সুনীল ছেত্রীদের ড্রেসিংরুমের দোতলায় সনি নর্ডি়-প্রীতম কোটালদের প্র্যাক্টিসের দিকে তাক করে রাখা ক্যামেরাটা দেখেই হইচই বাঁধিয়ে দিলেন মোহনবাগান সহ-সচিব।
মুহূর্তে ক্যামেরাটা নিয়ে সরে গেলেন বেঙ্গালুরু এফসির ভিডিও অ্যানালিস্ট অলউইন। পিছন পিছন তাঁর দলের কোচ-ফুটবলাররাও।
সামান্য দৌড়োদৌড়ি করানোর পর ফুটবলারদের দূর থেকে টানা শট মারার অনুশীলন করাচ্ছিলেন সঞ্জয় সেন। প্রতিপক্ষ শিবিরের বসানো ক্যামেরাটা সরে পড়তেই পুরো টিম নিয়ে উইং প্লে, সিচুয়েশন মুভ শুরু করিয়ে দিলেন বাগান কোচ।
বিকেল পাঁচটায় বেঙ্গালুরুর স্টেডিয়াম অনুশীলনের জন্য চেয়েছিল বাগান। অ্যাশলে ওয়েস্টউডের দলের থেকে জানানো হয় জনসন-সুনীলদের অনুশীলন চলবে ওই সময়। মাঠ দেওয়া সম্ভব নয়। বাস্তবে হল অবশ্য অন্য কিছু। ফলে দুপুর সাড়ে তিনটেয় মাঠে নামল বাগান। আর ঘণ্টাখানেক ড্রেসিংরুমের ব্যালকনিতে বসে বিপক্ষের অনুশীলন দেখে মূল স্টেডিয়ামে নিজেদের প্র্যাক্টিসে চলে গেল বেঙ্গালুরু দল!
কান্তিরাভা স্টেডিয়ামমুখী টিম বাসে ওঠার সময় অপেক্ষমান কলকাতার মিডিয়াকে বেঙ্গালুরুর ব্রিটিশ কোচ বলে গেলেন, ‘আমাদের কিন্তু ক্লোজড ডোর অনুশীলন’। বেঙ্গালুরু অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী এ দিনই বলছিলেন, ‘‘জেতার জন্য কী করতে হয় আমাদের কোচ জানেন। আমাদের হারানোর কিছু নেই, আর জিতলেই ট্রফি। তাই যে কোনও মূল্যে জিততে চাই রবিবার।’’
চূড়ান্ত পেশাদাররা বিপক্ষকে পিষে মারার জন্য হাতে থাকা সব অস্ত্রই ব্যবহার করে থাকেন। সেটাই হাড়েহাড়ে মোহনবাগানকে বুঝিয়ে দিচ্ছে আই লিগে ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা টুর্নামেন্টের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি দল বেঙ্গালুরু। নিজেরা অনুশীলন না করলেও বিপক্ষের জন্য মাঠ আটকে রাখা, গোপন ক্যামেরায় বিপক্ষের অনুশীলন তুলে রাখা। আরও আছে। আজ শনিবার অনুশীলনের সময় বাছাই। রবিবার রাত সাতটায় ম্যাচ। আগের দিন সন্ধেয় বিপক্ষকে মাঠ দেওয়া তো দূরের কথা, শনিবার অনুশীলনের সময় দেওয়া হয় বেলা এগারোটায় তীব্র গরমের মধ্যে। বাগান-কর্তারা ফেডারেশনকে অনুনয়-বিনয় করে সেটাকে আধঘণ্টা এগিয়ে সাড়ে দশটা করেছেন। কিন্তু আধ ঘণ্টা আগু-পিছু তীব্র গরমের আর কী এমন পার্থক্য! সোজা কথা— ম্যাচের আগেই সনিদের গরমে পেড়ে ফেলার চেষ্টা বেঙ্গালুরুর। অথচ সেখানে সুনীল রুনিরা অনুশীলন করবেন শনিবার সূর্য ডোবার পর বিকেলে। মনোরম ঠান্ডা আবহাওয়ায়।
তাতেও অবশ্য দমছেন না বাগান কোচ। ম্যাচ শুরুর আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে মাঠের বাইরের যুদ্ধকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না সঞ্জয়। এ দিন বিকেলে এখানে বৃষ্টির মধ্যেই তাঁর মজাদার মন্তব্য, ‘‘ছোটবেলায় ঠাকুমা বলতেন, ‘পড়েছি যবনের হাতে খানা খেতে হবে সাথে’। সেটাই মনে পড়ছে এখন। কী আর করা যাবে! বেশি বললে তো আবার জরিমানা।’’
রবিবার রাতে তাঁদের দু’বার আই লিগ খেলে দু’বারই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাব্য ঐতিহাসিক দৃশ্যের সাক্ষী থাকার জন্য মেরি কম, পঙ্কজ আডবাণীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছে বেঙ্গালুরু টিম ম্যানেজমেন্ট। অধিনায়ক সুনীলও স্বীকার করে নিলেন, ‘‘ঘরের মাঠে খেলার সুবিধেটা আমরা পুরোপুরি নেব। আর জানেন তো নিজেদের মাঠে আমাদের কোচের সাফল্যের ট্র্যাক রেকর্ড দু’বছর ধরে খুব ভাল!’’ পাশাপাশি ভারতীয় দলের জার্সিতে সর্বাধিক গোল করা সুনীলের, আরও মন্তব্য, ‘‘আমরা জানি ওদের ডিফেন্স ভাল। সবচেয়ে কম গোল খেয়েছে লিগে। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে ম্যাচে ওরা আমাদের ৪-১ হারিয়েছিল সেই ম্যাচে আমাদের অনেকেই চোটের জন্য খেলেনি। রবিবার কিন্তু অন্য ম্যাচ, অন্য খেলা!’’
‘অন্য’ যে হবে সেটা পদে পদে টের পাচ্ছে বাগান। কিন্তু তা সত্ত্বেও গোটা শিবিরকে শান্ত এবং একাগ্র দেখাচ্ছে। কোচ যখন টিমের নানা রকম ফর্মেশন তৈরিতে ব্যস্ত, তখন ক্লাবের নতুন ফুটবল সচিব তথা ম্যানেজার সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় গোলকিপারদের অনুশীলন করাচ্ছেন। আলোচনা চালাচ্ছেন কোচের সঙ্গে। টিমের দেখভাল করতে সপরিবার বেঙ্গালুরুতে ঘাঁটি গেড়েছেন সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু।
বাগান কী করবে সেটা সময় বলবে। তবে এটা ঘটনা, সনি-বোয়াদের সঙ্গে দলের বঙ্গ ব্রিগেড বা পঞ্জাবি ফুটবলারদের দেখে মনে হচ্ছে বাগান সত্যিই একটা টিম। ওডাফা বা ব্যারেটোদের আমলের তারকা প্রথা উধাও!
আকাশ কালো করে এ সেছিল আগেই। বাগানের অনুশীলন শেষ হতেই নামল বৃষ্টি। টিম বাসের দিকে একসঙ্গে দৌড়োলেন সবাই। দেখে মনে হচ্ছিল, টিম বাসটা আসলে পালতোলা নৌকো। সেটাকে যত বিপদেই ফেলার চেষ্টা হোক, মেরিনার্সরা তা টপকে যাবেনই।
অ্যাশলে ওয়েস্টউড-ও যেমন পারলেন না। অন্য মাঠে ‘ক্লোজড ডোর’ করতে গিয়ে রবিন সিংহদের প্রচন্ড বৃষ্টিতে অনুশীলন বন্ধ হয়ে গেল মাঝপথেই।
ধর্মের কল এখনও মাঝেমধ্যে বাতাসে নড়ে ওঠে!
শনিবারে আই লিগ—
ইস্টবেঙ্গল : লাজং (শিলং, ৪-৩০)
সালগাওকর: ডেম্পো
স্পোর্টিং ক্লুব: পুণে এফসি
মুম্বই এফসি : ভারত এফসি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy