদা। এখানে সূক্ষ্ম সমস্ত স্কিলের থেকেও বেশি প্রয়োজন হয় নিঁখুত ট্যাকলের। ভেবেছিলাম ইপিএলে অভিজ্ঞতার জোরে হয়তো মোরিনহোই ফেভারিট। কিন্তু কী ভুলটাই না ভেবেছিলাম।

গুয়ার্দিওলা দেখিয়ে দিলেন একটা দল যখন কোনও নির্দিষ্ট গেমপ্ল্যান নিয়ে খেলে, বিশ্বের যে কোনও লিগে যে কোনও দল নিয়ে জেতা যায়। শুরুর থেকে ম্যান ইউনাইটেডকে বলটাই ধরতে দিল না সিটি। পাস-পাস-পাস। উফ, বলটাও মনে হয় হাফিয়ে উঠেছিল। স্কোয়ার পাস, ডায়গোনাল পাস, শর্ট পাস। প্রতিটা পজিশনেই একটা করে প্লেয়ার পেয়ে যাচ্ছিল সিটি। পজেশন রেখে খেলার মজাটাই হচ্ছে ম্যাচটার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে। বিপক্ষ যত কম বল পাবে তত কম মুভ তৈরি করবে। হতাশ হয়ে পড়বে। আর তাতেই খারাপ সিদ্ধান্ত নিতে আরম্ভ করবে। ইউনাইটেডও তাই করছিল। বল পেয়েই তাড়াহুড়ো করছিল। আর তাতেই মিসপাস। রুনিদের মধ্যে কোনও বোঝাপড়া ছিল না। দেখে মনে হচ্ছিল অচেনা দশ জনকে জোর করে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রথমার্ধের শুরুর থেকেই মাঝমাঠের দখল নেয় সিটি। অফ দ্য বল মুভমেন্ট ছিল নিঁখুত। একজন পাসারের কাছে অনেক আউটলেট খোলা থাকছিল। উইঙ্গাররা মার্ক হয়ে গেলেও মাঝমাঠ ফাঁকা থাকছিল। প্রথম চুয়াল্লিশ মিনিট তো রুনিদের পুরো দাঁড় করিয়ে রেখেছিল সিটি। গ্যালারিতে বসে থাকা সমর্থক আর ইউনাইটেড দলের মধ্যে তখন কোনও পার্থক্যই ছিল না। দু’জনেই স্রেফ সিটিকে দেখছিল। দ্বিতীয়ার্ধে তাও যা আক্রমণ তৈরি করে ইউনাইটেড, ফাইনাল পাসটা খারাপ হওয়ায় সব শেষ হয়ে যায়।

ম্যান সিটির এই জয়ের পিছনে আসল কারিগর কিন্তু কেভিন দে’ব্রায়ান। সের্জিও আগেরো না থাকায় এমনিতেই খুব বেশি ডিরেক্ট ফুটবল খেলতে পারেনি সিটি। কিন্তু তাতেও আক্রমণের কমতি হয়নি। সৌজন্যে দে’ব্রায়ান। কী অসাধারণ বল কন্ট্রোল। গতি যেমন আছে তেমন ভাল মুভমেন্টও। বলটা পায়ে আঠার মতো লেগে থাকে। গোলটার সময় দে’ব্রায়ানের ফার্স্ট টাচটা নিঁখুত ছিল। ডালে ব্লিন্ডের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেল একটা টাচেই। বডি ওপেন করে ঠান্ডা মাথায় ফিনিশটাও দারুণ ছিল। দ্বিতীয় গোলও তো ওর শটের রিবাউন্ডেই হল।

ইব্রাহিমোভিচের গোলটা ব্র্যাভোর ভুলেই পাওয়া। ওটা ছেড়ে মোরিনহোর দলের সম্বন্ধে বলার কিছু পাচ্ছি না। এত ছন্নছাড়া ফুটবল ইউনাইটেডকে খুব কম খেলতে দেখেছি। রুনি-ভ্যালেন্সিয়ারা উইংয়ের ধারে কাছেও পৌঁছতেই পারল না। আর পোগবা তো পুরো অদৃশ্য। ইব্রাহিমোভিচ বিশ্বমানের সেন্টার ফরোয়ার্ড হলেও সুয়ারেজ নয়। নিজের থেকে কিছু তৈরি করে না। বল পাস পেলে তবেই মুভমেন্ট করতে পারবে।

বার্সেলেনার ব্লু প্রিন্টই সিটিতে আমদানি করেছেন গুয়ার্দিওলা। দাভিদ সিলভার মতো বল প্লেয়ারকে অনেক বেশি ফ্রি মুভ করার স্বাধীনতা দিচ্ছেন। ঠিক যেমনটা জাভিকে নিয়ে বার্সায় করতেন। ছোট ছোট পাসে বিপক্ষকে নাজেহাল করে দিচ্ছেন। এটাই তো ট্রেডমার্ক গুয়ার্দিওলা। দিনের শেষে তাই বলাই যেতে পারে, হাতে সরঞ্জাম যাই থাক না কেন, বিশ্বের যে কোনও দলকে দিয়ে তিকিতাকাটা ঠিক খেলাতে জানেন গুয়ার্দিওলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

manchesta city manchestar united
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE