Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চাপের ছুতোয় বাড়ছে ধোঁয়া-অসুখ

মানব সম্পদ বিশেষজ্ঞ তুষার বসু আবার জানাচ্ছেন, ‘কাজের চাপ’-এর কোনও মাপকাঠি নেই। কেউ অনেক চাপে কাজ করার পরেও সুস্থ-স্বাভাবিক থাকেন, কেউ আবার অল্প চাপেও সিগারেটের নেশা ধরে ফেলেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০১:২৫
Share: Save:

চুক্তি আট ঘণ্টার। কিন্তু কাজের চাপে রোজই দশ থেকে বারো ঘণ্টা অফিসে থাকতে হয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী আকাঙ্ক্ষাকে। একটা সময়ের পরে আর মাথা কাজ করে না। পরীক্ষামূলক ভাবেই সিগারেটে দু’টো টান মারা শুরু করেছিলেন। সেটাই বাড়তে বাড়তে নেশার পর্যায়ে পৌঁছেছে। দিনে এক প্যাকেটের বেশিই এখন লাগে।

প্রায় দিনই নানা পার্টিতে যেতে হয় বিনোদন সংস্থার কর্মী পরভিনকে। অভ্যাস না-থাকলেও প্রায় বাধ্য হয়ে দু’-একটা সিগারেট ধরাতে হয়। সেটাই কখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে, টের পাননি তিনি। এখন ছাড়ার চেষ্টা করলেও পারছেন না।

সদ্য কলেজ পেরোনো জুঁই আবার মনে করেন, নিজেকে ‘কুল’ দেখানোর জন্য হাতে একটা জ্বলন্ত সিগারেট থাকা জরুরি। পর্যাপ্ত ‘আধুনিক’ থাকার স্বার্থে সিগারেটের অভ্যাস মোটেই ছাড়তে রাজি নন তিনি।

চার সপ্তাহ ধরে চলা অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অব ইন্ডিয়া (অ্যাসোচ্যাম)-এর একটি সমীক্ষা বলছে, কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, পুণে, লখনউ, আমদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, জয়পুর ও হায়দরাবাদের ২২ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে চাকরিজীবী মেয়েদের একটি বড় অংশ চাপ কমাতে সিগারেটে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। যার মূল কারণ হল, কাজের চাপ, মানসিক অস্থিরতা ও নিজেকে ‘আধুনিক’ দেখানোর চেষ্টা। অ্যাসোচ্যামের সাধারণ সম্পাদক ডি এস রাবত বলছেন, ‘‘চড়া বেতনের বিনিময়ে প্রচণ্ড বেশি চাপ নিয়ে চাকরি করা তরুণীর সংখ্যা বাড়ছে। তাঁদের একটা বড় অংশ কাজের সঙ্গে সিগারেট জুড়ে ফেলছেন।’’

সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী তরুণীদের মধ্যে দুই শতাংশ জানান, তাঁদের দিনে এক প্যাকেটেরও বেশি সিগারেট লাগে। ৫২ শতাংশ তরুণী জানান, দিনে দু-তিনটে সিগারেট কাজের ফাঁকে, বা সপ্তাহান্তের পার্টিতে দু’-একটা সিগারেট খেয়ে থাকেন তাঁরা। এঁদের বড় অংশের ধারণা, ধূমপান তাঁদের আকর্ষণীয় ও স্বাধীনচেতা করে তোলে, এবং ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটায়। বাকি ৪৬ শতাংশ তরুণীই সিগারেট ছাড়তে চান বা ছাড়ার চেষ্টা করছেন। এর কারণ হিসেবে তাঁরা মূলত বলছেন, সন্তানধারণে সমস্যার কথা।

বস্তুত, ধূমপানের সঙ্গে যে সন্তানধারণে সমস্যা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত, তা জানাচ্ছেন বন্ধ্যত্ব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর মতে, কাজের চাপ, তার জেরে ধূমপান, তার জেরে বন্ধ্যত্ব— এ রকম একরৈখিক সমীকরণ না হলেও, প্রতিটা বিষয় আলাদা করে মেয়েদের জনন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। ‘‘বিশেষ করে ধূমপানের জেরে ডিম্বাণুর পরিমাণ এবং গুণগত মান দুই-ই কমে যায়, এটা পরীক্ষিত। তাই চাপ যতই থাক, স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই সেই চাপ মুক্তির সুস্থ উপায় খুঁজতে হবে মেয়েদের।’’, বললেন তিনি।

মানব সম্পদ বিশেষজ্ঞ তুষার বসু আবার জানাচ্ছেন, ‘কাজের চাপ’-এর কোনও মাপকাঠি নেই। কেউ অনেক চাপে কাজ করার পরেও সুস্থ-স্বাভাবিক থাকেন, কেউ আবার অল্প চাপেও সিগারেটের নেশা ধরে ফেলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখনকার দ্রুত জীবনযাপনে চাপ থাকবেই। সেই চাপ এড়াতে দু’মিনিট সিগারেট খাওয়ার বদলে দু’মিনিটের গানও শোনা যেতে পারে, ভিডিয়ো দেখা যেতে পারে। শরীর-মন সুস্থ রাখাও জরুরি। তা হলে চাপ অনেকটাই এড়ানো যাবে, ধূমপানের আশ্রয় নিতে হবে না।’’

মনোরোগের চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব স্পষ্ট বলছেন, ‘‘সিগারেট কাউকে আধুনিক করে না, চাপও কমায় না। বরং শরীরের ক্ষতিই করে। সব চেয়ে বড় সমস্যা, আর পাঁচটা নেশার মতোই যথেষ্ট ক্ষতিকর হওয়া সত্ত্বেও সিগারেটের নেশা সামাজিক ভাবে স্বীকৃত। এটা সর্বত্র কিনতে পাওয়া যায় এবং প্রকাশ্যে খাওয়া যায়। এখানেও বদল আসা দরকার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cigarette Smoking Smoking Video
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE