Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাঁতারের সোনার মেয়ে সৌবৃত্তি

বয়সের তুলনায় লম্বা মেয়েটা ক্লাসে ঢুকলেই ফিসফিস শুরু হত। তার আসল বয়স নিয়ে নানা জল্পনা চলত। তখন মন খারাপ হলেও সেই মেয়ে পরে বুঝেছিল, লম্বা হওয়াই তার অন্যতম ‘প্লাস পয়েন্ট’। অষ্টম শ্রেণিতে, মাত্র ১৪ বছর বয়সেই সৌবৃত্তি মণ্ডলের ঝুলিতে সাঁতারের চার-চারটি রাজ্য রেকর্ড। ২০১৫ সালের জুনিয়র স্তরের জাতীয় এবং রাজ্য প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মোট সাতটি সোনা তার দখলে।

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৫ ০৪:২৯
Share: Save:

বয়সের তুলনায় লম্বা মেয়েটা ক্লাসে ঢুকলেই ফিসফিস শুরু হত। তার আসল বয়স নিয়ে নানা জল্পনা চলত। তখন মন খারাপ হলেও সেই মেয়ে পরে বুঝেছিল, লম্বা হওয়াই তার অন্যতম ‘প্লাস পয়েন্ট’। অষ্টম শ্রেণিতে, মাত্র ১৪ বছর বয়সেই সৌবৃত্তি মণ্ডলের ঝুলিতে সাঁতারের চার-চারটি রাজ্য রেকর্ড। ২০১৫ সালের জুনিয়র স্তরের জাতীয় এবং রাজ্য প্রতিযোগিতা মিলিয়ে মোট সাতটি সোনা তার দখলে।

সালকিয়ার মেয়ে সৌবৃত্তি ‘বিস্ময় বালিকা’, বলছেন রাজ্য সাঁতার সংস্থার কর্তারাও। ওই সংস্থার কর্তা রামানুজ মুখোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘সৌবৃত্তি ব্যাক স্ট্রোকে অসাধারণ। জাতীয় প্রতিযোগিতায় কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, গুজরাতকে হারিয়ে সোনা জেতা মুখের কথা নয়। মনোসংযোগে ব্যাঘাত না ঘটলে বাংলাকে আরও অনেক পদক এনে দেবে।’’ তাঁর মতে, বয়সের তুলনায় লম্বা হওয়া সাঁতারুদের কিছুটা এগিয়ে দেয়। সৌবৃত্তির সেই সুবিধা রয়েছে।

সৌবৃত্তির মা সীমা মণ্ডল প্রাক্তন জাতীয় ভলিবল খেলোয়াড়। ছ’বছর বয়সে তিনি মেয়েকে সালকিয়া সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনে সাঁতার শেখাতে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। ওই সংস্থায় খুদেদের সাঁতার শেখান সন্তোষ গুপ্ত। সন্তোষবাবু মেয়েটির প্রতিভা দেখে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সৌবৃত্তিকে ‘আপার ডিভিশনে’ বিশ্বজিৎ ঘোষের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে পাঠিয়ে দেন। বিশ্বজিৎবাবুই এখন সৌবৃত্তির কোচ। তিনি বলেন, ‘‘কখনও অনুশীলনে ফাঁকি দেয় না সৌবৃত্তি। ওর মধ্যে জেতার খিদে রয়েছে।’’ সৌবৃত্তির নিজের স্বপ্ন, দেশের হয়ে অলিম্পিক ও এশিয়াডে খেলা। তার কথায়, ‘‘জলে নামলে আমার লক্ষ্য থাকে সবথেকে কম সময়ে পুরো ল্যাপ শেষ করা।’’

সৌবৃত্তির ক্লাব সালকিয়া সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন দীর্ঘ দিন ধরেই বাংলার সাঁতার দলের ‘সাপ্লাই লাইন’ হিসেবে কাজ করছে। এই সংস্থার সম্পাদক পীযূষকান্তি দে বলছেন, ‘‘সম্প্রতি বাংলার ওয়াটার পোলো দল আমাদের সংস্থার অফিসে শিবির করেছিল। প্রতি বছরেই এ রকম শিবির হয়।’’ একই সঙ্গে পীযূষকান্তিবাবুর আক্ষেপ, বাংলায় প্রতিভা থাকলেও অন্য রাজ্যের চাইতে পরিকাঠামোয় পিছিয়ে। তবে সেই অভাবকে সঙ্গী করেই জুলাই মাসে পুণেতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাব জুনিয়র ও জুনিয়র সাঁতারে ৫টি সোনা, ৬টি রুপো ও ৪টি ব্রোঞ্জ এসেছে বাংলার ঝুলিতে। সোনাজয়ীদের মধ্যে সৌবৃত্তি (২টি) ছাড়াও রয়েছে হাওড়ার বালির মেয়ে সায়নী ঘোষ, উত্তর ২৫ পরগনার অম্বালিকা বসাক, কলকাতার অনুরাগ মিত্র। ওয়াটার পোলোর ছেলে ও মেয়ে দু’টি বিভাগেই সোনা এসেছে।

এক নজরে সাফল্য

২০১৪ সালে অনূর্ধ্ব ১৪ জাতীয় সাঁতারে ২০০ মিটারে ব্রোঞ্জ

২০১৫ ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় স্কুল গেমসে ৩টি রুপো

২০১৫ জুনে রাজ্য জুনিয়র সাঁতারে পাঁচটি সোনা, চারটি রাজ্য রেকর্ড

২০১৫ জুলাইতে জাতীয় জুনিয়র সাঁতারে ২টি সোনা

নজর কেড়েছে মহিলা ওয়াটার পোলো দলের অধিনায়ক হুগলির নালিকুলের পিয়ালি সাঁতরা। ডাইভিং বিভাগে এসেছে ১টি সোনা, ২টি রুপো ও ২টি ব্রোঞ্জ। মেদিনীপুরের আট বছর বয়সি সৃজিতা ঘোষ এ বারের রাজ্য সাঁতারে তিনটি পদক পেয়েছে। মেদিনীপুর ডিএভি স্কুলের এই ছাত্রী এখনও জেলা ও রাজ্য স্তর মিলিয়ে ১৩টি পদক জিতেছে।

রাজ্য সাঁতার সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘বাংলার ছেলেমেয়েদের সাঁতারের ব্যাকরণ শিখতে বেশি সময় লাগে না। কিন্তু তার পর অনেকেই হারিয়ে যায়। তার অন্যতম কারণ গোটা রাজ্যে আধুনিক সুইমিং পুলের সংখ্যা হাতেগোনা।’’ তবে তাঁর দাবি, রাজ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলার সাঁতার প্রশিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়। কারণ তাঁরা না থাকলে তৃণমূল স্তরে প্রতিভাই চিহ্নিত হবে না।

‘কোনি’ সিনেমার ক্ষিদ্দারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন জেলায় জেলায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE