Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Gautam Shome and Pranab Nandy

জেদ-নিয়মের যুগলবন্দিতে দুই দ্রোণাচার্যের বাজিমাত

চাকরি? করেন না। কোচিং ক্যাম্প? চালান না। নেশা-টেশা? আছে বটে একটা। ক্রিকেটের! প্রণব নন্দী আর গৌতম সোম (জুনিয়র) মধ্যে বৈপরীত্য একাধিক। একটা তো এখনই বলে দেওয়া যায়। প্রণব নন্দীকে ভয় পায় না, কলকাতা ময়দানে এ রকম ক্রিকেটার খুব কম আছে!

শহরে ফিরে চ্যাম্পিয়নরা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

শহরে ফিরে চ্যাম্পিয়নরা। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪১
Share: Save:

চাকরি? করেন না। কোচিং ক্যাম্প? চালান না। নেশা-টেশা? আছে বটে একটা। ক্রিকেটের!

প্রণব নন্দী আর গৌতম সোম (জুনিয়র) মধ্যে বৈপরীত্য একাধিক। একটা তো এখনই বলে দেওয়া যায়। প্রণব নন্দীকে ভয় পায় না, কলকাতা ময়দানে এ রকম ক্রিকেটার খুব কম আছে! ক্রিকেট কর্তারাও তাঁর থেকে সময়-সময় ক়ড়কানি খেয়ে থাকেন। রবিবার বাংলার ছোটরা ইতিহাস সৃষ্টির পর তাঁর একটা নামও হয়েছে। ক্রিকেটের ‘পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়!’ প্লেয়ারদের বকাঝকা এবং একই সঙ্গে ভালবাসার অদ্ভুত ক্ষমতার জন্য।

গৌতম সোম তাঁর মতো অত ‘ভোকাল’ নন। দক্ষ দ্রোণাচার্য তিনিও, কিন্তু কিছুটা রাহুল দ্রাবিড় ঘরানার। শান্ত। নম্র। মিতভাষী।

কিন্তু তার পরেও উপরের মিলগুলো পড়ে থাকে। সবচেয়ে বড় মিল, দু’জনের ক্রিকেটীয় শস্ত্রশিক্ষা। যে শিক্ষা, যার গভীরতা পারে একটা টিমকে অপ্রত্যাশিত চ্যাম্পিয়ন করে দিতে।

অনূর্ধ্ব-১৯ বাংলা রবিবার যা করে দেখাল। প্রণব-গৌতম যা করে দেখালেন নেপথ্য নায়ক হিসেবে।

গৌতম বছর পাঁচেক বাংলার জুনিয়র বাংলার ব্যাচটারই হেড কোচ। চাকরি করেন না। কোচিং ক্যাম্প চালান না। বরং তাঁর অনেক বেশি পছন্দের বিভিন্ন জেলায় সিএবি-র ‘ট্যালেন্ট হান্টে’ উপস্থিত থাকা। প্রণব নন্দীকে সিএবি গত বছর এনেছে অনূর্ধ্ব উনিশ টিমটার জন্য। ক্লাব ক্রিকেটে মাঝারি মানের ইস্টবেঙ্গল টিম নিয়েও বারবার সফল হতে দেখে। ময়দানি কোচিংয়ে নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটাতে দেখে।

বাংলার কোচবিহার চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা মোটেও স্টেজে মেরে দেওয়া নয়। ভারতসেরার তাজ উঠেছে দুই নিঃস্বার্থ দ্রোণাচার্যের কোচিং প্রক্রিয়া, দল নির্বাচনী পদ্ধতির কারণে। বাংলার জুনিয়র ব্যাচ (অনূর্ধ্ব ১৬ ও ১৯) গত চার বছর ধরেই ভাল করছিল। সেমিফাইনাল যাচ্ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত সীমান্ত অতিক্রম করা যাচ্ছিল না। প্রণব-গৌতম এ বার কোচবিহার অভিযানের আগে তিনটে জিনিস করেন।

১) চোট পাওয়া প্লেয়ারদের নিয়ে আলাদা ট্রেনিং। তাদের যথেষ্ট বিশ্বাস দেওয়া যে, ম্যাচ ফিট হলেই তারা ফিরবে।
২) একাত্মতাবোধ আমদানি। প্রায় দু’মাস কল্যাণীর অ্যাকাডেমিতে টিমকে রেখে দেওয়া।
৩) প্রতিভার সঙ্গে জেদের যুগলবন্দি সৃষ্টি। টিমে বিশ্বাস গুঁজে দেওয়া, আমরাও পারি।

প্রায় দু’মাস বাড়িছাড়া হওয়াটা নাকি অনেক ক্রিকেটারেরই পছন্দ হয়নি। প্রণব তাঁদের একটা কথা বলে দিয়েছিলেন— তোমাদের সামনে দু’টো পথ। বাড়ি গিয়ে মায়ের হাতের রান্না খেতে পারো। অথবা কোচবিহার ট্রফি জিততে পারো। দেখো কী করবে!

‘‘ওরা কিন্তু বলেছিল, থাকব স্যর। এই ইচ্ছেটা এই টিমের বড় গুণ,’’ এ দিন বলছিলেন প্রণব। গৌতম আবার কোনও কৃতিত্বই নিতে চাইলেন না। ‘‘প্রচুর ভাল কথা শুনছি। ভাল লাগছে। কিন্তু আমরা কী করেছি? যা করেছে, ছেলেরা। তার পর সিএবি। তার পর সাপোর্ট স্টাফ। একদম শেষে আমরা, কোচেরা।’’


দুই কোচ গৌতম সোম (জুনিয়র) ও প্রণব নন্দী। ফাইল চিত্র

সিএবি করেছে। বিশেষ করে যুগ্ম সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের অবদান অনস্বীকার্য। প্রাক্তন কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-র কথাও বলতে হবে। দুই কোচই বললেন যে, সিএবি-র কাছে চেয়ে পাননি এমন হয়নি। কিন্তু প্রণব-গৌতমের অবদানও বিশাল। সৌরভ সিংহ, কোচবিহার ফাইনালের নায়ক, স্বছ্বল অবস্থা তাঁর ছিল না। তাঁকে তাঁর মতো করে দেখতে হয়েছে। ইশান পোড়েল, কনিষ্ক শেঠ— দু’জনেরই চোটের কারণে কেরিয়ার শেষ হয়ে যেতে বসেছিল। তাঁদের নিয়ে আলাদা ট্রেনিং করতে হয়েছে। দরকারে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের কাছে ক্ষমাও চাইতে হয়েছে!

ফাইনালেই যেমন অন্যতম সেরা বোলার সন্দীপন দাসকে খেলানো যায়নি। ‘‘ফাইনালে যা পিচ ছিল, দুই স্পিনার খেলাতেই হত। সন্দীপনকে বলেছিলাম, ক্ষমা করে দে। তোর অবদান আমরা ভুলব না,’’ বলছিলেন গৌতম। শোনা গেল, এক টিম দুই কোচ হলেও কখনও ইগো সমস্যা আসেনি। কে ছোট, কে বড় না ভেবে দুই কোচ এক লক্ষ্যে আবদ্ধ ছিলেন— বাংলাকে জেতানোর। এবং ইতিহাসের পর তাঁদের নয়া নামকরণ নিয়ে দু’জনেই হাসেন। প্রণব একটু মজা করে জুড়ে দেন, ‘‘লোকে বলছে আমি নাকি শুক্তোর মশলা দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করি! অতটা পারি না। তবে শুক্তোর মশলা দিয়ে শুক্তোটা ভাল রান্না করতে পারি!’’

বোঝা যায়, এঁরা নেপথ্য দুনিয়ার মানুষ, নেপথ্য দুনিয়াতেই থাকতে চান। তা থাকুন। নাটকে ‘বিহাইন্ড দ্য সিনস’ বলেও তো একটা কথা আছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gautam Som Pranab Nandi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE