প্রতীকী ছবি।
ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে বেশ কয়েক বছর। খাওয়াদাওয়ায় হাজারো বিধি-নিষেধ। সে সব নিয়েই দিন কাটছিল বছর চল্লিশের সুমন সরকারের। কিন্তু হঠাৎই বাড়ির লোকেরা খেয়াল করলেন, মাঝেমধ্যেই অফিস কামাই করছেন সুমন। ঘরের এক কোণে চুপচাপ বসে থাকছেন। মেলামেশা করা বা বাইরে বেরোনোয় প্রবল অনীহা তাঁর। কিছু দিন এ ভাবে চলার পরে এক মনোরোগ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন তাঁরা। জানা গেল, গভীর অবসাদের শিকার ওই কর্পোরেট চাকুরে। আরও জানা গেল, তিনি একা নন, বহু ক্ষেত্রেই ডায়াবেটিসের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছে অবসাদ।
এ দেশে ক্রমবর্ধমান ডায়াবেটিস রোগীর কারণে ভারতকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর ডায়াবেটিস রাজধানী। অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসে ভর করেই হার্ট, কিডনি-সহ বিভিন্ন অঙ্গে রোগ বাসা বাঁধছে। ক্রমশ সেই তালিকায় জু়ড়ে গিয়েছে অবসাদের নামও। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিসের সঙ্গে মানসিক অবসাদের যোগাযোগ নিয়ে চর্চা বহু দিনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ নিয়ে একাধিক বার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এ বার কলকাতার একদল চিকিৎসকের সাম্প্রতিক সমীক্ষা রিপোর্টেও দেখা গেল, ১৮-৪০ বছরের ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ৫৩.৪ শতাংশই অবসাদের শিকার। আর ৪১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে এই হার ৪০.৭%। আর ৬০ বছরের বেশি হলে মহিলা-পুরুষে এই হার খানিকটা কমে যাচ্ছে। সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, ডায়াবেটিক মহিলাদের মধ্যে অবসাদের হার পুরুষদের তুলনায় প্রায় দেড় গুণ বেশি। আমেরিকান ডায়াবেটিস কংগ্রেসে এই সমীক্ষা রিপোর্টটি সম্প্রতি পেশও করেছেন চিকিৎসকেরা।
আরও খবর
রেস্তোরাঁর খাবারে রোগজীবাণু, নেই নজরদার
শহরের ছ’টি হাসপাতালের আউটডোরে আসা দেড় হাজারেরও বেশি রোগীর মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। ইন্টিগ্রেটেড ডায়াবেটিস অ্যান্ড এন্ডোক্রিনোলজি অ্যাকাডেমির তরফে চালানো এই সমীক্ষায় ঠাঁই পেয়েছিলেন সব বয়সের ডায়াবেটিস রোগীরাই। দেখা গিয়েছে, সামগ্রিক ভাবে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ৪০ শতাংশই অবসাদে ভোগেন। এই অবসাদকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন তাঁরা। গভীর অবসাদ রয়েছে চার শতাংশ রোগীর মধ্যে। আর মাঝারি অবসাদ রয়েছে ৩৬ শতাংশের মধ্যে। একই রকম ভাবে হাইপোগ্লাইসেমিয়া রয়েছে যাঁদের, তাঁদের মধ্যে অবসাদ বেশি প্রায় দেড় গুণ।
সমীক্ষকদের মধ্যে অন্যতম, এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সুজয় মজুমদার আরও একটি তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘অবসাদে ভোগা ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে সাধারণ ভাবে ওষুধ না খাওয়ার প্রবণতাই বেশি। দেখা গিয়েছে, যাঁদের অবসাদ রয়েছে তাঁদের মধ্যে ৬৪.৮% ওষুধ খান না। ফলে তাঁদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে না।’’ একই কথা বলেছেন মনোবিদেরাও। তাঁরা মনে করেন, সমস্যাটা উভয় দিক থেকেই। কখনও অবসাদ থেকে ডায়াবেটিস হয়। আবার কখনও ডায়াবেটিস ডেকে আনে অবসাদ। মনোবিদ জ্যোতির্ময় সমাজদারের কথায়, ‘‘অবসাদ থাকলে কোনও কিছুই মন দিয়ে করতে ইচ্ছা হয় না। এমনকী চিকিৎসাও। আর সেই কারণেই লাগামছাড়া হয়ে ওঠে় রোগ।’’
এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতে, যে কোনও ক্রনিক অসুখেই অবসাদ আসে। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে হারটা বেশি। তিনি বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে একটা অন্য গুরুতর সমস্যা আছে। অবসাদের ওষুধ খেলে বহু ক্ষেত্রেই ওজন বাড়ে। আর ওজন বাড়লে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। তাতে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে।’’
কেন কম বয়সী ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে অবসাদ বেশি? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এত ধরনের বিধি-নিষেধ মানতে হয় যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রোগীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস কমে যায়। তাঁরা মনে করতে থাকেন, যে বয়সে বেশি কর্মক্ষম থাকার কথা, সেই বয়সেই তাঁরা বিধি-নিষেধের জালে বাঁধা পড়ে থাকছেন। আত্মবিশ্বাসের এই অভাবই জাগিয়ে তোলে অবসাদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy