Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বোর্ড থেকে সরে গেলেন মনোহর-পুত্র

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বোর্ডের মসনদে বসতে চলেছেন শশাঙ্ক

কর্মকর্তা হিসেবে জীবনে প্রথম ভারতীয় বোর্ডের সভায় যোগ দিতে গিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আবিষ্কার করলেন, মুম্বইয়ের রাস্তা তাঁর জন্য অগাধ বিস্ময় নিয়ে অপেক্ষা করছে!

গৌতম ভট্টাচার্য
মুম্বই শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৫ ০০:৩২
Share: Save:

কর্মকর্তা হিসেবে জীবনে প্রথম ভারতীয় বোর্ডের সভায় যোগ দিতে গিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আবিষ্কার করলেন, মুম্বইয়ের রাস্তা তাঁর জন্য অগাধ বিস্ময় নিয়ে অপেক্ষা করছে!
এয়ারপোর্ট থেকে নরিম্যান পয়েন্ট তীরবর্তী তাঁর হোটেল— সপ্তাহের যে কোনও দিন পাক্কা দু’ঘণ্টা। যতই শনিবার হোক আজ, মুম্বইয়ের ট্র্যাফিক বলে কথা! কোথাও না কোথাও দাঁড় করাবেই। অথচ তাঁর সাদা ইনোভা কিনা হোটেল ঢুকে গেল আধ ঘণ্টায়।
অবিকল অনায়াস যাত্রাপথ তাঁর নাগপুর নিবাসী ইদানীং কালের হিতৈষী দাদার। তিনি শশাঙ্ক মনোহরের এয়ারপোর্ট থেকে কী সময় লেগেছে জানি না। কিন্তু বোর্ড প্রধান হওয়ার দৌড়ে কার্যত ওয়াকওভার পেয়ে গেলেন। এত ক্যাঁচরম্যাচর, হাঙ্গামা, কথায় কথায় মামলা আর রক্তলোলুপ সব কাজকারবার আধুনিক বিসিসিআইয়ে। অথচ শশাঙ্ক মনোহরকে চার বছর পর তা ফের বোর্ড প্রেসিডেন্টের গদিতে বসিয়ে দিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। সরকারি ঘোষণার জন্য রোববার দুপুর দুটোর বোর্ডের বিশেষ সাধারণ সভা পর্যন্ত অপেক্ষা ছাড়া আইনি উপায় নেই। কিন্তু বকলমে শশাঙ্ক প্রেসিডেন্ট হয়েই গেলেন শ্রীনি-যুগের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটিয়ে!
সাড়ে ছয় মাস আগে জগমোহন ডালমিয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সময়ই বলা হচ্ছিল শ্রীনি-জমানার শেষ। কিন্তু তার পরেও দেখা যায় কিছু রক্তবীজ রয়ে গিয়েছে। বোর্ড সচিব পদ ছাড়া বাকিগুলোয় শ্রীনি মনোনীত প্রার্থীই চেন্নাই নির্বাচন জিতেছিলেন। মুম্বইয়ে হঠাৎ করে ডাকা বেসরকারি নির্বাচনে অবশ্য প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্টের দল সমূলে উৎখাত। শশাঙ্ককে প্রার্থী দাঁড় করানোর জন্য অনুমোদন দিয়েছেন তিরিশ জন সদস্যের বাইশ জন। মানে দুই-তৃতীয়াংশ গরিষ্ঠতারও বেশি!
শোনা গেছিল পূর্বাঞ্চল থেকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে শশাঙ্কের নাম প্রস্তাব করবেন সৌরভ। সেই নমিনেশনে দুপুরের মধ্যে সই করা নিয়ে তিনি এত উদগ্রীব ছিলেন যে, নীতা অম্বানীর ব্যক্তিগত বিমান তাঁর জন্য দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও আটলেটিকো ম্যাচের জন্য চেন্নাই যেতে পারেননি। এটাও শোনা গেছিল সৌরভ যদি প্রস্তাবক না হন, তা হলে হবেন অভিষেক ডালমিয়া। সেন্টিমেন্টাল কারণও থাকবে তার পেছনে। বাবার শূন্যস্থানে বসতে যাওয়া প্রার্থীর নাম তিনিই সুপারিশ করবেন এনসিসি থেকে। কার্যত দু’জনের কাউকেই আলাদা করে করতে হল না। পূর্বাঞ্চলের ছ’টা রাজ্যই একযোগে নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্টের নাম সুপারিশ করল।

একেই বলে ভোটের হাওয়া ঘোরা! মাত্র ক’মাস আগেও এই পূর্বাঞ্চল থেকে ত্রিপুরা, এনসিসি আর সিএবি ছাড়া শ্রীনি-বিরোধীর খোঁজ তন্নতন্ন করেও পাওয়া যেত না। আজ সেখানেই কে বা প্রাণ আগে শশাঙ্কের লগে করিবেক দান তারই লগে কাড়াকাড়ি!

শ্রীনি যতই সংখ্যালঘিষ্ঠ হন, শেষ মুহূর্তেও নির্বাচন স্থগিত রাখার একটা আপ্রাণ চেষ্টা করবেন এমন একটা ধারণা হবু প্রেসিডেন্টের শিবিরে ছিল। দুপুরে শরদ পওয়ার সমেত তাঁদের টিম যখন গাড়ওয়াড়ে প্যাভিলিয়নের নতুন লাঞ্চরুমে বসে খাচ্ছে তখন খবর আসে, চেন্নাই আদালতে একটা কিছু ঘটেছে। সুব্রহ্মণম স্বামী কোনও পিটিশন করেছেন। দ্রুত হালকা উদ্বেগ তৈরি হয়। কিছু পরে জানা যায় যে আবেদনে বলা হয়েছে, শশাঙ্ককে প্রেসিডেন্ট বানানোটা স্বার্থের সংঘাত হবে কারণ তাঁকে ইন্টারপোল খুঁজছে। তিনি যে বোর্ড প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ললিত মোদীর নানান চুক্তিতে সই করেছিলেন।

শুনে হতবাক শশাঙ্ক বলতে থাকেন, ‘‘আমি সই করেছি ললিত মোদীর বিলে? আমাকে ইন্টারপোল খুঁজছে? কী সব মিথ্যে কথা! একটা ডকুমেন্টেও আমার কোনও সই নেই। সব সই বরং শ্রীনির। ও তখন বোর্ড সেক্রেটারি ছিল।’’

অজয় শিরকে, পওয়ার এবং মনোহর বেরিয়ে এসে নিজেদের মধ্যে একান্ত আলোচনা সেরে নেন। এই তিন মরাঠাই বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনের ত্রিভুজ। অরুণ জেটলির হাতে ভোটের রিমোট কন্ট্রোল আছে জেনেও বলা যায়, এই মরাঠা ব্রিগেডের সঙ্গে চট করে তিনি কোনও সংঘাতে যাবেন না। তাঁর স্নেহধন্য বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুরকেও যেতে দেবেন না।

শিরকে এই শ্রীনি-নিধনে রামভক্ত হনুমানের ভূমিকা পালন করেছেন। শ্রীনি মন্ত্রিসভায় তিনি ছিলেন কোষাধ্যক্ষ। আচমকা প্রতিবাদী ইস্তফা পেশ করে তিনি শ্রীনির বিরুদ্ধে নৈতিক লড়াই প্রথম শুরু করেন। তার পর দল মজবুত করতে থাকেন শশাঙ্ক আর পওয়ারের মধ্যে দৌত্য জারি রেখে। শনিবার এই ত্রিভুজকে যে মাত্রায় সক্রিয় দেখলাম, তাতে রাজীব শুক্লদের সাবেকি গুরুত্ব আক্রান্ত হতে পারে।

শ্রীনি-সাম্রাজ্য অনেক দিন ধরেই বিক্ষত হচ্ছিল। কিন্তু আচমকা এমন কম্পমান হয়ে আত্মসমর্পণ করে ফেলল কেন?

শনিবারের ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসনিক অলিন্দে যা ব্যাখ্যা শুনলাম তা হল, শ্রীনি ডুবলেন ভুল স্ট্র্যাটেজিতে। ডালমিয়ার মৃত্যুর পর তিনি ঠিক করেছিলেন বিরোধী গোষ্ঠী ভেঙে দেবেন। পওয়ারকে প্রেসিডেন্ট পদের লোভ দেখিয়ে টেনে আনবেন নিজের দিকে। সেই মতো ঢাকঢোল পিটিয়ে তিনি নাগপুরে পওয়ারের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাঁকে প্রেসিডেন্টের পদ অফারও করেন। উদ্দেশ্য ছিল বিরোধী গ্রুপ ভেঙে নিজে ক্ষমতা ধরে রাখা।

কিন্তু এতে ভয়ঙ্কর খেপে যান তাঁর এত দিনের রক্ষাকর্তা জেটলি। জেটলি একটা জিনিসই চান না। তা হল, পওয়ারের ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনে গুরুত্ব বৃদ্ধি। তিনি নাগপুর বৈঠকের সঙ্গে সঙ্গে শশাঙ্ককে প্রস্তাব দেন, তুমি হও। আমি সাপোর্ট করব।

শশাঙ্ক-শিবির শনিবার একাধিক বার হেসে বলছিল, এই জেটলি দু’বছর আগে শশাঙ্ককে ফিরিয়ে শ্রীনিকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন। অতি লোভে শ্রীনি সেই জায়গাটা হারাল।

একেই হয়তো বলে পতনকালে বুদ্ধিনাশ! শশাঙ্ক-গোষ্ঠীর ভাষায় অবশ্য শ্রীনির ঐতিহাসিক ভুল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shashank Manohar BCCI cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE