Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
কিশোর রোনাল্ডোকে নিয়ে বন্ধু ফরচুন

নেভিলদের স্টেপওভারে ছিটকে দেওয়াই প্রতিভা বুঝিয়েছিল ক্রিশ্চিয়ানোর

কোঁকড়ানো চুল। রোগাপাতলা শরীর। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কথা বলতেন। বয়স তখন ছিল আঠারোর আশেপাশে। দলের জুনিয়র ছিলেন। তাতে কী? আত্মবিশ্বাসের ছাপটা তখন থেকেই ছিল তাঁর শরীরী ভাষায়। বুক চিতিয়ে হাঁটতেন। ট্রেনিংয়ে স্টেপওভার করে মাটিতে ফেলে দিতেন বর্ষীয়ান ডিফেন্ডারদের।

সোহম দে
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৫
Share: Save:

কোঁকড়ানো চুল। রোগাপাতলা শরীর। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কথা বলতেন। বয়স তখন ছিল আঠারোর আশেপাশে। দলের জুনিয়র ছিলেন। তাতে কী? আত্মবিশ্বাসের ছাপটা তখন থেকেই ছিল তাঁর শরীরী ভাষায়। বুক চিতিয়ে হাঁটতেন। ট্রেনিংয়ে স্টেপওভার করে মাটিতে ফেলে দিতেন বর্ষীয়ান ডিফেন্ডারদের। তিনি— ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।

ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে তাঁর শুরুর দিনগুলোয় এক জনই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল রোনাল্ডোর। তিনি— কুইন্টন ফরচুন।

যে বন্ধু আনন্দবাজারকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তুলে আনলেন এক যুগ আগের নানা অচেনা কাহিনি। তাঁর এবং রোনাল্ডোর।

কী ভাবে রোনাল্ডো রোনাল্ডো হয়েছিলেন? আনন্দবাজারকে ই-মেল সাক্ষাৎকারে ফরচুন জানিয়েছেন, রোনাল্ডোর কিংবদন্তি হয়ে ওঠার পিছনে কতটা প্রতিভা আর কতটা পরিশ্রম। ‘‘রোনাল্ডোর এত বড় প্লেয়ার হয়ে ওঠা কোনও ম্যাজিক নয়। আমি নিজে দেখেছি, ও কতটা খাটত। সেই কারণেই আজ রোনাল্ডো এত বড় প্লেয়ার।’’

ম্যান ইউনাইটেডে তখন গ্যারি নেভিল, ফিল নেভিলদের মতো ডিফেন্ডার।

কিন্তু তাতেও ট্রেনিংয়ে বন্ধ হত না রোনাল্ডোর স্টেপওভার। ‘‘রোনাল্ডো প্রথম দিন থেকেই সবাইকে দেখাতে চাইত ও কী দিয়ে তৈরি। রোনাল্ডো দুর্দান্ত প্রতিভা। ওই বয়সেই ট্রেনিংয়ে স্টেপওভার করে ডিফেন্ডারদের বোকা বানাত। দেখাতে চাইত, ও কতটা স্কিলফুল, কতটা প্রতিভাবান। ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল আরও শক্তিশালী আর ফিট হয়ে উঠতে। গতি বাড়াতে,’’ মন্তব্য ফরচুনের।

ম্যান ইউনাইটেডের ইতিহাসে ফরচুন প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান ফুটবলার। স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন তাঁকে প্রস্তাব দেওয়ার সময় বিশ্বাসই করতে পারেননি, স্বপ্নের ক্লাবে খেলার সুযোগ মিলছে।

ক্লাবের হয়ে ৭৬টা ম্যাচ খেলেছেন। তিনটে প্রিমিয়ার লিগ জয়ী দলের সদস্য হলেও মেডেল পেয়েছেন একটা মরসুমের। নিয়ম অনুযায়ী, অন্তত দশটা ম্যাচ না খেললে পদক পাওয়া যায় না। ফরচুন দু’বার চোটের জন্য দশের কম ম্যাচ খেলেছিলেন।

আর একবার ন’টা খেললেও বিশেষ আবেদন করে তাঁর জন্য পদকের ব্যবস্থা করে দেয় ম্যাঞ্চেস্টার। পদক না এলেও সমর্থকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। দলের স্বার্থে যে কোনও পজিশনে খেলতে পারার গুণটা মুগ্ধ করে স্যর অ্যালেক্সকে।

ছোটবেলা থেকেই দেখতেন ইউনাইটেডের ম্যাচ। দেখতেন, ঐতিহাসিক লাল জার্সি পরার স্বপ্নও। ‘‘আমার দেশে ম্যান ইউনাইটেড খুব জনপ্রিয়। তাই ম্যান ইউনাইটেডের জার্সি পরা আমার জন্য বিরাট গর্বের একটা ব্যাপার।’’

ফার্গুসন অবসর নিয়েছেন। ফরচুনের জীবনেও এখন ফুটবল বুট নেই। আছে হাতে বাঁশি। সময় পেলেই ছোটদের কোচিং করান তিনি। জীবনে সব কিছু পাল্টেছে। এত বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু আজও ফার্গুসনের টিমটক ভোলেননি ফরচুন। হাফটাইমের সময় স্কটিশ ম্যানেজারের বকাঝকা, উদ্বুদ্ধ করে তোলার বার্তা আজও মনে থেকে গিয়েছে ফরচুনের। ‘‘স্যর অ্যালেক্সই আমার কেরিয়ারের সেরা কোচ। ওঁর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল ম্যান ম্যানেজমেন্ট। এখনও মনে আছে ম্যাচের আগে স্যর অ্যালেক্সের টিমটক। উনি জানতেন কী করে ফুটবলারদের তাতাতে হবে। যে কোনও ভাল মনোবিদের মতোই। ক্লাবের সম্পর্কেও সব কিছু জানতেন। শুধু প্লেয়ার নয়। ট্রেনিং গ্রাউন্ডের ক্যাটারিংয়ের লোক থেকে কিটম্যান— সবাইকে দলের অংশ করে রাখতেন।’’

ফরচুন যখন সই করেন, ম্যান ইউনাইটেডে তখনও ত্রিমুকুট জেতার হ্যাংওভার। বেকহ্যাম, স্কোলস, নেভিল ভাইরা, গিগস সবাই তখন ক্লাবের ইতিহাসে নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে ফেলেছেন। সব কিছু জিতলেও তাঁদের ট্রেনিংয়ে আত্মতুষ্টির ছিটেফোটাও থাকত না। বরং আরও ট্রফি জেতার অদম্য জেদটা ছিল।

ফরচুন বললেন, ‘‘১৯৯২-র বিখ্যাত সেই ব্যাচ। বেকহ্যাম, গিগস, স্কোলস, নেভিল। এদের সব কিছু জেতা হয়ে গিয়েছিল। তাও ট্রেনিংয়ে নিজেদের নিংড়ে দিত।’’ ম্যান ইউনাইটেডের সোনার গ্র্যাজুয়েটদের ছাড়াও রুদ ফান নিস্তেলরুইর রাগের রহস্যও ফাঁস করলেন ফরচুন। ট্রেনিংয়ে গোল না পেলে হতাশ হয়ে পড়তেন নিস্তেলরুই। কারও সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতেন না। ‘‘তখন ওর সামনে যাওয়াই যেত না,’’ বলছিলেন ফরচুন।

ম্যান ইউনাইটেডের এক অনুষ্ঠানে আগামী রবিবার ইস্টবেঙ্গলে আসবেন ফরচুন। ডোয়াইট ইয়র্ক, রোয়ান ইয়র্দিকের মতো প্রাক্তন তারকাদের সঙ্গে এক দলে ‘তিন বনাম তিন’ ম্যাচেও খেলবেন। ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কেও যথেষ্ট খোঁজ রাখেন। বিশেষ করে আইএসএল। ‘‘ভারতে ফুটবলের আবেগ বাড়ছে দিনের পর দিন। আইএসএল খুব জনপ্রিয় হচ্ছে। আমার প্রাক্তন সতীর্থ দিয়েগো ফোরলানও খেলে এখানে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ছোটরাও ফুটবল খেলতে আসছে,’’ বলছিলেন ফরচুন।

প্রিমিয়ার লিগে ইউনাইটেডের ফর্ম খারাপ। ‘দ্য স্পেশ্যাল ওয়ান’ ম্যাচ জেতানোর থেকে বেশি স্ট্যান্ডে গিয়ে বসছেন। ইংল্যান্ডের এক সময়ের দৈত্য আজ যেন ম্লান হওয়া এক সাম্রাজ্য। কিন্তু সময় দেওয়া হোক। ধৈর্য ধরুক ইউনাইটেড ভক্তরা। মোরিনহোর হাত ধরে আবার সোনার দিন ফিরবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। ফরচুন বললেন, ‘‘প্রিমিয়ার লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক বেশি। কিন্তু প্রতিটা দল একে অন্যের থেকে পয়েন্ট নিচ্ছে। তাই নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে হবে। আর লক্ষ্যে ঠিক থাকতে হবে।’’

ইউনাইটেডের খারাপ ফর্মের পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসছে পল পোগবার নাম। ফরচুনের অবশ্য দাবি, প্রত্যাশার এত চাপ কারও উপরে থাকলে পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়বেই। মাঠে এগারো জন থাকলেও সমস্ত চোখ থাকবে তাঁরই উপরে। তাই সব শেষে ফরচুন বললেন, ‘‘পোগবাকে যে দামে সই করানো হয়েছে, তাতে ওর প্রতিটা পারফরম্যান্সই খুঁটিয়ে দেখা হবে। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ওকে সই করানো হয়েছে। সময় দেওয়া হলে অবশ্যই পোগবা বিশ্বের সেরা ফুটবলার হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE