কার্লোস আলবার্তো তোরেস (১৯৪৪-২০১৬)
রবীন্দ্র সরোবরে এটিকের ম্যাচটা দেখার সময় মঙ্গলবার সন্ধেয় কার্লোস আলবার্তোর মৃত্যু সংবাদ পেলাম। মাঠে বসেই চট করে মনটা উনচল্লিশ বছর আগের এক সেপ্টেম্বরের বিকেলে ফিরে গেল আমার। ব্রাজিলের সেই সত্তরের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন দল, যাকে বহু ফুটবল বিশেষজ্ঞ সর্বকালের সেরা টিম মানেন, তার ক্যাপ্টেন ছিলেন আলবার্তো। জুলে রিমে কাপ তাঁর হাত মারফতই চিরকালের জন্য ব্রাজিলের ঘরে ঢুকেছে।
সেই আলবার্তোর বিরুদ্ধে খেলার মধুর স্মৃতি বারবার মনে পড়ছে। সাতাত্তরের সেই ঐতিহাসিক মোহনবাগান-কসমস ম্যাচে মহান পেলে খেলা সত্ত্বেও আলবার্তো ছিলেন নিজের গুণে উজ্জ্বল। তার সাত বছর আগের কাপ ফাইনালে পেলে, টোস্টাও, জায়েরজিনহো, রিভেলিনো, ব্রিটোদের দলের শেষ গোলটা করেছিলেন ইতালির বিরুদ্ধে। আর ইডেনে আমাদের বিরুদ্ধে সে দিন করেছিলেন কসমসের প্রথম গোল। সঙ্গে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন, আধুনিক ফুটবলে ওভারল্যাপিং সাইড ব্যাকের খাঁটি ভূমিকাটা কী?
আমার মতে বিশ্ব ফুটবলে কার্লোস আলবার্তো-ই ওভারল্যাপিং সাইড ব্যাকের সর্বপ্রথম একশো ভাগ নিখুঁত উদাহরণ। ইডেনে সে দিনও যার আদর্শ প্রমাণ পেয়েছিলাম। এত বছর পরেও পরিষ্কার মনে আছে, পেলে একটা বল নিয়ে আমাদের ডিফেন্সে উঠে এসেছিলেন। সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আমি, গৌতম (সরকার), হাবিব, পি চৌধুরী-ও। পেলে এক বারও না দেখেই বলটা পায়ের আউটসাইড দিয়ে বাঁ দিকে ঠেলে দিলেন। আর কখন যে সেই পাস রিসিভ করতে নিঃশব্দে কসমস রাইট ব্যাক ঠিক জায়গায় উঠে এসেছেন, আমরা কেউ জানতেই পারিনি! আলবার্তো তাঁর দিকে পেলের এক বারও চোখ না তুলে বাড়ানো বল ধরে চেটোর আউটসাইড শটে গোলটা করে গিয়েছিলেন। আমাদের আঠারো গজে উঠে এসে। নিজেদের মধ্যে অবিশ্বাস্য বোঝাপড়া না থাকলে যেটা অতটা নিঁখুত হয় না!
সে দিন মাঠের বাইরে আলবার্তোর সঙ্গে দু’বার কথা হয়েছিল আমার। এক বার গ্র্যান্ড হোটেলে, অন্য বার বেঙ্গল ক্লাবে। দু’টো জায়গাতেই দেখেছিলাম মুখে সিগারেট। জানতে চেয়েছিলাম, সিগারেট খেলে ফুটবলারের ক্ষতি হয় না? উত্তর দিয়েছিলেন, মাঠে এক বার নামলে সিগারেটের কথা মনেই থাকে না। আসলে বোঝাতে চেয়েছিলেন, মন খেলায় পুরোপুরি একাগ্র থাকলে কোনও কিছুই ভাল পারফরম্যান্সে ব্যাঘাত ঘটাতে পারবে না।
বাহাত্তর বছরে চলে গেলেন। এখনও কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, ব্রাজিলের সত্তরের সেই সুপারস্টারে ভরা টিমের অধিনায়ক আলবার্তোর হওয়াটা কি ন্যায্য? তাঁদের উদ্দেশ্যে একটাই লাইন লিখলাম— ১৯৯৮-এ ফিফা বিংশ শতাব্দীর সেরা ফুটবল একাদশ গড়েছিল। যার একটা সাইডব্যাকের নাম কার্লোস আলবার্তো!
প্রয়াত আলবার্তো
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কার্লোস আলবার্তো। ১৯৭০ বিশ্বকাপ ফাইনালে ইতালির বিরুদ্ধে স্বপ্নের গোল করেছিলেন অধিনায়ক আলবার্তো। যে গোলকে এখনও ধরা হয় বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সেরা। কিংবদন্তি ফুটবলার ব্রাজিলের হয়ে মোট ৫৩ ম্যাচ খেলেছেন। ক্লাব ফুটবলে স্যান্টোসের হয়ে আট বছর খেলে ছ’টা ট্রফি জিতেছিলেন। এ ছাড়াও ফ্লুমিনেন্সে, ফ্ল্যামেঙ্গো, নিউ ইয়র্ক কসমসের হয়ে খেলেছেন। কোচ হিসেবে সামলেছেন ফ্ল্যামেঙ্গো, করিন্থিয়ান্স, আটলেটিকো মিনেইরো-কে ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy