Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাঁচালেন শুভাশিস, জেতালেন অবিনাশ

ম্যাচটার স্কোর হতেই পারত বেঙ্গালুরুর পক্ষে ৬-১ বা ৫-২! কিন্তু তা হতে দিলেন না ইস্টবেঙ্গলের দুই বঙ্গসন্তানবজবজের অবিনাশ রুইদাস আর বাগুইআটির শুভাশিস রায় চৌধুরী। মিডিও অবিনাশ জেতার গোলটা করলেন। কিপার শুভাশিস বাঁচালেন তিনটে নিশ্চিত গোল।

অবিনাশকে নিয়ে উচ্ছ্বাস। বুধবার যুবভারতীতে।

অবিনাশকে নিয়ে উচ্ছ্বাস। বুধবার যুবভারতীতে।

রতন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:৫৩
Share: Save:

ইস্টবেঙ্গল-১ (অবিনাশ)

বেঙ্গালুরু এফসি-০

ম্যাচটার স্কোর হতেই পারত বেঙ্গালুরুর পক্ষে ৬-১ বা ৫-২!

কিন্তু তা হতে দিলেন না ইস্টবেঙ্গলের দুই বঙ্গসন্তানবজবজের অবিনাশ রুইদাস আর বাগুইআটির শুভাশিস রায় চৌধুরী। মিডিও অবিনাশ জেতার গোলটা করলেন। কিপার শুভাশিস বাঁচালেন তিনটে নিশ্চিত গোল।

বেঙ্গালুরুর অশ্বমেধের ঘোড়া ভারত-জয় করেও বারবার পুড়ছে লাল-হলুদ মশালের আগুনে। ষোলো মাস আগে ক্লাবের জন্মের পর থেকেই সেই ট্র‌্যাডিশন চলেছে। যত ভালই খেলুক সদ্য ফেড কাপ চ্যাম্পিয়নরা, ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে তাদের জয় অধরাই থেকে যাচ্ছে কোনও এক ‘অভিশাপ’-এ!

যেমন এ দিন। সব কিছু করেও জিততে পারল না অ্যাশলে ওয়েস্টউডের দল। ক্রসপিস রুখল তাদের একটা গোল। শন রুনি, রবিন সিংহেরা গোল-মুখে পৌঁছেও অবিশ্বাস্য সব মিস করলেন। যে ক’টা মারলেন সেগুলো রুখে দিলেন শুভাশিস। আর্মান্দো কোলাসোর কপাল সামান্য হলেও খুলে গেল সে জন্যই। কিন্তু তাতেও যে ঢাকা যাচ্ছে না টিমের ফাঁকফোকর। জেতার দিনেও যুবভারতীর গ্যালারিতে সমর্থকদের প্রশ্ন, টিমটা এখনও এত অগোছাল কেন? ফিটনেসের কেন এত অভাব? মাঝমাঠ সংগঠন কেন এত জঘন্য?

ডুডু চোটের জন্য মাঠের বাইরে। র‌্যান্টি পেনাল্টিতে ছাড়া গোল করতে পারছেন না। এই আবহে কলকাতা লিগের আবিষ্কার অবিনাশের উত্থান হল আরও একবার। বছরের একমাত্র ট্রফি ইস্টবেঙ্গল জেতার পর চর্মকার পরিবারের ছেলেকে নিয়ে প্রচুর হইচই হয়েছিল। এ দিন তাঁকে যখন শেষ দিকে তুলে নেওয়া হল, তখন সেন্টার লাইনে এসে তাঁর পিঠ চাপড়ে দিলেন লাল-হলুদের গোয়ান কোচ। সম্ভবত তীব্র চাপের মধ্যে তাঁকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য। আর ম্যাচের পর আর্মান্দো বললেন, “ম্যাচটা জেতা আমাদের কাছে খুব জরুরি ছিল। তাই কী রকম খেললাম তাতে কিছু যায়-আসে না। আসল হল তিন পয়েন্ট। এতে টিমের মনোবল বাড়বে।”

মাসখানেক আগে আইএসএল শেষ হয়ে গিয়েছে। এখনও যুবভারতীর টিকিট কাউন্টারে ঝুলছে আটলেটিকো দে কলকাতার বোর্ড। ইতিউতি রয়ে গিয়েছে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন দলের ব্যানার, হোর্ডিং। কলকাতার ক্লাবের ইতিহাসে সম্ভবত প্রথমবার কোনও ম্যাচের টিকিট শুধুমাত্র খেলার দিনই বিক্রি হল এ দিন! তাও টিকিটের যা দাম করা হয়েছে তাতে লোকজন আর হয়তো বেশি আসবেন না। চূড়ান্ত অপেশাদারিত্বে মোড়া আই লিগ ধার করেছে নীতা অম্বানির টুর্নামেন্টের নিয়মকানুন। কিন্তু নিজেদের বদলাতে পারেনি। ফলে মাঠে দর্শক আসছেন না। গোয়ার মাঠ ফাঁকা, ফুটবল-মক্কা কলকাতাতেও বিশাল স্টেডিয়াম খাঁ-খাঁ করছে। বিয়ে বাড়ির চেয়ার তিনশো টাকার টিকিটে। ভাবা যায়!

কিন্তু খেলাটা? সেখানেও যেন চূড়ান্ত দৈন্যতা। আইএসএলে বেশি বিদেশি ফুটবলার খেলায় ম্যাচে গতি থাকত। আই লিগে সেটাও উধাও। এ দিনের দুই টিমে ছিলেন দু’জন সেরা স্বদেশি ও বিদেশি স্ট্রাইকার— সুনীল ছেত্রী আর র‌্যান্টি মার্টিন্স। ভাবা গিয়েছিল, আই লিগের হাইপ্রোফাইল ম্যাচে দেখা যাবে গোলের রংমশাল। কিন্তু কোথায় কী? দেড় হাজার দর্শকের বিবর্ণ হাজিরার মতোই ফ্যাকাসে চেহারা দু’দলের খেলাতেও।

দুই কোচের স্ট্র্যাটেজিতেও আগে বাঁচো রণনীতি। ম্যাচের আগের দিন ‘তিন পয়েন্ট চাই’-এর প্ল্যাকার্ড উড়িয়ে মাঠে নেমে ‘নিজে বাঁচলে...নাম’-এর অদৃশ্য ব্যানার নিয়ে ঘোরা! মাঝমাঠে কোনও প্লেমেকার নেই, যিনি স্ট্রাইকারকে গোলের বল জোগাবেন। দুই টিমেই জোড়া ডিফেন্সিভ স্ক্রিন। খেলার জৌলুস যত কম, কোচেদের আস্ফালন ততই বেশি। বেঙ্গালুরুর ব্রিটিশ কোচের ঝামেলা বাধানোর অভ্যাস প্রায় সবার জানা। সাসপেন্ডও হয়েছেন অতীতে। এ দিনও চতুর্থ রেফারির সঙ্গে তাঁকে কয়েক বার তর্কাতর্কি করতে দেখা গেল। কিন্তু কোচের ঝাঁঝটা রুনি-জোসুয়াদের বিপক্ষ গোলের সামনে পৌঁছে দেখা গেল না। খেলা শেষ অবশ্য বেঙ্গালুরু কোচ বলে গেলেন, “লম্বা লিগে এই হারে কিছু যায় আসে না। আগের বার হেরেও কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।”

৪-২-৩-১। ম্যারাথন লিগে ঘরের ম্যাচে এটাই ছিল ইস্টবেঙ্গলের স্ট্র্যাটেজি। কিন্তু তিন বিদেশির মধ্যে নজর কাড়লেন শুধু মিলান সুসাক। র‌্যান্টি মাঠে সঠিক জায়গা খুঁজতেই গলদঘর্ম। লিও বার্তোসের কথা না বলাই ভাল। শুধুই স্কোয়ার পাস আর স্কোয়ার পাস! নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপারকে যত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরত পাঠানো যায়, হয়তো ততই মঙ্গল ইস্টবেঙ্গলের। সুসাকের পাশে দীপক মণ্ডলের খেলাও নজরে পড়ল। পুরনো চাল যে এখনও ভাতে বাড়ে দেখালেন নোয়ামুণ্ডির ছেলে। ওভারল্যাপে গিয়ে উইং থেকে পাঠানো তাঁর ক্রসগুলো মাঝেমধ্যে কাঁপুনি ধরাচ্ছিল বেঙ্গালুরু বক্সে। গোলটাও দীপকের ক্রস থেকেই। র‌্যান্টি বল থামাতেই অবিনাশ বিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে গোলটা করেন। ব্যাস, ওইটুকুই। দ্বিতীয়ার্ধে বেঙ্গালুরু এমন ভাবে চেপে ধরেছিল, দশজনে রক্ষণ সামলাতে হল ইস্টবেঙ্গলকে। তখনই সুনীল বারদু’য়েক গোলের কাছে পৌঁছন। ভারত অধিনায়ককে ওই সময়ই যা সামান্য ঝকঝকে লাগল। র‌্যান্টির সেটুকুও নেই। নাইজিরিয়ান গোলমেশিনের যে কী হল!

ম্যাচটা শেষ হওয়ার পর মনে হচ্ছিল, পুরনো দিনের আনন্দবাজারের সেই হেডিংটাই বেছে নেওয়া যেতে পারে এ দিনের রিপোর্টিংয়ে— ‘খেলল বেঙ্গালুরু, জিতল ইস্টবেঙ্গল’!

ইস্টবেঙ্গল: শুভাশিস, দীপক, সুসাক, অর্ণব, সৌমিক, খাবরা, মেহতাব, অবিনাশ (সুখবিন্দর), বার্তোস (রফিক), বলজিৎ, র‌্যান্টি।

ছবি: উৎপল সরকার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ratan chakraborty east bengal fed cup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE