Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাগান প্র্যাক্টিসের ভিডিও তুলে রাখল করিমের ‘গুপ্তচর’

বালেওয়াড়ি স্টেডিয়ামের গেট দিয়ে সকালে সনি নর্ডিরা যখন ঢুকছেন, পাশ দিয়ে দ্রুত সাঁ করে বেরিয়ে গেল পুণের টিম বাস। সামনের সিটে বসে থাকা করিম বেঞ্চারিফা ঘাড় ঘুরিয়ে বাসের জানলা দিয়ে একবার দেখে নিলেন তাঁর পুরনো টিমকে। রাতে ডিনার সেরে হোটেলে ভিডিও অ্যানালিস্টের তৈরি করে আনা বাগানের শেষ পাঁচটা ম্যাচের ক্লিপিংস দেখলেন আরাতা-সুয়োকারা।

প্রাক্তন কোচকে পাল্টা দিতে তৈরি বাগানের বর্তমান তারকা সনি নর্ডি।

প্রাক্তন কোচকে পাল্টা দিতে তৈরি বাগানের বর্তমান তারকা সনি নর্ডি।

রতন চক্রবর্তী
পুণে শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৫
Share: Save:

বালেওয়াড়ি স্টেডিয়ামের গেট দিয়ে সকালে সনি নর্ডিরা যখন ঢুকছেন, পাশ দিয়ে দ্রুত সাঁ করে বেরিয়ে গেল পুণের টিম বাস।

সামনের সিটে বসে থাকা করিম বেঞ্চারিফা ঘাড় ঘুরিয়ে বাসের জানলা দিয়ে একবার দেখে নিলেন তাঁর পুরনো টিমকে।
রাতে ডিনার সেরে হোটেলে ভিডিও অ্যানালিস্টের তৈরি করে আনা বাগানের শেষ পাঁচটা ম্যাচের ক্লিপিংস দেখলেন আরাতা-সুয়োকারা।
সামনে বাগান পড়লেই করিমের বাড়তি অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ হয় সেটা ভারতীয় ফুটবলে এখন প্রায় সবার জানা। কিন্তু করিমের দলের বিরুদ্ধে সঞ্জয় সেনেরও যে বাড়তি তাগিদ তৈরি হয় সেটা কে জানত?
‘‘লোকটাকে আমি একদম পছন্দ করি না। কোনও নীতি-টিতির বালাই নেই। একটা টিমকে কোচিং করতে করতে অন্য টিমের কোচ হওয়ার কথা বলে। শুনেছি, খেলতে নামার আগে বিপক্ষ দলের ফুটবলারদের ফোন করে ডিসটার্বও করে,’’ পুণের মাটিতে দাঁড়িয়েও সাফ বলে দিলেন মোহনবাগান কোচ।
পায়ে বরফ-ব্যান্ডেজ লাগিয়ে গ্যালারিতে বসে থাকা পিয়ের বোয়াও করিমের অতীত ব্যবহারে অবাক। ‘‘লোকটা কিংস কাপে জেতার পর আর ফে়ড কাপে আমাদের সঙ্গে ড্র করে মাঠেই এমন লাফাচ্ছিল, কী বলব! আনন্দে আমাকেই একবার জড়িয়ে ধরল। কিন্ত কলকাতায় আই লিগে যখন ওকে হারালাম তখন এমন গোমড়া মুখে পাশ দিয়ে চলে গেল যেন আমাকে চেনেই না! আরে সব ম্যাচ কি সবাই জেতে নাকি?’’
বোয়ার শেষের লাইনটা শুনে দু’কানে হাত চাপা দেন সনি। ‘‘ফ্রেন্ড, তোমার কথা মানছি বটে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে কাল কিন্তু আমাদের জেতা ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা নেই।’’ চোটের জন্য বোয়ার খেলার সম্ভাবনা খুব কম। সতর্ক সঞ্জয় বাকি ছয় ম্যাচের কথা ভেবে ক্যামেরুন স্ট্রাইকারকে শনিবার খেলাতে চাইছেন না। ‘‘ভাবছি কাল খেলাতে গিয়ে ওর চোটটা আরও বেড়ে গেলে পরে বেশি সমস্যা হবে।’’ টিম বাসে ওঠার সময় বলে গেলেন বাগান কোচ।

পয়েন্ট টেবলে শীর্ষে থাকা বাগানের আই লিগের শেষ ল্যাপ শুরু হচ্ছে শনিবারই। যা পরিস্থিতি তাতে পুণেকে হারালে খেতাবের দরজায় পৌঁছনোর বেশ কয়েকটা সিঁড়ি এক লাফে পেরিয়ে যেতে পারবে পাঁচ বছর ট্রফিহীন ক্লাব।

উল্টো দিকে আবার খেতাব দৌড় থেকে এ বারের মতো ছিটকে যাওয়া করিম জানেন, তাঁর কাজটা এখন পরের যাত্রা ভঙ্গ করা। আর সেই ‘পর’টা যদি হয় মোহনবাগান, তা হলে তো কথাই নেই। কিন্তু চতুর মরক্কান এই ভাবনা ম্যাচের আগে যেন সামনে আনতে চাইছেন না।

‘‘আমার তো সব জুনিয়র ফুটবলার। চ্যাম্পিয়ন হওয়ারও চাপ নেই। মোহনবাগান দেশের সেরা দল। এত ভাল যে, আমার সময়ের নিয়মিত খেলা পঙ্কজ মৌলা-রাম মালিকরা টিমে জায়গাই পাচ্ছে না।’’ করিমের কথা শুনে মনে হবে ভিজে মুড়ি যেন। কিন্তু তাঁকে যাঁরা চেনে, তারাই জানে এটা টিপিক্যাল করিম কৌশল। বিপক্ষকে আত্মতুষ্ট করে রাখার বরাবরের চেষ্টা।

তবে করিম যদি বুনো ওল হন, তা হলে সঞ্জয়ও বাঘা তেঁতুল। শুক্রবার দুপুরের খাওয়ার পর টিম মিটিংয়ে সেটা নাকি মালুমও হয়েছে। টিম সূত্রের এমনটাই খবর। সামনে বোর্ড ঝুলিয়ে স্ট্র্যাটেজি বোঝানোর সময় বাগান কোচ তাঁর ছেলেদের বলেছেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে পুণে থেকেই শুরু করতে হবে। তা হলে এর পর আর চারটেতে জিতলেই চলবে।’’

কলকাতায় আনন্দবাজারের আড্ডায় বলে এসেছিলেন, ৪৪ পয়েন্ট পেলেই কেল্লাফতে। এখানে তার থেকে সরে এসে বললেন, ‘‘এখন যা মনে হচ্ছে, ৪০-৪১-য়েই চ্যাম্পিয়শিপ ফয়সলা হয়ে যাবে।’’

যার জন্যই হয়তো কাল টিমে কয়েকটা পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন সঞ্জয়। চোটে কাবু বোয়া না খেললে সাপোর্টিং স্ট্রাইকারে আসবেন কাতসুমি। বলবন্ত সিংহের লালকার্ড। তাই ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে একমাত্র স্ট্রাইকার থাকবেন জেজে। মাঝমাঠে জাপানি মিডিওর ছেড়ে যাওয়া জায়গায় নামবেন মণীশ ভার্গব। স্টপারে অনোয়ারকে নামানো হতে পারে পুণের বড় চেহারার যুগোশ্লাভ স্ট্রাইকার ডার্কো নিকাকে আটকাতে। ছোট্টখাট্টো কিংশুক দেবনাথ যা পারবেন না বলে মনে করছেন বাগান কোচ।

মহারাষ্ট্র সফরের প্রথম ম্যাচে চাপমুক্ত থাকতে চাওয়া বাগান অবশ্য অন্য সুবিধে পাচ্ছে। পুণের সুয়োকা বাদে বাকি তিন বিদেশি পুরোপুরি সুস্থ নন। ব্রাজিলিয়ান লুসিয়ানোর চোট এতটাই গুরুতর যে, এ দিন প্র্যাকটিস করেননি। ফলে সনি-কাতসুমিরা ফাটল ধরানোর জন্য সামনে পুরো স্বদেশি ডিফেন্স পাবেন।

বেঙ্গালুরু আর ইস্টবেঙ্গলের কাছে হারার পর পুণে এফসি-তে যথেষ্ট চাপে আছেন করিম। পরের মরসুমে তাঁর চেয়ার টলমল বলেই এখানে খবর। তাই বাগানের জন্য আরও অন্য রকমের অঙ্ক কষছেন পুণে কোচ। আলট্রা ডিফেন্সিভ ফর্মেশন তাঁর পথ। নিজে জিততে না পারি, বিপক্ষকেও জিততে দেব না—মন্ত্রটা তাঁর কথায় বারবার ধরা পড়ছে।

ছয় বছর আগে শেষ বার আই লিগে ট্রফির কাছাকাছি পৌঁছেছিল বাগান। ব্যা-ভা জুটি নিয়েও অবশ্য শেষমেশ রানার্স হয়েছিলেন করিম। প্রসঙ্গ তুললে এড়িয়ে যেতে চাইলেন তিনি। ‘‘ওসব মনে রাখিনি। তবে এটা বলছি এ বার চ্যাম্পিয়ন হতে পারে মোহনবাগান, বেঙ্গালুরু আর ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে কেউ। ওদের যা বড় বড় বাজেট।’’

পুণেতে এখন সকাল সাতটার পর প্রচণ্ড গরম। ভোরে অনুশীলন করিয়ে চলে গেল করিম ব্রিগেড। ন’টা নাগাদ যখন দেবজিৎ-প্রীতমরা নামলেন তখনই চাঁদিফাটা রোদ্দুর। ফেডারেশনের নিয়ম, প্রথম পনেরো মিনিট অনুশীলনের ছবি তোলা যাবে। কিন্তু ফাঁকা গ্যালারির একটা কোণে দেখলাম, অত চড়া রোদেও পুণের টিমের জার্সি গায়ে এক জন টানা ভিডিও তুলে যাচ্ছেন। কেউ বাধা দিচ্ছে না। লোকটা কে? করিমের ‘গুপ্তচর’!

বাগান ছারখার করতে করিমের মতো প্রাক্তন সবুজ-মেরুন কোচ যে তাঁর কোনও অস্ত্র প্রয়োগই বাদ রাখবেন না, সেটাই তো স্বাভাবিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE