Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
রিয়াল-১ (র‌্যামোস) (৫) : আটলেটিকো-১ (কারাস্কো) (৩)

রোনাল্ডোকে পুরো খেলানো জিদানের মাস্টারস্ট্রোক

জিরো থেকে হিরো! চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে দেখার পর ওর সম্পর্কে এটাই আমার মনে হচ্ছে। মিলানে ১২০ মিনিট রোনাল্ডো ছিল প্রায় দর্শকের ভূমিকায়। আটলেটিকো গোলকিপার ওবলাককে কাটিয়েও বলটা না পারল গোলে ঠেলতে, না পারল ওর ট্রেডমার্ক ঝলক দেখাতে। এককথায় ফ্লপ-ই বলা চলে। কিন্তু একেবারে শেষবেলায় পেনাল্টি শ্যুট আউটে রিয়ালের চ্যাম্পিয়নশিপ গোলটা করার পর আনন্দে জার্সিই ছিঁড়ে ফেলল রোনাল্ডো।

চুনী গোস্বামী
শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৬ ০৪:০৪
Share: Save:

জিরো থেকে হিরো!

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে দেখার পর ওর সম্পর্কে এটাই আমার মনে হচ্ছে।

মিলানে ১২০ মিনিট রোনাল্ডো ছিল প্রায় দর্শকের ভূমিকায়। আটলেটিকো গোলকিপার ওবলাককে কাটিয়েও বলটা না পারল গোলে ঠেলতে, না পারল ওর ট্রেডমার্ক ঝলক দেখাতে। এককথায় ফ্লপ-ই বলা চলে। কিন্তু একেবারে শেষবেলায় পেনাল্টি শ্যুট আউটে রিয়ালের চ্যাম্পিয়নশিপ গোলটা করার পর আনন্দে জার্সিই ছিঁড়ে ফেলল রোনাল্ডো। তার পর রিয়ালের মহাতারকাকে নিয়ে র‌্যামোসদের উৎসব দেখে অবাকই লাগছিল!

মনে হয়, রোনাল্ডো ফাইনালে যথেষ্ট ম্যাচ-ফিট ছিল না। তা সত্ত্বেও কোচ জিদান ওকে পুরো ম্যাচ মাঠে রেখে দেয় বিপক্ষের উপর একইসঙ্গে ট্যাকটিকাল আর মানসিক চাপ তৈরি করতে। হাজার হোক, নামটা তো ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো! আর এটাই রিয়ালের এগারো নম্বর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ে জিদানের মাস্টারস্ট্রোক!

ফুটবলকে বিউটিফুল গেম করেছে ড্রিবল। খেলাটার সৌন্দর্যই তার ড্রিবলিং। বলতে দ্বিধা নেই, এই জায়গাটায় রোনাল্ডো ওর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মেসির তুলনায় একটু হলেও পিছিয়ে। মেসি যেমন একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে যখন-তখন ড্রিবল করে বেরিয়ে যেতে পারে, রোনাল্ডো সেখানে গোল করে যায় ওর স্পিড আর ভয়ঙ্কর শটে। আর এই দু’টো জিনিসের জন্য দরকার ফিটনেস এবং ফাঁকা জায়গা। শনিবার রাতে এর প্রথমটা মনে হয় ভোগাচ্ছিল ওকে। আর রোনাল্ডোর দ্বিতীয় পাওয়ারহাউসে তালা মেরে দিয়েছিল আটলেটিকোর আর্জেন্তাইন কোচ সিমিওনে। তাই গ্যারেথ বেল সচল থাকলেও ‘বিবিসি’ ত্রিভুজের অপর দুই বাহু বেঞ্জিমা আর রোনাল্ডোকে ম্লান দেখানোয় আটলেটিকোর ডিফেন্সিভ এবং মিডল থার্ডে সেই অর্থে বড়সড় বিপদ আসেনি।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল দেখার পর আর একটা ধারণা পাল্টে গেল আমার। মনে হত, আটলেটিকো ডিফেন্স করতে করতে কাউন্টার অ্যাটাকে খুলে ফেলে গোলের দরজা। কিন্তু সান সিরো স্টেডিয়ামে ওদের কোচ সিমিওনে সেই পথে হাঁটার বদলে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে পুরো এক ঘণ্টা যে ভাবে আক্রমণের কড়াইয়ে রিয়ালকে ভাজল, তাতে ওদের ট্রফি জিতে না ফেরাটাই আশ্চর্যের! আটলেটিকোর না পারার কারণ আমার মতে তিনটে।

এক) ওই সময় কিন্তু গদিনদের আক্রমণে বারবার একা পড়ে যাচ্ছিল গ্রিজম্যান। অ্যাটাকিং থার্ডে তোরেসের সাপোর্ট-ই পাওয়া যাচ্ছিল না। দুই) মোক্ষম সময়ে গ্রিজম্যানের পেনাল্টি মিস করাটাও শেষমেশ ওদের বিপক্ষে গিয়েছে। তিন) প্রবল শক্তিধর বিপক্ষ আক্রমণাত্মক ফুটবলের সামনে কুঁকড়ে গেলে তাদের গোলকিপার ও ডিফেন্ডারদের মাঝের জায়গাটা বুদ্ধি করে কাজে লাগাতে হয়। কিন্তু কারাস্কো, গাবিদের প্রেসিং ফুটবলও পেপে-র‌্যামোসদের টপকে সেই জায়গায় যায়নি। পারলে সিমিওনের হাত দিয়েই আটলেটিকো ওদের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফিটা ধরে ফেলত।

এ বার প্রশ্ন উঠবে তা হলে জিদানের সাফল্যের কারণ কী? প্রথমেই বলতে হবে, ফাইনালে গোড়াতেই র‌্যামোসের গোল করে যাওয়া। ফুটবলে প্রথম পনেরো মিনিটে যে টিম গোল পেয়ে যায় তারা একটা মনস্তাত্ত্বিক সুবিধে পেয়েই থাকে। আর জিদানের হাতে একটা কাসিমিরো ছিল। হোল্ডিং মিডিও অগুস্তো ফার্নান্ডেজের জায়গায় আক্রমণাত্মক কারাস্কোকে নামিয়ে যে ঝটকাটা সিমিওনে দিতে চেয়েছিল রিয়ালকে, সেটা মাঝমাঠে সামলে দিয়েছে কাসিমিরো। গাবি, গ্রিজম্যানদের থেকে বল কাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়াচ্ছিল ঠিকানা লেখা পাসও। ডেড বল সিচুয়েশনকেও খুব ভাল কাজে লাগিয়েছে রিয়াল। র‌্যামোসের গোলটাও ঠিক এই পথেই।

এর সঙ্গেই জুড়তে হবে জিদানের অল্প সময়ের মধ্যে এক সূত্রে টিমটাকে বেঁধে ফেলার দক্ষতা। শনিবারের আগে সেই অর্থে কোনও বড় সাফল্য নেই, লা লিগায় বার্সেলোনার কাছে চার গোলে হার। তার পরেও রিয়ালকে একটা টিম হিসেবে তুলে ধরতে দেখলাম জিদানকে। যেটা করতে পেরেছে মোটিভেশন, ম্যান ম্যানেজমেন্ট আর সীমাহীন অভিজ্ঞতা দিয়ে। বিপক্ষ অলআউট আসছে দেখে ঠিক সময়ে জিদান নামাল ইস্কোকে। ফলে অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে আর আক্রমণে আসতে পারেনি গ্রিজম্যানরা।

অতিরিক্ত সময় শুরুর আগে রিয়ালের হাডলের সময় মাঠের স্পাইডারক্যামে এক ঝলক জিদানের মুখটা ধরা পড়ল। মনে হচ্ছিল, যেন পারলে নিজেই জার্সি পরে মাঠে নেমে পড়বে! একজন কোচ যখন তাঁর টিমের সঙ্গে এতটা একাত্ম হয়ে পড়ে, তখন তার ছেলেরাও তার জন্য প্রাণপাত করতে বাধ্য। এগুলোই এ বার স্প্যানিশ ফুটবলে রিয়ালের ব্যর্থতার পরেও ইউরোপ সেরা হওয়ার কারণ।

ছবি রয়টার্স, এএফপি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE