কুস্তিগির নরসিংহ যাদবকে ঘিরে প্রতি মুহূর্তে নাটকীয় মোড় নিচ্ছে ডোপ-কাণ্ড! এমনকী জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও চেয়ে পাঠিয়েছেন কুস্তি ফেডারেশনে জমা পড়া নরসিংহের অভিযোগ।
নরসিংহ ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়ে চক্রান্তের অভিযোগ করার পর থেকে গত চব্বিশ ঘণ্টায় উঠে এসেছে একাধিক নতুন তথ্য। যার ভিত্তিতে কুস্তি ফেডারেশনের সমর্থনে বলিয়ান নরসিংহ এ দিন জোর গলায় ঘটনার সিবিআই তদন্ত দাবি করেছেন। সোনপতের সাই কেন্দ্রে তাঁর রুমমেট সন্দীপ যাদবের মূত্রের নমুনাতেও নিষিদ্ধ স্টেরয়েড মেথানডিয়েনোন মেলায় চক্রান্তের তত্ত্ব বাড়তি সমর্থন পাচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
অন্য দিকে, সাইয়ের শীর্ষ কর্তারা পাল্টা তোপ দেগেছেন, নিজেকে বাঁচাতে মরিয়া নরসিংহ সাইকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছেন। তাঁদের রোষের কারণ, চক্রান্তের তত্ত্ব সামনে আনতে গিয়ে সোনপত সাইয়ের এক কর্তার নামে কুস্তি ফেডারেশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন কলঙ্কের দাগ লাগা পালোয়ান। ক্ষুব্ধ সাই কর্তারা বলেছেন, ‘‘ও কী বলতে চায় সাই ওর খাবারে স্টেরয়েড মিশিয়েছে? তবে নরসিংহ যদি মনে করে মূত্রের নমুনা পাল্টে দেওয়া হয়েছে, তা হলে লিখিত ভাবে ডিএনএ পরীক্ষা চাইতে পারে।’’
কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী বিজয় গোয়েল আবার এক রকম জানিয়েই দিয়েছেন, নাডা-র শৃঙ্খলারক্ষা প্যানেলে যা-ই হোক, ৭৪ কিলো বিভাগে নরসিংহের রিও স্বপ্ন শেষ। বলেছেন, ‘‘ওর ‘এ’ এবং ‘বি’ দুই নমুনাই পজিটিভ, সেটা মনে রাখতে হবে। নাডার আইনের আওতায় শৃঙ্খলারক্ষা প্যানেল যা ঠিক করার করবে। এই মামলায় তার চেয়ে বেশি কিছু করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’’
কুস্তির কর্তারা জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবারই এক সাই কর্তা-সহ আরও কয়েকজনের নামে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন নরসিংহ। যিনি এ দিন ফের বলেছেন, ‘‘আমি নির্দোষ। সারা জীবনে বহুবার ডোপ পরীক্ষা দিয়ে প্রতিবার ক্লিনচিট পেয়েছি। ডোপ টেস্টে ধরা পড়েছি এটা ভাবতেই পারছি না! আমি সিবিআই তদন্ত চাই। তদন্ত হলেই পুরো বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’ এখানেই না থেমে বলেছেন, ‘‘সাই-তে আমাদের খাবার বা জলে কেউ কিছু নিশ্চয়ই মিশিয়ে দিয়েছিল। তা না হলে আমার রুমমেট সন্দীপের ডোপ পরীক্ষাতেও কী করে একই নিষিদ্ধ ওষুধ পাওয়া যায়?’’
নরসিংহ যখন স্বপক্ষে নানা যুক্তি দিচ্ছেন, তখন তাঁকে আরও বেশি সাহস যোগালেন কুস্তি ফেডারেশনের কর্তারাও। এ দিন সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তাঁরা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। যিনি কুস্তি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ব্রিজভূষণ শরণ সিংহকে ডেকে পাঠিয়ে গোটা ঘটনা বিস্তারিত জানতে চান। আর নরসিংহের অভিযোগের প্রতিলিপিও জমা রাখেন।
ব্রিজভূষণ এবং ফেডারেশনের সহ-সচিব বিনোদ তোমার এ দিন বলেছেন, নরসিংহকে ফাঁসানো হয়েছে। সোনপত সাইতে না গেলে ওকে এই সমস্যায় পড়তেই হত না। ‘‘হরিয়ানার সিআইডি আগেই রিপোর্ট দিয়েছিল যে নরসিংহের জীবন যে কোনও সময় বিপন্ন হতে পারে। সেই রিপোর্টকে গুরুত্ব দিয়ে সাইয়ের ডিজি ইনজেকি শ্রীনিবাস ওকে সোনপত যেতে বারণ করেন। কিন্তু ও রিওতে ভাল ফল করতে এতটাই মরিয়া ছিল যে, যুক্তি দিয়েছিল ওখানে বিদেশি কোচ-সহ নানা সুযোগসুবিধা আছে। ওখানে না গেলে সেরা প্রস্তুতিটা মার খাবে,’’ বলেছেন ব্রিজভূষণ। প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি সহ-সচিব প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এক মাসে তিন বার ওর মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এটা অস্বাভাবিক। নরসিংহ আর সন্দীপের নমুনাতে স্টেরয়েডের যে মাত্রা পাওয়া গিয়েছে সেটাও অবিশ্বাস্য রকমের বেশি।’’
সরাসরি নাম না করলেও নরসিংহের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাওয়া লোকজনেদের ইঙ্গিত, কুস্তিগির সুশীল কুমার এবং তাঁর কোচ তথা শ্বশুর সৎপাল সিংহের দিকে। নরসিংহের ডোপের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই সুশীল এবং সৎপাল ইঙ্গিতপূর্ণ কড়া বিবৃতি দিয়েছিলেন। যাঁকে বাদ দিয়ে রিওর দলে নরসিংহকে রাখা হয়, অলিম্পিক্সে জোড়া পদকজয়ী সেই সুশীল অবশ্য তীব্র সমালোচনার সামনে পড়ে এখন উল্টো সুর গাইতে শুরু করেছেন। এই উলটপুরাণের মূলে আইওএ সচিবের বিবৃতি। যিনি বলে দিয়েছেন, ‘‘নরসিংহ বাদ গেলেও তার বদলে সুশীলের যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই আর নেই।’’
বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি চলছেই। কিন্তু তাতে নরসিংহের কোনও লাভ হবে কি? নাডা-র শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির রিপোর্ট পাওয়া যাবে সম্ভবত বৃহস্পতিবার। তার পর জল কোন দিকে গড়াবে সেটা কেউ জানে না। কারণ অভিযোগ জানাতে গিয়ে সাইকে চটিয়েছেন নরসিংহ। কুস্তি সংস্থার কর্তারা অবশ্য এখনও আশাবাদী। ব্রিজভূষণ বলেছেন, ‘‘আমার বিশ্বাস নরসিংহ ক্লিনচিট পাবে এবং রিও যাবে।’’
তবে সেটা আদৌ হবে কি? ক্রীড়ামন্ত্রী গোয়েল কিন্তু সাফ বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় রিওয় ১২০ নয়, ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন ১১৯ জন প্রতিযোগী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy