Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Lifestyle News

বিশ্বের অলস দেশগুলোর অন্যতম ভারত, ৪৬ দেশের মধ্যে স্থান ৮

ব্যস্ততা। কাজের চাপ আর স্ট্রেসের কারণে বিশ্রামের সময়টাই যেখানে দুর্মূল্য, সেখানে শরীরচর্চা তো ওয়েস্ট অব টাইম। বিশ্বায়নের যুগে সব দেশের চিত্রটাই কি এক?

বিশ্বায়নের যুগে সব দেশের চিত্রটাই কি এক?

বিশ্বায়নের যুগে সব দেশের চিত্রটাই কি এক?

প্রমা মিত্র
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৭ ১৯:১৬
Share: Save:

দিনের মধ্যে কত ক্ষণ বসে থাকেন আপনি? শেষ কবে অফিসে লিফটের বদলে সিঁড়ি ভেঙেছেন? সকালে উঠে শরীরচর্চাই বা কত দিন করেন? এই সব কিছুরই উত্তর রয়েছে আমাদের কাছে। ব্যস্ততা। কাজের চাপ আর স্ট্রেসের কারণে বিশ্রামের সময়টাই যেখানে দুর্মূল্য, সেখানে শরীরচর্চা তো ওয়েস্ট অব টাইম। বিশ্বায়নের যুগে সব দেশের চিত্রটাই কি এক?

কোন দেশ কতটা সক্রিয়

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই সমীক্ষা করেছিলেন কোন দেশের মানুষ দিনে গড়ে কত পা হাঁটেন তার ভিত্তিতে। বিশ্বের মোট ৪৬টি দেশের সাত লক্ষ মানুষকে স্মার্টফোন অ্যাকটিভিটি ট্র্যাকারের সাহায্যে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। দেখা গিয়েছে উদ্যম বা পরিশ্রমের ভিত্তিতে ভারতের স্থান এই তালিকায় ৩৯ নম্বরে। অর্থাত্ আলস্যের নিরিখে ভারতের স্থান এই ৪৬ দেশের তালিকায় অষ্টম। সবচেয়ে কম অলস দেশ চিন। চিনের মধ্যে হংকং হল সবচেয়ে বেশে সক্রিয়দের জায়গা। মার্কিন দেশের মানুষ আলস্যের নিরিখে আছেন ১৭ নম্বরে।

কেন ভারতীয়রা আলস্যে ভোগেন?

নিউট্রিশনিস্ট রেশমী রায়চৌধুরী মনে করেন, এটা মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমস্যা। তিনি বলেন, এর কারণ মূলত লাইফস্টাইলে পরিবর্তন। অধিকাংশ কাজই এখন অফিসে বসে করতে হয়। ফলে ঘুরে ঘুরে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা যেমন কমেছে, তেমনই ভারতীয়রা কোনও দিনই ফিটনেস সম্পর্কে তেমন সচেতন ছিল না। বিকেল বেলা যে বাচ্চারা খেলত, বা বয়স্করাও হাঁটতে বেরোতেন, সেই অবসরটুকু এখন আর আমাদের নেই। দিনের একটা বড় সময় কেটে যাচ্ছে বসে কাজ করে। কাজের বাইরে যে সময়টুকু আমরা পাচ্ছি, সেটাও গ্রাস করে নিচ্ছে টেকনোলজি। স্মার্টফোন, ট্যাব, মোবাইল গেমেই আমরা এন্টারটেনমেন্ট খুঁজে নিচ্ছি। ফলে হাঁটাচলার প্রবণতা কমে গিয়েছে। এটা কিন্তু সমালোচনার বিষয় নয়। বরং সমস্যা হিসেবেই দেখা উচিত। উন্নত দেশগুলো এই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে। ওরা দুটো বিষয়ের মধ্যে ব্যালান্স খুঁজে নিতে শিখে গিয়েছে। আমাদের মতো দেশগুলোতেই এখন এই সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: বর্ষার আলস্য কাটাতে এই খাবারগুলো কম খান

ডায়টিশিয়ান ইন্দ্রাণী ঘোষ আবার পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাসকেই এর প্রধান কারণ মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘‘এখন চটজলদি খাবারগুলোই আমাদের বেশি টানে। অধিকাংশ পরিবারেই স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কাজের জন্য বাইরে বেরিয়ে যান। ফলে রাতে বাড়ি ফিরে ক্লান্ত শরীরে রান্না করতে ইচ্ছে হয় না অনেকেরই। পিজা, বার্গারের মতো কেনা খাবারেই পেট ভরাতে হচ্ছে বেশির ভাগ দিন। ফলে বাচ্চাদেরও সে ভাবেই অভ্যাস করাচ্ছি আমরা। যদি ওদের ছোট থেকেই ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজের স্বাদ চিনিয়ে দিই, তা হলে আর বাড়িতে তৈরি আলুভাজা খেতে চাইবে কেন? একই ভাবে টাটকা ফলের বদলে ক্যানড জুস অনেক আকর্ষণীয় আমাদের কাছে। এই খাবারগুলো কিন্তু আমাদের শরীর, এমনকী মস্তিষ্ককেও অলস করে দিচ্ছে। সেই সঙ্গে আর্থিক অবস্থা যাদের একটু ভাল, তারা হয়তো বাড়ির গাড়িতেই সব জায়গায় যাতায়াত করেন। বাজারে গিয়ে শাক-সব্জি কেনার প্রয়োজনও ফুরিয়েছে। মাসের বাজারটাও হয়ে যাচ্ছে অনলাইনেই।’’

কী ক্ষতি হতে পারে এতে?

ফিটনেস এক্সপার্ট চিন্ময় রায় বলেন, ‘‘আমাদের শরীরের দুটো বিষয়কে বুঝতে হবে। এক, অ্যানাটমি বা গঠন। দুই, ফিজিওলজি বা কার্যকারিতা। যদি আমরা সক্রিয় না থাকি তা হলে এই দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দীর্ঘ ক্ষণ বসে থাকার ফলে আমাদের শরীরের যে জয়েন্টগুলো রয়েছে তার বিন্যাস নষ্ট হয়ে যায়। ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে শরীর। অন্য দিকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পেশী। কথাতেই আছে, ইফ ইউ ডোন্ট ইউজ ইট, ইউ লুজ ইট। পেশী যদি ব্যবহার করা না হয় তা হলে পেশী ক্ষয় হতে থাকে। ঠিক সে ভাবেই আলস্য আমাদের শারীরবৃত্তীয় ক্ষতিও ডেকে আনে। খাবারের মাধ্যমে যে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট আমাদের শরীরে পৌঁছয় তা তো এনার্জি জোগানোর জন্য। যদি আপনি গাড়িতে পেট্রোল ভরে রেখে দেন, গাড়ি না চালান, তা হলে লাভ কী? ঠিক সে ভাবেই যে ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরে যাচ্ছে তা যদি ব্যবহৃত না হয় তা হলে তা অতিরিক্ত ফ্যাট হিসেবে জমতে থাকে। এর থেকেই ভূঁড়ি বেড়ে ফ্যাটি লিভারের মতো সমস্যা হতে পারে, ডায়াবেটিস হতে পারে। হার্টের করোনারি আর্টারিতে ফ্যাট জমতে থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। শুধু শারীরিক নয় কিন্তু বিষয়টা। এ ভাবে বসে থাকতে থাকতে আমাদের মানসিক ক্ষতিও হয়। যখন আমরা সক্রিয় থাকি তখন মস্তিষ্কে সিরোটোনিন, এন্ডরফিনের মতো হরমোন ক্ষরণ হয়। এগুলোকে বলা হয় হ্যাপি হরমোন। সারা দিন বসে থাকলে শরীরে অ্যান্ড্রিনালিন, কর্টিসলের মতো স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বাড়ে। দীর্ঘ দিন ধরে স্ট্রেস হরমোন বাড়তে থাকলে আমরা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি।’’

সমীক্ষা দেখা গিয়েছে, দিনে গড়ে হাঁটার পরিমাণ যত কমে, ততই বাড়তে থেকেছে ওবেসিটির পরিমাণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Care Tips Obesity Exercis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE