মোহনবাগান-টালিগঞ্জের ভেস্তে যাওয়া ম্যাচ রিপ্লে হবে কি না, তা নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এর প্রভাবে ডার্বি হবে না, এ কথা মানতে নারাজ আইএফএ।
ভেস্তে যাওয়া ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব যাঁর হাতে, সেই আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় মঙ্গলবার জোরের সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘৭ সেপ্টেম্বরই ডার্বি হচ্ছে। ডার্বির তারিখ বদলের কোনও সম্ভাবনা নেই।’’ কিন্তু এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি যা, তাতে ডার্বি জট খোলা বেশ কঠিন।
সোমবার ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার দিন গভীর রাতে বাগান সচিব অঞ্জন মিত্র যে চিঠি আইএফএ-কে দিয়েছেন তাতে তিনি লিখেছেন, ‘‘রেফারি ‘অফসাইড’ বলে গোল বাতিল করার পরও আমরা কিন্তু খেলতে চেয়েছিলাম। রেফারিই আইনশৃঙ্খলার কারণ দেখিয়ে ম্যাচ বাতিল করে চলে যান।’’ পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, ‘‘টিভিতে ধারাভাষ্য দিতে আসা গৌতম সরকার, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, মানস ভট্টাচার্যের বক্তব্য শুনুন। ওঁরা তো তিন জনেই বলেছেন, গোলের সময় কেউ অফসাইড ছিল না। রেফারির সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।’’ যা থেকে পরিষ্কার, আইনশৃঙ্খলা এবং প্রাক্তন ফুটবলারদের মতামতকে ঢাল করে বাগান ম্যাচ রিপ্লের মঞ্চ তৈরি করতে চাইছে। তাতে অবশ্য ঘুরিয়ে সমর্থন জানিয়ে দিয়েছেন আইএফএ সচিব। তিনি বলে দিয়েছেন, ‘‘কলকাতা লিগের নিয়মানুযায়ী আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারটা ক্লাবের এক্তিয়ারে পড়ে না।’’ তিনি এ দিন ইঙ্গিত দিয়েছেন, ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্ট দেখে বৃহস্পতিবারের মধ্যেই লিগ সাব কমিটির মিটিং ডাকবেন। ‘‘আমরা সে ক্ষেত্রে এক দিনের মধ্যেই ভেস্তে যাওয়া ম্যাচ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি,’’ বলে দিয়েছেন উৎপলবাবু।
মোহনবাগান যখন অফসাইডে গোল বাতিলকে সামনে রেখে ম্যাচ রিপ্লের দাবি জানাচ্ছে, তখন আবার তার বিরোধিতায় সোচ্চার ওই ম্যাচের দায়িত্বে থাকা ম্যাচ কমিশনার এবং রেফারিরা। ই-মেলে মঙ্গলবার যে রিপোর্ট তাঁরা আইএফএ-তে পাঠিয়েছেন তাতে লেখা রয়েছে, তিনটি গোলের সব ক’টিই অফসাইড ছিল। রেফারি সংস্থার সচিব চিত্তরঞ্জন দাস মজুমদার বলেছেন, ‘‘আমরা প্রত্যেকটা গোলের ভিডিও ফুটেজ বারবার দেখেছি। তাতে রেফারির সিদ্ধান্তই সঠিক ছিল। কোনওটাই গোল ছিল না। সেটাই ম্যাচ কমিশনার এবং রেফারিরা রিপোর্টে জানিয়ে দিয়েছেন।’’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তা হলে ম্যাচ ভেস্তে গেল কেন? সিআরএ সচিব বলেন, ‘‘মাঠে লোক ঢুকে পড়েছিল। খেলার মতো পরিস্থিতি ছিল না।’’ তা হলে কি ম্যাচ রিপ্লে হবে? চিত্তবাবুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘আইএফএ যদি ম্যাচ রিপ্লে দেয় তা হলে আমাদের খেলাতে আপত্তি থাকবে কেন?’’ কিন্তু রিপ্লে হলে টালিগঞ্জ কি খেলবে? টালিগঞ্জ কর্তা শুভঙ্কর ঘোষদস্তিদার বলেন, ‘‘আমরা আইএফএ-কে চিঠি দিচ্ছি, রিপ্লে ম্যাচ খেলব না।’’
বাগান সচিব তাঁর চিঠিতে ‘খেলতে চেয়েছিলাম’ বলে লিখলেও, তাঁদেরই সভাপতি টুটু বসু কেন ম্যাচ বাতিলের সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই চেয়ার নিয়ে মাঠের ভিতর ঢুকে বসে ছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে টালিগঞ্জ। সব মিলিয়ে বাতিল ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা পরে ডামাডোল আরও বেড়েছে। এরই মধ্যে আবার ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগানের রেষারেষি তীব্র ভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে। কারণ বাগানের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়েছে, ২০০৭ সালে ইস্টবেঙ্গল-পিয়ারলেস ম্যাচও ভেস্তে গিয়েছিল এবং পরে তা রিপ্লে হয়। ওই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল ০-২ গোলে পিছিয়ে ছিল। বৃষ্টির পাশাপাশি মাঠে ইটও পড়েছিল। রেফারি আলো কম বলে ম্যাচ বাতিল করে দিয়ে চলে যান। ওই ম্যাচ যদি রিপ্লে হয়, তবে এ বার কেন হবে না? যা শুনে চটেছেন ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার। তিনি আবার পাল্টা বলে দিয়েছেন, ‘‘ওই ম্যাচে মাঠের মধ্যে আমাদের কোনও কর্তা চেয়ার নিয়ে বসে পড়েননি। সদস্য গ্যালারির গেট কেউ খুলে দেয়নি, যাতে মাঠে ঢুকে সমর্থকরা গণ্ডগোল করতে পারে। মোহনবাগান তো তাই করেছে।’’ এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে তাদের একমাত্র লক্ষ্য, নির্ধারিত দিনে ডার্বি করা। ডার্বির আগে ২ সেপ্টেম্বর মোহনবাগানের আরও একটি ম্যাচ রয়েছে। ইউনাইটেডের সঙ্গে। ওই দিন আবার বামেদের ভারত বন্ধ। আইএফএ-র দাবি, ওই দিন ম্যাচ হবে। পুলিশ পেতে সমস্যা হবে না। আইএফএ-র লক্ষ্য, যে করেই হোক ৭ সেপ্টেম্বর কলকাতা লিগের ডার্বি সংগঠন করা। না হলে তারা সমস্যায় পড়বে। কিন্তু তাদের চেষ্টা কত দূর সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যাচ্ছে! কারণ বাগান সচিব অঞ্জন মিত্র এবং অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত একজোট হয়ে বলেছেন, ‘‘সূচিতে যে রকম আছে, সে রকমই ম্যাচ করতে হবে। তা ছাড়া প্রতিটি ম্যাচের মধ্যে তিন দিনের ফারাক রাখতে হবে।’’ সেটা আরও একটি চিঠি দিয়ে তাঁরা জানিয়ে আজ বুধবার জানিয়ে দিচ্ছেন আইএফএ-কে। অর্থাৎ ডার্বি ম্যাচের আগে মোহনবাগান ভেস্তে যাওয়া ম্যাচের ফয়সালা চাইছে। পাশাপাশি ইউনাইটেড ম্যাচও খেলতে চায় তারা। যা করা আইএফএ-র পক্ষে কঠিন।
আসলে বাগান চাইছে, দু’টি ম্যাচ খেলে তার পর ডার্বি খেলতে। অর্থাৎ ৭ তারিখের ডার্বি পিছিয়ে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য। এটা হলে ডার্বিতে বাগানের প্রতিপক্ষ ইস্টবেঙ্গল কিন্তু দলের অনেক ফুটবলারকেই পাবে না। ৭ সেপ্টেম্বরের পর অর্ণব মণ্ডল, মহম্মদ রফিক, লালরিন্দিকারা আইএসএলে যোগ দিতে চলে যাবেন। আর বাগানের কৌশল আঁচ করেই লাল-হলুদ কর্তা দেবব্রতবাবু বলে দিয়েছেন, ‘‘৭ তারিখের পর ডার্বি হলে আমরা খেলব কি না, সেটা ভেবে দেখতে হবে।’’ ফলে দুই প্রধানের চাপানউতোরে তীব্র সমস্যায় আইএফএ। আগামী সাত দিন ধরে ডার্বি নাটক যে আরও উত্তেজক হবে তা পরিষ্কার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy