Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রাজস্থানের রাহুর দশাটাই আশায় রাখছে দিল্লিকে

এই যে যুবরাজ সিংহ বারবার হোঁচট খেয়ে চলা সত্ত্বেও দিল্লি ডেয়ারডেভিলসকে দেখে মনে হচ্ছে একদম ঠিক রাস্তায় এগোচ্ছে, এটা খুব স্বাস্থ্যকর লক্ষণ। এই যে মহম্মদ শামি চোটে ছিটকে যাওয়ার পর আপনার স্থানীয় পুরপিতার মতোই একটা দুর্লভ দর্শন দিয়ে জাহির খান হাজির হল আর কাঁপিয়ে দিল— এটায় আরও বোঝা যাচ্ছে দিল্লি এখন কতটা সু-স্বাস্থ্যে ভরপুর।

রবি শাস্ত্রী
শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৫ ০৩:৪৮
Share: Save:

এই যে যুবরাজ সিংহ বারবার হোঁচট খেয়ে চলা সত্ত্বেও দিল্লি ডেয়ারডেভিলসকে দেখে মনে হচ্ছে একদম ঠিক রাস্তায় এগোচ্ছে, এটা খুব স্বাস্থ্যকর লক্ষণ। এই যে মহম্মদ শামি চোটে ছিটকে যাওয়ার পর আপনার স্থানীয় পুরপিতার মতোই একটা দুর্লভ দর্শন দিয়ে জাহির খান হাজির হল আর কাঁপিয়ে দিল— এটায় আরও বোঝা যাচ্ছে দিল্লি এখন কতটা সু-স্বাস্থ্যে ভরপুর। তবে ইমরান তাহির এবং অমিত মিশ্রের মতো তুরুপের তাসদের দিয়ে শুক্রবারও কেন স্রেফ সৌজন্যমূলক দু-একটা ওভার করানো হল, সেটা কিন্তু রীতিমতো গবেষণার বিষয়!

অবশ্য দিল্লি হল সেই টিম যারা এটাও প্রমাণ করে দিতে পারে যে, আমি হয়তো ওদের নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি রকমেরই প্রশংসা করে ফেলেছি। এই টিমটার মাঝেমাঝেই স্মৃতিভ্রংশ হয়। যখন ওরা ভুলে যায় যে ক্রিকেটটা ওদের মাঠে নেমেই খেলতে হবে। এ বছর যদিও দিল্লিকে বেশ খাটতে দেখছি।

আসলে দিল্লি টিমটা আইপিএলে প্রতিপক্ষের কাছে সাধারণত এত বেশি মার খায় আর হারে যে, ওরা ভাল খেলছে ভাবাটাই কঠিন। আগের কয়েকটা মরসুমে দিল্লিকে বেশির ভাগ সময় গহন জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া ছোট্ট ছেলের মতোই দুর্গত দেখিয়েছে। সেই ছবিতে প্রাণ কেঁদেছে সবার। দেশের প্রত্যেক কোনা থেকে মানুষ সমবেদনার ত্রাণ পাঠিয়েছে। আর এখন তো মনে হচ্ছে এই ‘দিল্লি বাঁচাও তহবিল’-এর কথা দেবতাদের কানেও পৌঁছেছিল!

পঞ্জাব ম্যাচটাই তার প্রমাণ হতে পারে। বলা চলে, দর্শকের জন্য কোটলার গেটগুলো পুরোপুরি খুলে দেওয়ার আগেই মাত্র দশ রানে চার উইকেট ফেলে দিয়ে পঞ্জাবকে জবরদস্ত ধাক্কা দিয়ে বসে দিল্লি। অবস্থা এমন যে, মাঠে ঢোকার লাইনে দাঁড়ানো দর্শকরা চোখটোখ কচলে আবার করে জিজ্ঞেস করে যাচাই করে নিচ্ছিলেন যে স্কোরবোর্ডে যা দেখছেন সেটা কল্পনা না বাস্তব! সত্যিই পঞ্জাবের এমন ধস নামানো গিয়েছে, নাকি ওটা দিল্লি ব্যাট করছে! সাধারণত প্রথম কয়েক ওভারেই ১০-৪ হয়ে যাওয়ার স্কোরগুলো এত কাল আইপিএলে দিল্লির একচেটিয়া ছিল। কিন্তু এ বছর ধস আর তেমন নামছে না। ফলে সেই ব্যক্তি, যিনি দিল্লির সমর্থকদের চোখ মোছার রুমাল বেচে গত কয়েক মরসুমে কোটিপতি হয়েছিলেন, এ বছর তাঁর ব্যবসায় ঘোর মন্দা চলছে।

তবু সমর্থকদের মনে সংশয় ছিল। সংশয় যে, পিচটা নিশ্চয়ই খুব খারাপ। না হলে এমন দুর্দশা হয়! দেখলেন না, এই বলটা কেমন আচমকা লাফাল? ওটা কেমন হঠাৎ গড়িয়ে গেল? এই পিচে ৯০ তাড়া করাও কি নিরাপদ হবে? আর সঙ্গে সেই গবেষণা, তাহিরকে আক্রমণে আনতে এত দেরি করার কী মানে? ওকে এত পরে বল দেওয়া আর পুলিশ কমিশনারের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে যাওয়া তো প্রায় একই রকমের মূর্খামি!

তবে এখন আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি, সমর্থকদের সব আশঙ্কাই ছিল অমূলক। অভ্যাসবশত ওঁরা ভয় পেয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু শেষে জিতে দেখিয়ে দিল দিল্লি। জে পি দুমিনি বাহিনী আপাতত মুম্বই পৌঁছে গিয়েছে। এবং ওদের প্রতিপক্ষ রাজস্থান রয়্যালস সম্প্রতি যে রকম রাহুর গ্রাসে পড়েছে, আশা করা যাক সেটা আরও এক ম্যাচ চলবে। এখনও পর্যন্ত মুম্বই আর পঞ্জাবের সর্বনাশে দিল্লির পৌষমাস এসেছে। রাজস্থানও যেন একই রকমের উপহার তুলে দেয় দিল্লির হাতে।

কী জানি, ‘দিন সবারই আসে’— কথাগুলো হয়তো দিল্লিকে দেখেই লিখেছিলেন কেউ!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE