Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে গেল তিনশোর রেকর্ড

পঙ্কজ একাই চারশো

তিনশোর পরে এ বার চারশো!শনিবারই ভূকৈলাসের বিরুদ্ধে ৩১৫ করে নটআউট থেকে গিয়েছিলেন মোহনবাগানের দেবব্রত দাস। স্থানীয় ক্রিকেটে যা রেকর্ড বলে ধরা হচ্ছিল। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সেই রেকর্ড হস্তান্তর হয়ে গেল!

নতুন রেকর্ডের মালিক।

নতুন রেকর্ডের মালিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:১৭
Share: Save:

তিনশোর পরে এ বার চারশো!

শনিবারই ভূকৈলাসের বিরুদ্ধে ৩১৫ করে নটআউট থেকে গিয়েছিলেন মোহনবাগানের দেবব্রত দাস। স্থানীয় ক্রিকেটে যা রেকর্ড বলে ধরা হচ্ছিল। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সেই রেকর্ড হস্তান্তর হয়ে গেল! রবিবার স্থানীয় ক্রিকেটে এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মালিক হয়ে গেলেন বাংলার রঞ্জি টিমের ক্রিকেটার পঙ্কজ সাউ।

দক্ষিণ কলকাতা সংসদের (ডিকেএস) বিরুদ্ধে ৪১৩ অপরাজিত থেকে!

অক্সফোর্ড মিশনের মাঠে ডিকেএসের সঙ্গে সিএবি লিগের ম্যাচ ছিল বড়িশা স্পোর্টিংয়ের। সেখানেই ৪১৩ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে যান বাংলার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ক্লিন হিট মারতে পারেন বলে পঙ্কজের এমনিতেই বেশ নামডাক আছে। কিন্তু তিনি বোলারদের উপর কতটা নির্দয় হতে পারেন, এ দিন দেখল ময়দান। মাত্র ২৮৯ বলে ৪১৩ করে নটআউট থেকে যান পঙ্কজ। ৪৪-টা বাউন্ডারির সঙ্গে ২৩-টা বিশাল ছক্কাও মারেন। ম্যাচ ড্র হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ কলকাতা সংসদের প্রথম ইনিংসে তোলা ৩৬৯ রানের জবাবে বড়িশা স্পোর্টিং প্রথম ইনিংস শেষ করল ৭০৮-৮ স্কোরে। কিন্তু তাতে কী? কেউ ৪১৩ করে দিলে ম্যাচে কী হল না হল, গুরুত্ব পায় কতটুকু?

ময়দানে আলোচনা অবশ্য আরও একটা ব্যাপার নিয়ে হচ্ছে। তা হল, ব্যাটসম্যানদের বড় রানের এমন অধুনা ট্রেন্ড। ময়দানের কোচদের সঙ্গে কথা বলে তিনটে কারণ পাওয়া যাচ্ছে।

এক) ময়দানের বিভিন্ন ক্লাবে, ভাল স্পিনারের অভাব।

দুই) ছোট মাঠে ভাল উইকেট। আগের চেয়ে লিগ ম্যাচের উইকেট এখন অনেক ভাল হয়।

তিন) লিগের নতুন ফর্ম্যাট। যেখানে ৮৫ ওভারের বদলে প্রথম ইনিংস হচ্ছে ১১৫ ওভারের।

প্রাক্তন বাংলা অধিনায়ক এবং মোহনবাগানের বহু দিনের কোচ পলাশ নন্দী বলছিলেন, ‘‘আগে কিছু কিছু মাঠের উইকেট বেশ খারাপ হত। এখন অনেক ভাল। প্লাস ভাল পেসার হোক বা স্পিনার, ছোট ছোট টিমগুলোয় তেমন নেই। আর একটা বড় ব্যাপার হল লিগের ফর্ম্যাট। এতে বড় রান করার সুযোগ অনেক বেড়ে গিয়েছে। তবে এতে পঙ্কজ বা দেবব্রতর কৃতিত্ব ছোট হয় না। খুব ভাল হার্ড হিটার ওরা। একবার মারতে শুরু করলে থামানো কঠিন হয়ে যায়।’’ বড়িশা এ বার টিম যেমন ভাল করেছে, তেমন কোচ করে এনেছে প্রাক্তন বাংলা ওপেনার অরিন্দম দাসকে। তিনি বললেন, ‘‘পঙ্কজ চারশো করবে, ভাবিনি। ও-ও ভাবেনি। খুব ভাল হিট করছিল। আর ওকে ভুল শট খেলিয়ে আউট করবে কে? সেই স্পিনার কোথায়? কেউ এখন টার্নের চেষ্টায় যায় না। আজ কিন্তু একবারও পঙ্কজের শট মিসটাইমড হয়নি। কষ্ট করে একটা শটও ওকে মারতে হয়নি।’’ এবং শেষে গত বারের লিগ চ্যাম্পিয়ন টিম ভবানীপুরের কোচ আব্দুল মুনায়েম বললেন, ‘‘ছোট মাঠ আর ভাল স্পিনারের অভাব পরপর বড় রানের কারণ। ময়দানের কোনও বড় ক্লাবে একজনও লেগস্পিনার নেই। এত ছোট মাঠে খেলা হলে ভাল স্পিনার আসবেও না। তবে পঙ্কজকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। ময়দানের ইতিহাসে চারশো কেউ করেনি। বাড়ির ছাদেও চারশো হয় না!’’

ঠিকই। ময়দানে আজ পর্যন্ত তো হয়নি। নিজের রেকর্ড নিয়ে পঙ্কজ বলছিলেন, ‘‘ওদের বোলিং দুর্বল ছিল না। আমাদের পাঁচটা উইকেট তো তাড়াতাড়ি ফেলেও দিয়েছিল ওরা। আমি আসলে শটগুলো ঠিকঠাক খেলছিলাম। ২৬০ করার পর বাকি রানটা তাড়াতাড়ি তুলেছি। তিনশো করার পর দেখলাম, আরও দশ ওভার পড়ে। ভাবলাম, একটা চেষ্টা করি। ওই দশ ওভারে আরও একশো রান হয়ে গেল!’’ আর দেবব্রত দাস? চারশোর দিকে যেত-যেতে তাঁর একদিন আগে করা রানটা মনে পড়েনি? পঙ্কজ শুনে বলে ফেলেন, ‘‘আরে, না না। ও সব একদমই কিছু মনে হয়নি। আমি তো সকালে রাজাদাকে (দেবব্রত-র ডাকনাম) কনগ্র্যাচুলেটও করলাম।’’ দেবব্রতকে ধরা হলে সব শুনে তিনি হেসে বললেন, ‘‘হুঁ, করেছে। আবার আজ বিকেলে আমি ওকে করেছি! অসুবিধে কোথায়? রেকর্ড তো হয় ভাঙার জন্যই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CAB league Pankaj Shaw
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE