Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
মেসিদের গ্রহে

পরপর দু’রাতে র্যানিয়েরি রূপকথা, সিমিওনে সিনেমা

দরদর ঘাম ঝরছে। ফুটবলারদের দিকে চিৎকার। সাইডলাইনে চতুর্থ রেফারিকে গালিগালাজ। বিপক্ষ ফুটবলারকে ধাক্কাও! মঙ্গল রাতের পেপ গুয়ার্দিওলা আর দিয়েগো সিমিওনে।

সিমিওনে-রিবেরির ঝামেলার সেই ছবি। -এএফপি

সিমিওনে-রিবেরির ঝামেলার সেই ছবি। -এএফপি

সোহম দে
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৬ ০৫:২৯
Share: Save:

দরদর ঘাম ঝরছে। ফুটবলারদের দিকে চিৎকার। সাইডলাইনে চতুর্থ রেফারিকে গালিগালাজ। বিপক্ষ ফুটবলারকে ধাক্কাও!

মঙ্গল রাতের পেপ গুয়ার্দিওলা আর দিয়েগো সিমিওনে।

টিভিতে দেখেই মনে হবে জো ফ্রেজিয়ার আর মহম্মদ আলি যেন!

পার্থক্য একটাই। দু’জনের হাতে কোনও বক্সিং গ্লাভস ছিল না। বরং এখানে কী করে বিপক্ষকে জ্যাব বা সাউথপ-এ নক-আউট করতে হবে সব কিছুই মাথা থেকে বার করতে হচ্ছে। দুই সেরা ফুটবল-মগজের লড়াইয়ে যা হয় আর কী।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বের স্কোর বলবে ঘরের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখ ২-১ জিতেও অ্যাওয়ে গোলের ভিত্তিতে আটলেটিকো মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ছিটকে গিয়েছে। কিন্তু এটা বলবে না সিমিওনের পাশে নির্দ্বিধায় বসিয়ে দেওয়া যায় সেরা কোচের তকমা। এটাও বলবে না সিমিওনের আটলেটিকো ডিফেন্স আর গ্রেট ওয়াল অব চায়নার মধ্যে বোধহয় কোনও পার্থক্য নেই। কারণ বর্তমানে আটলেটিকো ডিফেন্স টপকানো এক কথায় অসম্ভব। মেসি, রোনাল্ডো আগেই তাঁর স্বাদ পেয়ে গিয়েছেন। এ বার ছিল গুয়ার্দিওলা-বাহিনীর পালা। বায়ার্ন দুটো গোল করল ঠিকই কিন্তু প্রথম পর্বে যা করার করে দিয়েছিল আটলেটিকো। নিজেরা ১-০ জেতার পাশাপাশি অ্যাওয়ে গোল করতে দেয়নি বায়ার্নকে।

দ্বিতীয় পর্বে কিছুটা হলেও ভাগ্য সহায় ছিল আটলেটিকোর সেটা অবশ্য বলতে হবে। না হলে যে ফুটবলারের কাছে গোল করাটা সকালে ব্রেকফাস্ট করার মতো অভ্যেস সেই টমাস মুলার পেনাল্টি ফস্কান! তবে ভাগ্যের জোরে পাড়ার ম্যাচ জেতা যায়। কোনও বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে দু’পর্বের টাই নয়। এই আটলেটিকো ডিফেন্স ঠিক তাদের মতো, যারা নিজেদের বাড়িতে লোকদের নেমন্তন্ন করে কিন্তু জল ছাড়া কিছুই দেয় না। আটলেটিকোও সে রকম নিজেদের হাফে বিপক্ষকে আমন্ত্রণ জানায় কিন্তু এমন সব জায়গায় সীমাবদ্ধ করে দেয় যেখান থেকে বিপক্ষ গোল করবে কী, আটলেটিকো গোলপোস্টও দেখতে পাবে না!

সিমিওনে জিতে উঠে বলেছেন, ‘‘মঙ্গলবারের ম্যাচের শেষ কিছু মুহূর্ত দেখে মনে হচ্ছিল কোনও সিনেমা!’’ সত্যিই, গোদিন, গিমেনেজের মতো অনামী ফুটবলারদের নিয়ে ইউরোপের ফের এক গোলিয়াথকে ছিটকে দিল আটলেটিকো। গত তিন বছরে দু’বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে। অনেকে তর্ক করতে পারেন য়ুরগেন ক্লপও বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে ফাইনালে তুলেছিলেন। কিন্তু তার টিমে একটা লেভানডস্কি ছিলেন। রয়েস ছিলেন। গুন্দোগান ছিলেন। আটলেটিকোয় কে আছেন? তোরেস? যিনি নিজের সেরা ফর্ম লিভারপুল জার্সিতে ফেলে এসেছেন! মাঝমাঠে ‘বুড়ো’ গাবি। যাঁর নাম অর্ধেক লোক শোনেইনি। ডিফেন্সে ফিলিপে লুইস। যাঁকে মোরিনহো চেলসিতে রিজার্ভে বসিয়ে রাখতেন। বার্সেলোনা, বায়ার্ন, যাদের বিপক্ষে দেখলে হাড়ে হিম ধরে যায়, তাদের সিমিওনের আটলেটিকো বুঝিয়েছে, দ্যাখো দাদা হারতে কেমন লাগে! মোরিনহোর মতো গুয়ার্দিওলাও তো সেমিফাইনাল-সিন্ড্রোমে ভুগছেন। টানা তিন বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ চারে হার। বায়ার্নকে বুন্দেশলিগা যে কোনও কোচই জেতাতে পারেন। তার জন্য কি গুয়ার্দিওলা লাগে?

কিন্তু এই সপ্তাহে সিমিওনেকেও ঢেকে দিল মাত্র ৬৩ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে তৈরি দল লেস্টার সিটি। যেখানে কাঁতে, মাহরেজের মতো ফুটবলার সই করার আগে গুগলে সার্চ করেছিলেন ক্লাবটা ঠিক কী! অতীতে ভেরোনার সেরি এ জয়, নটিংহ্যাম ফরেস্টে ব্রায়ান ক্লফ জমানা, ডেপোর্টিভোর লা লিগা জয়— সবই রূপকথা। কিন্তু লেস্টার সিটির ইপিএল জেতা সবার উপরে। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে বিদেশি মালিকানার জমানায় একটা ছোট্ট মাছ হাঙরদের চোখে আঙুল দেখিয়ে বুঝিয়ে দিল, পাউন্ড-ডলারই সব নয়। লেস্টার কোচ ক্লদিও র‌্যানিয়েরির কাছে এর চেয়ে স্মরণীয় কী হতে পারে যখন রোমান আব্রামোভিচের চেলসির সামনে ইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেন তিনি।

যেখান থেকে বিতাড়িত, সেখান থেকেই এ বার ‘গার্ড অব অনার’!

ম্যান অব দ্য উইক:
টিম লেস্টার সিটি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Claudio Ranieri football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE