তন্বী বাহুলতা, কখন বাহুগদা হয়ে উঠল? সমৃদ্ধির চিহ্ন, সুখীসুখী পেটটা এমন বেঢপ জালা হল কবে থেকে?
বছরভর সান্ধ্য পানাহারে বুঁদ থেকে খেয়াল হয়নি!
এখন কলকাতায় শিউলির গন্ধ না-পান, এই দীর্ঘশ্বাসটুকু আলবাত শুনতে পাবেন। পুজোর চাহিদায় নির্মেদ, সুঠাম বা তথাকথিত ‘সেক্সি’ তনু আমবাঙালির তালিকায় আছেই, আছে! তাই জাদুদণ্ডের খোঁজ চলছে, উৎসবের প্রাক্-মুহূর্তে!
বিশেষ কোনও উপলক্ষের দিকে তাকিয়ে অনেকেই সময় নিয়ে ডায়েট করা বা গা ঘামানো শুরু করেন। এই চাহিদা ঠিক তা নয়। অফিসের ফাঁকে থাকথাক চিজভরা বার্গারের স্বাদে যিনি মজে ছিলেন, মহালয়ার পরের দিন স্লিভলেস সালোয়ার স্যুট করাতে গিয়ে তাঁর শোক উথলে উঠছে। আয়নার সামনে অবিশ্বাস, এই পেল্লায় হাত কি আমারই? চমৎকার ডিজাইনের স্লিম ফিট জামাটা পরার সময়েও ভুঁড়ির উপরের বোতামটা আঁটতে গিয়ে ডাহা ফেল। তখনই চটজলদি প্রতিকারের আশায় প্রাণ হাঁকপাক করে।
ডায়েটিশিয়ান রেশমি রায়চৌধুরী বা হিনা নাফিসের অভিজ্ঞতা, পুজোর ঠিক আগেই রাতারাতি ফল পাওয়ার আশায় অনেকে চেম্বারে ভিড় করেন। এ হল, বছরভর ফাঁকি মেরে পরীক্ষার আগের দিন পড়তে বসার মতো। বান্ধবীর পাশে মানানসই দেখাতে ভুঁড়ি কমানোর তাগিদ বা আকর্ষক শর্ট ড্রেস পরার লোভে, হাত কমানোর ইচ্ছে— প্রায় সর্বজনীন। ওজন কমিয়ে aমধ্যে একটা স্বাস্থ্য সচেতনতা থাকে। পালোয়ান টাইপ গড়ন বা সুপারমডেল ফিগার নয়, সুঠাম শরীর সুস্থ শরীরও বটে। কিন্তু পুজোর ক’টা দিন রোগা হতে চাওয়ার মধ্যে সুন্দর দেখানোর ইচ্ছেটুকুই প্রধান।
এই ধরনের উচ্চাকাঙ্খায় অনেকে বড় বিপদেও পড়েন। কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে কেউ হয়ত বিপুল গাঁটের কড়ি গচ্চা দিয়ে দু’দিনে চার ইঞ্চি কোমর কমানোর চক্করে পড়লেন। কেউ ফ্যাট বার্নার পিল বা ওযুধ খেতে শুরু করলেন। পুজোর ঠিক আগেই নেট ঘেঁটে শুধু স্যালাড খেয়ে বা সকাল-বিকেল ভাত বন্ধ করেও অনেকে অসাধ্য সাধন করতে চান। হিনার মতে, এ সব অত্যন্ত বিপজ্জনক। সাধারণত, মাসে ২-৩ কেজি করে ওজন কমানোটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। ওজন কমানোর চটজলদি দাওয়াই শরীরে জলের ভাগ কমায়। অসুস্থ হয়ে অনেকেরই পুজো মাটি হয়।
রেশমিও বলছেন, চালাকির দ্বারা রোগা হওয়া অসম্ভব। কিন্তু পুজোর ক’দিন আগে ভিড় করা নাদুস-নুদুসদের জন্যও কিছু সান্ত্বনা-পুরস্কার আছে। তাঁর দাওয়াই, এখনই ৩-৫ লিটার জল, ফল-স্যালাড খান, কেনাকাটির ফাঁকে পেট খালি রাখবেন না। তবে ভাজাভুজি-বিস্কুট নয়, পকেটে রাখা কাঠবাদাম (আমন্ড) ৫-৬টা চলতে পারে। শেষ মুহূর্তে ভাত বন্ধ করলে কিন্তু দুর্বল হয়ে পড়বেন। আর রাতে জমিয়ে ঘুমোন। রাতারাতি হাত, গাল বা পেট কমবে না! কিন্তু চোখেমুখে তৃপ্ত, তরতাজা ভাবটুকু এলেও মন্দ কী!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy