এএফসি কাপের ফাইনালে উঠে সুনীলের বেঙ্গালুরু এফসি।
জোহর দারুল তা’জিম-১ (শফিক)
বেঙ্গালুরু এফসি-৩ (সুনীল-২, জুয়ান)
বাহরিনের রেফারি ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে টুইটারে ভেসে উঠল জাতীয় কোচ স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের প্রতিক্রিয়া— ‘দুর্দান্ত রেজাল্ট। বেঙ্গালুরু এফসি-কে শুভেচ্ছা। ছেলেদের জন্য গর্বিত। ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে ইতিহাস তৈরি হল!’
কী ইতিহাস?
প্রথম ভারতীয় ক্লাব হিসেবে বেঙ্গালুরু এফসি বুধবার এএফসি কাপ ফাইনালে গেল। কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে সুনীল ছেত্রীরা ৩-১ (দু’পর্ব মিলিয়ে ৪-২) হারাল মালয়েশিয়ার জোহর দারুল তা’জিমকে। তা-ও আবার এ দিন শুরুতেই ০-১ পিছিয়ে গিয়ে। জোড়া গোল করে ম্যাচের নায়ক সুনীল-ই।
সুনীলের স্মরণীয় ম্যাচ
• ২০০৮ এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ ফাইনাল
ভারত ৪-তাজিকিস্তান ১ (সুনীল হ্যাটট্রিক)
• ২০১০ ফ্রেন্ডলি
ভারত ৩-ভিয়েতনাম ১ (সুনীল হ্যাটট্রিক)
• ২০১১ ফ্রেন্ডলি
ভারত ২-১ কাতার ১(সুনীল ১ গোল)
• ২০১২ নেহরু কাপ ফাইনাল
ভারত ২-ক্যামেরুন বি ২ (সুনীল ১ গোল)
• ২০১৪-২০১৫ ফেডারেশন কাপ ফাইনাল
বেঙ্গালুরু ২-ডেম্পো ১ (সুনীল ১ গোল)
ভারতীয় ফুটবলে এর আগে এএফসি কাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত এগোনোর নজির রয়েছে ইস্টবেঙ্গল ও ডেম্পোর। বুধবার ঘরের মাঠে বাংলা ও গোয়ার কৃতিত্বকে পিছনে ফেলে দিল মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সি ক্লাব বেঙ্গালুরু এফসি। সেই সঙ্গে এগিয়ে দিল ভারতীয় ফুটবলকে। বেঙ্গালুরুর ঝুলিতে এখন দু’টো আই লিগ খেতাব, একটা ফেড কাপের পাশাপাশি বুধবারের কীর্তিও। পাঁচ নভেম্বর ফাইনালে ইরাকের ক্লাবকে হারাতে পারলে আরও বড় নজির গড়বেন তাঁরা এই রেকর্ড গড়ার আসল কারিগর সুনীল ম্যাচ শেষে আনন্দের জোয়ারে ভাসলেও কৃতিত্ব প্রকৃত টিমম্যানের মতোই দিচ্ছেন দলগত খেলাকে। বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে সুনীল বললেন, ‘‘এই সাফল্য কারও একার নয়। আমাদের গোটা দলের। আর সেটাই জয়ের একমাত্র কারণ। মাঠে নামার আগে কোচ যা বলে দিয়েছিলেন সেগুলো আজ ঠিক মতো করা যাচ্ছিল শুরু থেকেই। তাই পিছিয়ে গিয়েও হতাশ হয়ে পড়িনি।’’ বেঙ্গালুরুর স্প্যানিশ কোচ অ্যালবার্ট রোকাও খুশি সুনীলের পারফরম্যান্সে।
কেরিয়ারের গোড়ার দিকে মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলে খেলে যাওয়া দিল্লির ছেলের এ দিনের দ্বিতীয় গোলটা কি জীবনের সেরা? হাসতে হাসতে সুনীলের উত্তর, ‘‘ওই রকম গোলের চেষ্টা তো রোজ করি। আজ কাজে লেগে গেল।’’
প্রথম গোলে এল যে হেডে। ছবি: পিটিআই।
বুধবার ম্যাচ গোলশূন্য ড্র করলেও ফাইনালে চলে যেত বেঙ্গালুরু। কিন্তু এগারো মিনিটেই শফিক রহিমের গোলে পিছিয়ে পড়ে ভারতীয় ক্লাব। আর তার পরেই কান্তিরাভায় সুনীল-ম্যাজিক! আধ ঘণ্টার মধ্যে ইউজেনসিন লিংডোর কর্নার থেকে হেডে সমতা ফেরান সুনীল। বিরতিতে ফল ছিল ১-১। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের তীব্রতা আরও বাড়ায় বেঙ্গালুরু। মিনিট কুড়ির মধ্যে তার সুফলও পায় নীল জার্সিরা। ৬৭ মিনিটে বক্সের মাথায় বল ধরে অসাধারণ হাফ টার্নে নিজের দ্বিতীয় গোল করে দলকে ২-১ করে এগিয়ে দেন সুনীল। আট মিনিট পরে বেঙ্গালুরুর ব্যবধান বাড়ান স্প্যানিশ ডিফেন্ডার জুয়ান আন্তোনিও।
বেঙ্গালুরুর এশীয় পর্যায়ের অন্যতম বড় টুর্নামেন্টে ফাইনালে ওঠার সাফল্যে আনন্দের শরিক কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। হর্ষ ভোগলে থেকে অভিষেক বচ্চন— কে নেই! সমান উত্তেজিত ব্যাডমিন্টনের অশ্বিনী পোনাপ্পা থেকে ক্রিকেটের লোকেশ রাহুলরাও। প্রথম জন মাঠে গিয়ে ম্যাচ দেখেন এ দিন। দ্বিতীয় জন বেঙ্গালুরুর বাড়ির টিভির সামনে গলা ফাটিয়েছেন। টুইট করে দু’জনেই জানিয়েছেন সে কথা।
সেয়ানে-সেয়ানে
ভাইচুং ভুটিয়া
• কেরিয়ারে গোল ২৭৯
• ভারতের হয়ে ৪২
• আই লিগ ইতিহাসে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা ৮৯ গোল
সুনীল ছেত্রী
• কেরিয়ারে গোল ২২৭
• ভারতের হয়ে ৫৩
• আই লিগের ইতিহাসে ভারতীয়দের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ৮৬ গোল
ইস্টবেঙ্গল অ্যাকাডেমির চিফ কোচ রঞ্জন চৌধুরী বললেন, ‘‘সকালেই নয়-নয় করে বেঙ্গালুরুর সাত ফুটবলার ফোন করে আশীর্বাদ চেয়েছিল। অ্যাকাডেমি স্তরে ওদের অনেককে কোচিং করিয়েছি। ভারতীয় ফুটবলকে আজ অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গেল আমার ছাত্ররা।’’ এ দিন রাতেই শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন মোহনবাগান কর্তারাও।
ভারতীয় ফুটবলে শতাব্দী প্রাচীন দুই ‘বিগ প্লেয়ার্স’ আপাতত শুভেচ্ছা জানিয়েই শরিক সাড়ে তিন বছরের ক্লাবের সাফল্যে!
তথ্য: হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy