হারিয়ে যাচ্ছেন ‘উমরাও জান’। এ বার ‘পিকু’-র জমানা!
২০০৬-এর পুজো। সে বছর ‘উমরাও জান’ এর রিমেক বক্স অফিসে হিট। তবে সেই সাফল্যকে দশ গোল দিয়েছিল পুজোর ফ্যাশন। কারণ সিনেমার পর্দা থেকে জরির কাজ করা গাঢ় রঙের অনারকলি সালোয়ার কামিজে ছেয়ে গিয়েছিল প্রায় গোটা দেশ। আর তার পর? প্রায় প্রায় দশ বছরের রাজত্ব। কখনও দৈর্ঘ্যে হেরফের, কখনও বা রং— অনারকলিতে মজে ছিলেন সব বয়সীরাই। হ্যাঁ, এ বার পুজোতেও ইতিউতি দেখা মিলছে তার। তবে, নেড়েচেড়ে রেখে দিচ্ছেন অনেকেই।
কারণ ‘পিকু’। সিনেমার ঘরে-বাইরে সমানতালে দৌড়ে চলা ব্যস্ত বঙ্গতনয়ার পোশাক মন কেড়েছে ষোলো থেকে আটচল্লিশ সকলেরই। পালাজোর সঙ্গে কুর্তিতে এলোচুলের দীপিকা পাদুকোন ঢুকে পড়েছেন ঘরে-ঘরে। সেই ঢুকে পড়াটা অবশ্য গত বছরই।
প্রচণ্ড গরমে কলেজ-অফিস-ঘোরাঘুরিতে পালাজোর আরামে মজে থাকা কন্যেদের সংখ্যাটাও বেড়েছে হুড়মুড়িয়ে। তবে পুজোয় লম্বা ঝুলের নেটের অনারকলির রাজপাটে ভাগ বসানোটা ততটা সহজ হয়নি।
এ বার পুজোয় সেই পালাজোতেই জুড়ে গিয়েছে পাকিস্তানি শারারার প্রভাব। আর এই যুগলবন্দিই এ বার পুজোর বাজারে ‘হিট’! ডিজাইনার থেকে বিপণির কর্মীরা, শপিং মল থেকে ফুটপাথ, সর্বত্র সকলেই মানছেন সে কথা— লাল, নীল মেরুনের মতো একরঙা পালাজোর সঙ্গে প্রিন্টেড কুর্তিই এ বার চাহিদায় এগিয়ে। সল্টলেকের একটি শপিং মলে উইন্ডো শপিং করছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ঈশিতা মাইতি। বললেন, ‘‘চুড়িদার বড্ড একঘেয়ে হয়ে গিয়েছে। লং কুর্তির সঙ্গে পালাজোর এই স্টাইলটা বেশ অন্য রকম। ক্যারি করাও সহজ। ভাবছি এটাই ট্রাই করব এ বার।’’ শহরের ডিজাইনারদের একাংশের মতেও, পালাজোর সঙ্গে শর্ট কুর্তা পরতে স্বচ্ছন্দ হতেন না অনেকেই। কিন্তু লম্বা ঝুলের কুর্তি ভারী বা হালকা যে কোনও ফিগারে, যে কোনও বয়সেই মানায়। আর সেটাই এই পোশাকের ইউএসপি।
শুধু পালাজো নয়, পুজোর শহরে মন কাড়ছে জাম্পস্যুটও। দিব্যি বিকোচ্ছে হাল্কা ডিজাইন, গাঢ় বা হাল্কা রং এবং অ্যানিম্যাল প্রিন্টে। সেই সঙ্গেই চাহিদায় রয়েছে রংবেরঙের হরেক ডিজাইনের জ্যাকেট। বিশেষত যাঁরা কুর্তি-লেগিংস বা জিন্স-কুর্তি পরতে ভালবাসেন, একরঙা বা হাল্কা শেডের কুর্তির সঙ্গে কনট্রাস্ট রং-ডিজাইনের সুতি বা সিল্কের জ্যাকেট চাপিয়ে সাজে বাড়তি মাত্রা আনছেন তাঁরা। কেউ বা আবার লেগিংসের সঙ্গে মিলিয়ে বাছছেন জ্যাকেটের রং। এমনকী গাউনের সঙ্গেও এই হাল্কা জ্যাকেট পরছেন কেউ কেউ।
ডিজাইনার অভিষেক দত্তর কথায়, ‘‘পুজোয় সকলেই নিজেকে নতুন ভাবে দেখতে চান। এ বার তাই এমন পোশাক পরুন, যা বাঁধাধরা ভাবনাকে বদলে দেবে। এ বার যেমন ইন্দো-ওয়েস্টার্ন ডিজাইনের ধোতি প্যান্ট আর কুর্তা বানিয়েছি আমি।’’
অনেকটা এই ধাঁচেই পোশাক রয়েছে ভবানীপুরের একটি এগ্জিবিশনে। রবীন্দ্র-সাহিত্যের নায়ক-নায়িকাদের পোশাকের সেকেলে স্বাদকে তাঁরা মিশিয়ে দিয়েছেন আধুনিক পোশাকের সঙ্গে। ধরা যাক, একেবারে পুরনো আমলের ডিজাইনের কাঁথা স্টিচের স্টোল, কিন্তু তা গলায় জড়ানো হচ্ছে লম্বা ঝুলের কুর্তি এবং স্কার্টের সঙ্গে। সঙ্গে একটু কালো হয়ে আসা রুপোর গয়না। একেবারে আধুনিকাও যাতে উস্কে দিতে পারেন নস্টালজিয়া।
তা বলে পুজোর কেনাকাটায় শাড়ি থাকবে না? সে-ও কি হয়! ডিজাইনার থেকে বিপণি কর্তা সকলেই বলছেন, এ বার পুজোয় শাড়ির বাজারে টেক্কা দিচ্ছে নানা রং, নানা ডিজাইনের হ্যান্ডলুম। বাঁশদ্রোণীর দোকান থেকে গড়িয়াহাটের মল বা দমদমের শপিং প্লাজা। ছবিটা সর্বত্রই এক। এলগিন রোডের একটি বিপণিতে তার সঙ্গেই এ বার সম্ভারে রয়েছে কাঞ্জিভরম, গাদোয়াল, মাহেশ্বরীর মতো জমকালো শাড়িও। ক্রাফ্টস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার বিপণি ‘কমলা’তেও রয়েছে তসরপাড় ফুলিয়ার তাঁত, নানা রঙের ব্রোকেড আঁচল চান্দেরি, শিবোরি, মঙ্গলগিরি, ইক্কত, কলমকারির মতো হরেক ডিজাইনের শাড়ি।
কী ধরনের শাড়ি এ বার ফ্যাশনে ‘ইন’? ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, ‘‘এমব্রয়ডারির যুগ শেষ। এখন হ্যান্ডলুম শাড়ি আর ফেব্রিকের কাজে ঝোঁকটা বেশি সব বয়সীদের মধ্যেই। পুজোর সময় সাধারণত উজ্বল রং পছন্দ করেন। এ বারও সেই ট্র্যাডিশন রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy