Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাহাড়েও হাজির দলজিৎ, শুরু হয়ে গেল পিচ নিয়ে নাটক

ধর্মশালার বাইশ গজ নিয়ে দু’দলের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়ে গেল। লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে বোর্ডের প্রধান কিউরেটর দলজিৎ সিংহ।

মনোরম: ধর্মশালায় পাহাড়ের কোলে প্র্যাকটিস অশ্বিনদের। ছবি: টুইটার।

মনোরম: ধর্মশালায় পাহাড়ের কোলে প্র্যাকটিস অশ্বিনদের। ছবি: টুইটার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৭ ০৩:৩৬
Share: Save:

ধর্মশালার বাইশ গজ নিয়ে দু’দলের মধ্যে ঠাণ্ডা লড়াই শুরু হয়ে গেল। লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে বোর্ডের প্রধান কিউরেটর দলজিৎ সিংহ। পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে দলজিৎ এসে পৌঁছনোর পর থেকেই পিচ নিয়ে সমীকরণ দ্রুত বদলে যেতে শুরু করেছে।

বুধবার পর্যন্ত ধর্মশালার পিচে বেশ ঘাস ছিল। যা দেখে অস্ট্রেলীয় মিডিয়াতেও লেখালেখি হচ্ছিল, এটা অস্ট্রেলিয়ার ‘হোম’। এখানে প্যাট কামিন্স, জস হেজ্‌লউড-রা আগুন ছোটাবে। অস্ট্রেলিয়া নাকি তিন পেসারে নামার কথাও ভাবা শুরু করে দিয়েছিল।

চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই সেই ছবি অনেক পাল্টে গিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া দল এ দিন মাঠে গিয়ে প্র্যাকটিসে নামার সময়েই আবিষ্কার করে, স্থানীয় পিচ প্রস্তুতকারকের সঙ্গে মাঠে ঢুকছেন দলজিৎ। সেটা দেখেই তাঁদের কাছে দেওয়াল লিখন পরিষ্কার হয়ে যায় যে, পিচ নিয়ে খেলা শুরু হয়ে যাবে এ বার। আর অস্ট্রেলীয়দের আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে বিকেলের মধ্যেই পিচের ঘাস উড়িয়ে সাফ করে দেওয়া হয়েছে।

পুণেতে প্রথম টেস্টে এ ভাবেই ম্যাচের আগে উদয় হয়ে ঘাসের পিচকে ন্যাড়া, শুকনো বাইশ গজে পাল্টে ফেলেছিলেন দলজিৎ। তা নিয়ে পুণে ক্রিকেট সংস্থার সঙ্গেও তাঁর ঝামেলা বাধে। শেষ পর্যন্ত পুণের স্থানীয় পিচ প্রস্তুতকারককে সরিয়ে দলজিৎ পিচের কাজ করেন।

ধর্মশালায় অবশ্য অত প্রতিরোধের মুখে তাঁকে পড়তে হচ্ছে না। জানা গেল, সাংবাদিকদের সামনে এসে স্থানীয় কিউরেটর গদগদ হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, ‘‘পিচ চারটি বিভাগকেই সাহায্য করবে।’’ অবাক হয়ে সাংবাদিকেরা তাঁর কাছে জানতে চান, চারটি বিভাগ কী করে হল? স্থানীয় কিউরেটরের জবাব, ‘‘ব্যাটিং, পেস বোলিং, স্পিন বোলিং, ফিল্ডিং।’’ হাসতে হাসতে সাংবাদিকেরা এর পর জানতে চান, ‘‘পিচ কী ভাবে ফিল্ডিংকে সাহায্য করতে পারে?’’ কিউরেটর আর সেই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি।

সব মিলিয়ে, বিরাট কোহালির চোট নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যেই চালু অব্যাহত বাইশ গজ নিয়ে নাটক। অস্ট্রেলীয়রা ধরেই নিয়েছে, গতিসম্পন্ন পিচ পাওয়ার আর কোনও সম্ভাবনাই নেই। ধর্মশালায় ফোন করে এমনও শোনা গেল যে, পিচকে শুকনো করে তোলার চেষ্টাও চলছে জোরকদমে। যদিও পাহাড়ের ভিজে-ভিজে আবহাওয়ায় সেটা কতটা সম্ভব, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ধর্মশালাতেও বল ঘোরানোর ব্যবস্থাই করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ভারতীয় দল যেমন দুই পেসার-দুই স্পিনারে খেলছে, অস্ট্রেলিয়াও তেমনই কম্বিনেশন নামাবে। স্মিথ-রা মনে হয় না স্টিভ ও’কিফ-কে বসিয়ে বাড়তি পেসার খেলানোর ঝুঁকি নেবে। ভারতের দিকে আবার শোনা যাচ্ছে, মহম্মদ শামি নাকি এখনও পুরোপুরি ফিট নন। তাঁকে ধর্মশালার পেস-সহায়ক আবহাওয়াতেও পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

একটা কথা উঠছিল, পাঁচ বোলারে নামবে কি না ভারত। এখন কিন্তু সেই সম্ভাবনা কম। একে তো ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র ধারাবাহিক ফর্মে রয়েছেন চেতেশ্বর পূজারা। এর মধ্যে এক ব্যাটসম্যান কম করা মানে বাড়তি ঝুঁকি থেকে যাবে। দ্বিতীয়ত, কোহালি যদি না খেলতে পারেন তা হলে সেটা বাড়তি চাপ হবে ব্যাটিং ইউনিটের জন্য।

কোহালির মতোই অবশ্য অস্ট্রেলীয় মিডিয়ার আক্রমণের মুখে পড়েছে দলজিৎ। তাঁকে ‘পিচ ডক্টর’ বলে নানা বাউন্সার দিয়ে চলেছে স্মিথদের দেশের সংবাদমাধ্যম। তাদের ‘দেশাত্মবোধ’ দেখে স্তম্ভিত ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরাও।

মোহালিতে এক সময় দারুণ প্রাণবন্ত পিচ বানিয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন দলজিৎ। কিন্তু গত দু’বছর ধরে দেশের মাটিতে ঘূর্ণি পিচ বানানোর জন্য তিনি বিশ্ব ক্রিকেটে কার্যত খলনায়ক হয়ে উঠেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ভারতে এসেছিল, তখনও তিনি ঘূর্ণি উইকেট বানিয়েছিলেন। এই সিরিজে পুণেতে বানিয়েছেন। যদিও পুণের পিচ নিয়ে কারুকাজ ব্যুমেরাং হয়ে ভারতকেই ধরাশায়ী করে দিয়েছিল। ধর্মশালায় দলজিতের উপস্থিতি আশীর্বাদ হয় না অভিশাপ, সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE