Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

ডেঙ্গিময় বঙ্গভূমে রঙ্গে মেতেছে নেটের দেওয়াল

মুহূর্তে লাইন দু’টো ভাইরাল হয়ে দেওয়াল ডিঙিয়ে ছড়িয়ে পড়ল ফোনে ফোনে। কিছুক্ষণের জন্য হলেও ডেঙ্গি-ভয় উবে গিয়ে স্ক্রিনে ভাসল স্মাইলি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

গৌরব বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০২
Share: Save:

বাঙালি এখন ‘বং’! মসকিটো নেট ছেড়ে ইন্টারনেটে।

কানের কাছে ডেঙ্গির গুনগুন। তবু কথায় কথায় স্মাইলি। আর খিল্লি।

নন্দদুলাল থেকে উদবেড়াল, যে কারও মৃত্যুসংবাদে ‘রিপ’ (‘রেস্ট ইন পিস’ পুরোটা লেখার সময় নেই)। রেগে গেলে ‘বিপ’। পোস্টে কেউ কষ্ট পায়, কেউ বা কেষ্ট। কেউ স্পষ্ট হুমকি দেয়, ‘এমন পোস্টে ট্যাগালে ত্যাগ করতে বাধ্য হব।’

তার পরেও দিবারাত্রি রণে-বনে-গৃহকোণে যে কোনও মেজাজের সেলফি লটকে যায় ওয়ালে। রণং দেহি মেজাজেও বদলে যায় স্টেটাস। লেখা হয়— ‘গোল্লায় যাক ডেঙ্গি। রসগোল্লা বাঙালির। ফিলিং ক্রেজি।’

এই হল বঙ্গজীবনে হালফিলের নেট-যাপন। জুতসই ‘ইস্যু’ পেলে বাঙালি টিস্যু পেপার নিয়েও বসে যেতে পারে। ডেঙ্গির মরসুমে এক জনের পোস্ট, ‘ঋতু চলে যাওয়ার পরে বাংলার ঋতুতেও বৈচিত্র্য এসেছে। এখন বছরে ছ’মাস ডেঙ্গি-ঋতু। বাকি ছ’মাস নিজেদের মতো ভাগ করে নিয়েছে শরৎ-বর্ষা-হেমন্তেরা।’

মুহূর্তে লাইন দু’টো ভাইরাল হয়ে দেওয়াল ডিঙিয়ে ছড়িয়ে পড়ল ফোনে ফোনে। কিছুক্ষণের জন্য হলেও ডেঙ্গি-ভয় উবে গিয়ে স্ক্রিনে ভাসল স্মাইলি।

ইতিমধ্যে কে এক জন মশার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে লিখে ফেলেছেন মা মশা আর ছানা মশার কথোপকথন। সেখানে শিশু মশা অনেক ক্ষণ ধরে মায়ের কানের কাছে পোঁ...ও...ও ধরেছিল। বিরক্ত মা মশার ধ্যাতানি, ‘কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান না করে বরং ডেঙ্গির কোর্সটা করে নে। ওতে কেরিয়ার আছে।’

একটি ছবিও ঘুরছে ডেঙ্গি-বাজারে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি গাছতলায় মশারির ভিতরে এক তরুণ পিকনিকের মেজাজে শুয়ে আছেন। পাশে বসে আছেন এক তরুণী। ছবির নীচে লেখা— ‘ডেঙ্গি থেকে বাঁচতে প্রেমিক-প্রেমিকারা এখন পার্কের মধ্যে মশারি টাঙিয়ে প্রেম করছেন’।

ঠিক তার পরেই মোবাইলে টুংটাং। মেসেজ তো নয়, যেন হুমকি— ‘মশারি টাঙিয়ে শোবে। নইলে মশা তোমাকে দেওয়ালে টাঙিয়ে দেবে’। বেরিয়েছে মশার সাক্ষাৎকারও। এক সাংবাদিক মশার কাছে জানতে চাইছেন, ‘মশা কামড়ালে ডেঙ্গি হয় কেন?’ উত্তরে মশা বলেছে, ‘শুধু নিয়েই যাব? কিছু দেব না! আমরা এতটা অকৃতজ্ঞ নই।’

ডেঙ্গির প্রকৃত চিত্র রাজ্য সরকার কতটা খাতায়-কলমে দেখাচ্ছে, তা নিয়েও যথেষ্ট হইচই হয়েছে, হচ্ছেও। সেই আবহে কে এক জন ছেড়ে দিয়েছে, ‘এখন থেকে কি তা হলে ডেঙ্গিও গুপ্ত রোগের তালিকায় ঢুকে পড়ল?’ চন্দ্রবিন্দুর কাছে ক্ষমা চেয়ে এক জন লিখেছেন, ‘আমার ভিন্‌দেশি মশা/ এই বঙ্গদেশে এসে/ তুই করলি যে দুর্দশা/ কোথায় মুখ লুকোব শেষে?... আমার ‘ডেঙ্গি’ বলা মানা/ তাই নাম দিই ‘অজানা’...।’

সরস পোস্টের পাশে সিরিয়াস বিষয়েরও ঘাটতি নেই। নিদান আছে বিবিধ টোটকার। যেমন কাটা লেবুতে লবঙ্গ গুঁজে ঘরের কোণে রাখতে হবে। তাতেই নাকি ডেঙ্গি কাত!

জ্বরজারি নিয়ে হাসাহাসি করার ঐতিহ্য অবশ্য বাঙালির আজকের নয়। বরং ৯৪ বছর আগে কালাজ্বরে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে ভয়ভীতিকে প্রায় হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন এক বাঙালি— সুকুমার রায়। শেষ কবিতায় লিখে গেলেন, ‘আজকে আমার মনের মাঝে / ধাঁই ধপাধপ তবলা বাজে/ রাম-খটাখট ঘ্যাচাং ঘ্যাঁচ / কথায় কাটে কথার প্যাঁচ।’ শেষ দু’টো পঙ্‌ক্তি— ‘ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর/ গানের পালা সাঙ্গ মোর।’

এতটা না হলেও রোগ নিয়ে রঙ্গ-রসিকতার সেই মেজাজই এখন উঠে এসেছে নেট-দেওয়ালে। সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র মনে করেন, ‘‘এটা তো চলতি ট্রেন্ড। যে কোনও বিষয়ে কেউ নিজের একটা মতামত জানাচ্ছেন এবং চেষ্টা করছেন অন্যদের প্রভাবিত করতে। এটার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু’টো দিকই আছে। আমাদের কিন্তু সচেতন থাকা জরুরি।’’

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু লেখা ও ছবি অবাক করে। মেধা, রসবোধ ও প্রতিভার ছাপ স্পষ্ট। এগুলোর সঙ্কলন করা গেলে গ্রন্থও হতে পারে।’’

সোশ্যাল মিডিয়ার বেশ কয়েকটি সাহিত্য গোষ্ঠী ইতিমধ্যে প্রকাশনাও শুরু করেছে। হবে না কি এই বাজারে ডেঙ্গি নিয়ে একটা সঙ্কলন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Malaria Mosquitoes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE