স্ত্রী রেবেকার সঙ্গে ফার্দিনান্দ।
একটা বড় ঢেউ তছনছ করে দিয়েছিল সব। জীবনের রক্ষণ সামলাতে পারেননি সেই সময়। তার পর ফিরতে লেগে গেল অনেকটা সময়। রিও ফার্দিনান্দের কথা হয়ত ভুলে গিয়েছেন সকলেই। সেই ইংল্যান্ড অধিনায়কের ব্যান্ড হাতে যখন নামতেন তখন প্রতিপক্ষ আক্রমণে ওঠার আগে ভাবত। আর যখন ম্যানটেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে বল পায়ে নামতেন ভরসা পেত পুরো দল। কারণ রক্ষণে রয়েছে তিনি। সে দিন অতীত হয়েছে অনেক আগেই। অবসর নিয়েছেন। অবসর তো অনেকেই নেন। কিন্তু রিও ফার্দিনান্দের মতো এ ভাবে ফুটবল জগত থেকে হারিয়ে যাননি কেউই। ২০১৫র পর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি তাঁর। স্ত্রী রেবেকার মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। গুটিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে। কি ভাবে সব সামলাবেন বুঝতে পারছিলেন না। ডুবে গিয়েছিলেন নেশায়। তিন সন্তানকে কী ভাবে সামলাবেন সেটাও জানতেন না। তখন যে তারা খুব ছোট। সবই তো সামলাতেন রেবেকা। বুঝতেও পারেননি কী ভাবে চলে ঘর-সংসার। অথৈ জলে পড়ে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছিলেন গভীরে। সেখান থেকেই ফেরা। সন্তানদের জন্য।
আরও খবর: কোচ বাতিল, খুনের হুমকি লেস্টার স্ট্রাইকারকে
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতে রিও ফার্দিনান্দ।
মাত্র কয়েক মাসের লড়াই ক্যানসারের সঙ্গে। যখন ধরা পড়ল তখন শেষ স্টেজ। বাঁচানো যায়নি ৩৪ বছরের রেবেকাকে। ২০১৫ সালের মার্চ মাস সেটা। রেবেকার মৃত্যুর পরই নিজেকে ফুটবল থেকে গুটিয়ে নেন ফার্দিনান্দ। যে ফুটবল মাঠে সব সময় সামনে থেকে লড়াই চালিয়েছেন সেই রিও ব্যাক্তিগত জীবনের লড়াইয়ের যে কিছুই জানতেন না। যার ফুটবল জীবনের ঝুলিতে রয়েছে ছ’টি প্রিমিয়ার লিগ, একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। দেশের হয়ে খেলেছেন ৮১টি ম্যাচ। অসাধারণ ফুটবল কেরিয়ার। কিন্তু সিঙ্গল প্যারেন্ট হওয়াটা যে কতটা কঠিন সেটা বোঝেন রেবেকার মৃত্যুর পর। সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্রে তাঁর সেই জীবনের কথা বলেছেন ফার্দিনান্দ। বলতে বলতে বার বার কেঁদে ফেলেছেন। জানিয়েছেন, সেই সময় সারা রাত ধরে মদ্যপান করতেন তিনি। বলেন, ‘‘ছেলে-মেয়েদের দেখার জন্য একজন মহিলা ছিলেন। সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ত তখন মাঝ রাতে উড়ে প্রচুর মদ্যপান করতাম। রেবেকার মৃত্যুর পরের তিন-চার মাসের ঘটনা।’’
যখন স্ত্রী রেবেকা বেঁচে ছিলেন।
তাঁকে এই অন্ধকার জগত থেকে ফিরিয়ে এনেছে সন্তানদের প্রতি দায়বদ্ধতা। আর সেই মানুষগুলো যাঁরা এক সময় এরকম অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। রিও বলেন, ‘‘এ জন্যই হয়তো তোমার পাশের মানুষগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবাই এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারে না। কিন্তু যখন সন্তানদের কথা ভাবলাম তখন সম্বিত ফিরল। আমি অন্যদের দেখতাম, এরকম অনেক বই পড়তাম। যা থেকে মনে হল এ ভাবে ধিরে ধিরে আত্মহত্যা করাটা স্বার্থপড়তা। এখন আমি বুঝেছি সেই মানুষগুলো বা আমার সন্তানরা না থাকলে আমি জীবনে ফিরতে পারতাম না।’’ এখন বাবা-মা দু’য়ের ভূমিকাই পালন করেন রিও ফার্দিনান্দ। ছেলে-মেয়েদের স্কুল থেকে ঘর সব সামলান একা হাতে। স্ত্রী রেবেকা যে সেটাই শিখিয়ে গেলেন ফার্দিকে। দিনের শেষে যখন ঘুমোতে যান জীবনের খালি হয়ে যাওয়া জায়গাটা আবার কাটার মতো বেধে। জীবনসঙ্গিনীই যে ছেড়ে গিয়েছেন। তবু জীবন চলে তাঁর স্মৃতির সঙ্গে করেই। স্ত্রীর স্মৃতি থেকে দুরে যেতে বাড়িও বিক্রি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু স্মৃতি পিছু ছাড়েনি। তাই আজও বলতে গেলে কেঁদে ফেলেন ফুটবল মাঠের লড়াকু সেই ডিফেন্ডার। জীবনের বড় গোলটাই যে হজম করতে হয়েছে।
এই সেই বাড়ি যেখানে স্ত্রীর সঙ্গে থাকতেন রিও। স্ত্রীর মৃত্যুর পর বেঁচে দিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy