Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

শিল্টনের ঐতিহাসিক ভুলে বাগানে বিপদ

শিল্টন পালের ‘ঐতিহাসিক’ ভুল। যার থেকেই হাস্যকর গোল হজম। তার পরে ঘণ্টাখানেক সময় পেয়েও গোল শোধ করতে না পারা। ত্র্যহস্পর্শে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ম্যারাথন দৌড়ে প্রবল চাপে পড়ে গেল মোহনবাগান। লিগ শীর্ষে থাকার ধারাবাহিকতা যতই এখনও অটুট থাকুক না কেন তাদের!

চাপ বাড়ছে সঞ্জয়ের।

চাপ বাড়ছে সঞ্জয়ের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

শিল্টন পালের ‘ঐতিহাসিক’ ভুল। যার থেকেই হাস্যকর গোল হজম। তার পরে ঘণ্টাখানেক সময় পেয়েও গোল শোধ করতে না পারা। ত্র্যহস্পর্শে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ম্যারাথন দৌড়ে প্রবল চাপে পড়ে গেল মোহনবাগান। লিগ শীর্ষে থাকার ধারাবাহিকতা যতই এখনও অটুট থাকুক না কেন তাদের!

ট্রেভর মর্গ্যান, করিম বেঞ্চারিফার বাংলার ক্লাবগুলোকে নিয়ে তীরে এসে তরি ডোবার ট্র্যাডিশন বঙ্গসন্তান কোচ সঞ্জয় সেনের হাতেও অটুট থেকে এ বারও কি শেষ মুহূর্তে অন্য রাজ্যে গিয়ে উঠবে আই লিগ?

এই আশঙ্কায় সবুজ-মেরুন শিবিরে যখন কাঁপুনি, বাগান কোচ সঞ্জয় তখন অবশ্য আশায় বুক বেঁধে উঠে পড়লেন পুণেতে নিজেদের টিম বাসে। ‘‘আমরা এখনও তো লিগ টেবলে সবার আগে। পরের ম্যাচগুলো জিতলেই হবে,’’ মোবাইলে তখনই আত্মবিশ্বাসী গলা শোনা গেল সনি-বোয়াদের কোচের।

কিন্তু তাতে কি প্রশ্ন ওঠা বন্ধ হয়? যেমন ডার্বি-নায়ক দেবজিৎ মজুমদারকে সরিয়ে চোট সারিয়ে ফেরা শিল্টনকে হঠাৎ ‘লাস্ট লাইন অব ডিফেন্স’-এর মতো স্পর্শকাতর পজিশনে এ দিন নামাতে গেলেন কেন বাগান কোচ?

বাগান গোল কিপিংই তো মঙ্গল-ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট! এ দিনের খেলার আগে পর্যন্ত লিগের ‘লাস্ট বয়’ ভারত এফসি-র সঙ্গে আপাত সহজ লড়াই ততক্ষণে আধ ঘণ্টা গড়িয়েছে। একটা নিরীহ বল ধরার পর সেটা কিক করে সতীর্থদের কাছে পাঠাতে গিয়েছিলেন শিল্টন। কিন্তু নিচু বল গিয়ে লাগে বিপক্ষের সুভাষ সিংহের পায়ে আর পরক্ষণে মণিপুরী স্ট্রাইকার থেকে ডিফ্লেক্ট হয়ে সিধে ঢুকে যায় বাগান জালে। সেই গোল আর শোধ করতে পারেননি সনি-বোয়া-কাতসুমি-জেজে-বলবন্তরা। ফলে ম্যারাথন লিগের মোক্ষম সময়ে টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় হারের যন্ত্রণা নিয়ে টিম হোটেলে ফিরতে হল সঞ্জয়-ব্রিগেডকে। সঞ্জয়ের ব্যাখ্যা, ‘‘শেষ দু’টো ম্যাচে দেবজিৎকে আমার নড়বড়ে মনে হয়েছিল। সে জন্য শিল্টনকে এ দিন খেলিয়েছি। গোল তো গোলকিপার খেতেই পারে। কাসিয়াসও কয়েক দিন আগে খারাপ ভাবে গোল খেয়েছে। আসলে তার পরে এক ঘণ্টা সময় পেয়েও গোল করতে পারিনি বলেই যত সমস্যা।’’

সমস্যা বলে সমস্যা! সনিদের হারের ফলে পয়েন্ট টেবলে বাগানের ঘাড়ে চেপে বসল সুনীল ছেত্রীদের বেঙ্গালুরু। বাগানের মতোই ১৬ ম্যাচ খেলে বেঙ্গালুরুর পয়েন্ট ৩১। বাগানের ৩২। তফাত মাত্র এক পয়েন্টের। বাগানকে এখন বাকি চার ম্যাচ থেকে কেবল যত বেশি সম্ভব পয়েন্ট কুড়োলেই চলবে না, পাশাপাশি তাকিয়ে থাকতে হবে বেঙ্গালুরুর ম্যাচের দিকেও।

অথচ সনি-বোয়াদের এ দিনের প্রতিপক্ষ ভারত এফসি এই ম্যাচের আগে মাত্র দু’টো ম্যাচ জিতেছিল। এগারো দলের লিগে ছিল সবার পিছনে। এ রকম টিমের কাছে হারটা তাই বাগানের উপর আরও বড় ধাক্কা। ম্যাচটা জেতার জন্য অবশ্য নিজের সব অস্ত্রই প্রয়োগ করেছিলেন বাগান কোচ। অল্প চোট থাকা সত্ত্বেও নামিয়ে দিয়েছিলেন বোয়াকে। জেজের জায়গায় দলে ফিরিয়ে এনেছিলেন গোলের মধ্যে থাকা বলবন্ত সিংহকে। ডিফেন্সকেও বেশি আঁটোসাঁটো করতে আনোয়ারের জায়গায় কিংশুক। অ্যাটাকে দুই প্রান্তে গতিশীল কাতসুমি আর সনি। কিন্তু তাতেও ভারতের গোলের মুখ খুলতে পারল না সঞ্জয়ের টিম। মূলত তিনটি কারণে— এক) মসৃণ মেশিনের মতো চলতে থাকা টিমটা হঠাৎ-ই এই মুহূর্তে চাপে পড়ে গিয়েছে। প্রচুর মিস পাস করছে। দুই) মাঝমাঠের দখল নিতে পারছে না। তিন) উইং প্লে-র মাধ্যমে মাঠ বড় করে যে ট্যাকটিক্সে বিপক্ষ ডিফেন্স ভাঙা যায়, তা কার্যকর করতে পারেনি।

সঞ্জয় অবশ্য ভাঙবেন তবু মচকাবেন না যেন! অবাক গোল হজমের জন্য শিল্টনকে দায়ী না করে সব দায় নিজে নিচ্ছেন বাগান কোচ। সঙ্গে যোগ করছেন, ‘‘গোল করতে না পারলে আর জিতব কী ভাবে?’’ তবে কোচ যা-ই বলুন, বাগান কিন্তু ক্রমশই জয়ের সরণি থেকে সরে যাচ্ছে। সনিদের গ্রাফ নামছে হু হু করে। টানা তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচে ৯ পয়েন্ট তোলার স্বপ্ন নিয়ে মহারাষ্ট্র সফরে যাওয়া সবুজ-মেরুন বাহিনী প্রথমে করিমের পুণেকে হারিয়ে শুভ সূচনা করলেও মুম্বইয়ের সঙ্গে ড্র। আর এ দিন তো পুণেতে ফিরে নবি-অরিন্দম-গৌরমাঙ্গীদের মতো কলকাতার বড় দল ছাঁটাইদের ভারত এফসি-র কাছে সটান হার। ৯ পয়েন্টের ভেতর পাঁচ-ই নষ্ট। চ্যাম্পিয়ন অভিলাষী কোনও টিমের পক্ষে যা মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়।

ভারত এফসি-র এই টিমটা ফেডারেশনের নতুন ফ্রাঞ্চাইজি টিম। টুর্নামেন্টের নিয়মানুযায়ী তাদের অবনমন হবে না। তবু কিন্তু এ দিন জয় পেতে মরিয়া ছিল তারা। কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই প্রত্যেকটা বল তাড়া করে গিয়েছেন নবিরা। আচমকা গোল পেয়ে যাওয়ায় কোচের স্ট্র্যাটেজি মতো আলট্রা ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলে শুষে নিয়েছেন সনি, বোয়া, কাতসুমিদের সব চেষ্টাকে। বোয়াকে নিয়ে ফাটকা খেললেও শেষ পর্যন্ত সঞ্জয় তাঁকে তুলে নিতে বাধ্য হন বিরতির পরই।

বাগান আর বেঙ্গালুরু দু’দলকেই দু’টি করে অ্যাওয়ে আর দু’টি করে হোম ম্যাচ খেলতে হবে। একটি ম্যাচ আবার দু’দলের নিজেদের ভেতর। যা সঞ্জয়-ব্রিগেডের কাছে বাড়তি চাপ, কারণ লিগের সেই কঠিনতম হার্ডলটা বাগানকে পেরোতে হবে বেঙ্গালুরুর মাটিতে। পালতোলা নৌকো কি শেষ পর্যন্ত খেতাবের ঘাটে তরি ভেড়াতে পারবে? কোটি টাকার প্রশ্ন এটাই!

মোহনবাগান: শিল্টন, ধনচন্দ্র, কিংশুক, বেলো, প্রীতম, সনি, ডেনসন (বিক্রমজিৎ), শেহনাজ, কাতসুমি, বোয়া (জেজে), বলবন্ত।

ভারত এফসি ১ : মোহনবাগান ০ (সুভাষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE