Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দাঁত যে বড় বালাই

দাঁত নিয়ে ভোগেননি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। সময় ব্যবস্থা না নিলে কষ্ট পেতে হবে। তাই নিয়মিত পরিচর্চা করা দরকার। এই নিয়ে আলোচনায় দন্ত-চিকিৎসক, প্রসেনজিৎ ভকত। দাঁত নিয়ে ভোগেননি এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। সময় ব্যবস্থা না নিলে কষ্ট পেতে হবে। তাই নিয়মিত পরিচর্চা করা দরকার। এই নিয়ে আলোচনায় দন্ত-চিকিৎসক প্রসেনজিৎ ভকত। সাক্ষাৎকার: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৭
Share: Save:

প্রশ্ন: দাঁতের প্রধান সমস্যাগুলি কী?

উত্তর: প্রধানত দাঁতের দুই ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। দাঁতের ক্ষয়জনিত রোগ এবং মাড়ির সমস্যা। দাঁতের ক্ষয় মূলত মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি সময় দাঁতে জমে থাকার ফলে হয়। খাবারে ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের ফলে অ্যাসিড তৈরি হয় এবং দাঁতের উপরের অ্যানামেল অংশ ক্ষয় হতে শুরু করে। পরে সেটি ক্যাভিটি বা গর্তে পরিণত হয়। আর ঠিকমতো দাঁত পরিষ্কার না করলে, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানীয় জল পান না করলে মাড়ির সমস্যা দেখা দেয়।

প্রশ্ন: ক্যাভিটি কি?

উত্তর: ক্যাভিটি হল দাঁতের ছিদ্র। যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। দাঁত ঠিকমতো পরিষ্কার না করলে উপরের চকচকে অংশ ক্ষয়ে ছিদ্র তৈরি হলে তাকে ক্যাভিটি বলে। সেটা দাঁতের গোড়া পর্যন্ত চলে গেলে সমস্যা হয়। সেই ছিদ্রের মধ্যে খাবারের কুচি ঢুকে যায়। সেই কুচি পচে গিয়ে তা দাঁতের ক্ষতি করে। যন্ত্রণা হয়।

প্রশ্ন: দাঁতের মাড়ি ফুলে গেলে বা দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে শুরু হলে আমাদের কী করা উচিত?

উত্তর: এ ক্ষেত্রে প্রথমে এক জন দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে আল্ট্রাসোনিক স্কেলিং করা যেতে পারে।

প্রশ্ন: স্কেলিং কী? কত মাস পর পর করা যায়?

উত্তর: স্কেলিং হল দাঁত পরিষ্কার করা। আগে হাতে করা হত। এখন মেশিনের সাহায্য করা হয়। প্রত্যেকের উচিত ছ’মাসে এক বার অন্তত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে দাঁতের সমস্যা রয়েছে কি না তা জানা। বছরে এক বার স্কেলিং করা যেতে পারে।

প্রশ্ন: একটা কথা প্রচলিত রয়েছে দাঁতে পোকা হয়েছে। দাঁতে কি পোকা হয়?

উত্তর: দাঁতে পোকা বলে কিছু হয় না। দাঁতের ক্যাভিটি-র দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসা না হলে দাঁতের ব্যথা শুরু হয়। চলতি কথায় একেই দাঁতের পোকা বলে।

প্রশ্ন: দাঁতে ক্যাভিটি হলে অনেকেই দাঁত তুলিয়ে নেন। এতে কি কোনও সমস্যা হয়?

উত্তর: দাঁত তুলে নিলে আর নতুন করে দাঁত আসে না। এক মাত্র দুধে দাঁতের পরিবর্তে স্থায়ী দাঁত জন্মায়। তখন চিবিয়ে খেতে অসুবিধা হয়। গাল বসে যায়। মুখের আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যায়।

প্রশ্ন: দাঁত না তুলে আর কী করা যেতে পারে?

উত্তর: দাঁতে ব্যথা হলে দাঁত না তুলে রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দাঁতের যে মূলটি রয়েছে তার সঙ্গে স্নায়ুর যোগাযোগ ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এ ভাবে দাঁতকে যন্ত্রণাহীন করে রাখা যায়। অবশ্যই দাঁতটি যেন খুব বেশি না নড়ে। রুট ক্যানাল ট্রিটিমেন্টের মাধ্যমে ব্যথা হচ্ছে এমন দাঁতকে না তুলে দীর্ঘ দিন সুস্থ রাখা যায় এবং খাবার চিবিয়ে খাওয়া যায়।

প্রশ্ন: দাঁতের ফিলিং করা বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: দাঁতের মধ্যে ছোট ছিদ্র হলে সেখানে খাবার ঢুকতে শুরু করে। সেই জায়গায় ক্যাভিটি-কে আর বাড়তে না দিয়ে জায়গাটিকে ভরাট করে দেওয়া হয়। একেই ফিলিং করা বলে।

প্রশ্ন: দাঁত তুলে সে জায়গায় নতুন দাঁত বসানো যায় কি?

উত্তর: তুলে দেওয়া জায়গায় মূলত তিন ভাবে নকল দাঁত লাগানো যায়। এক ধরনের অস্থায়ী নকল দাঁত লাগানো যায় যা ইচ্ছে মতো খুলে ফেলা যায়। স্থায়ী নকল দাঁতও লাগানো যায়, যা একবার লাগিয়ে দিলে আর খোলার দরকার হয় না এবং ডেন্টাল ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে নতুন করা দাঁত বসানো হয়।

প্রশ্ন: ডেন্টাল ইমপ্ল্যান্ট কী এবং তা করতে কত দিন সময় লাগে?

উত্তর: ডেন্টাল ইমপ্ল্যান্ট একটি সময় সাপেক্ষ চিকিৎসা। এতে প্রায় চার মাস পর্যন্ত সময় লাগে। দাঁত তোলার জায়গায় ছোট অপারেশনের মাধ্যমে একটি স্ক্রু জাতীয় জিনিস বসিয়ে দেওয়া হয়। সেটি ওই জায়গায় সেট হয়ে গেলে ক্রাউন লাগিয়ে দিয়ে পুনরায় নতুন দাঁত ফিরে পাওয়া যায়।

প্রশ্ন: উঁচু বা দাঁতের বিন্যাস এলোমেলো হলে কী ভাবে ঠিক করা সম্ভব?

উত্তর: নির্দিষ্ট চিকিৎসার মাধ্যমে দাঁতের মধ্যে তার বা বেল্ট লাগিয়ে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে দাঁতের বিন্যাস ঠিক করে নেওয়া সম্ভব হয়।

প্রশ্ন: দাঁতের চিকিৎসা কি সময় সাপেক্ষ?

উত্তর: সব চিকিৎসা নয়, তবে দাঁতের কিছু চিকিৎসা সময় সাপেক্ষ। এগুলি করানোর জন্য বেশ কয়েক বার ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। এ সব ক্ষেত্রে সময় না দিলে চিকিৎসা একে বারে অসম্ভব। বিশেষ করে রুট ক্যানাল চিকিৎসার জন্য ৩-৪ মাস লাগে। দাঁতের বিন্যাস ঠিক করতে যে চিকিৎসা করা হয় তার জন্য বছর দেড়েক সময় লেগেই যায়।

প্রশ্ন: দাঁতের ব্যথা শুরু হলে কী করা উচিত?

উত্তর: প্রথমত কখনই বাজার থেকে যন্ত্রণা কমানোর বা অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ কিনে খাওয়া উচিত নয়। যন্ত্রণা কমানোর ওষুধ যতটা কম খাওয়া যায় ততই ভালো। অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের কোর্স অবশ্যই শেষ করতে হবে। অনেকেই আছেন, দাঁতের যন্ত্রণা কমে গেলেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন। এটা করা একদম উচিত নয়। দাঁতের সমস্যাকে প্রাথমিক অবস্থায় গুরুত্ব না দিলে সেটা মারাত্মক আকার নিতে পারে। তাই কোনও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হবে।

প্রশ্ন: কী ভাবে দাঁতের যত্ন নেওয়া উচিত?

উত্তর: প্রতিদিন দু’বার দু’মিনিট ধরে দাঁত ব্রাশ করা উচিত। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে এবং রাতে খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে। অবশ্যই নরম ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। তিন মাস পর পর ব্রাশ পরিবর্তন করা উচিত। পাশাপাশি নয়, উপর-নীচে ব্রাশ করতে হবে। যে কোনো খাবার খাওয়ার পরে ভাল করে জল দিয়ে কুলি করতে হবে। কুলি করার সময় আঙুল দিয়ে মাড়ি ম্যাসাজ করতে হবে। খুব মিস্টি জাতীয় বা আঠালো খাবার বা পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। বেশি করে জল পান করতে হবে। লেবু ও পেয়ারা জাতীয় ফল বেশি করে খাওয়া উচিত। কারও মুখে বেশি ধারালো দাঁত থাকলে তা ঘষে ঠিক করে নিতে হবে।

প্রশ্ন: কী ধরনের পেস্ট ব্যবহার করা উচিত?

উত্তর: দাঁত পরিষ্কার করার জন্য খুব দামি পেস্ট ব্যবহার করার দরকার নেই। তা বলে আবার খুব সস্তা পেস্টও ব্যবহার করা উচিত নয়। নিজের সাধ্য অনুযায়ী বাজারচলতি পেস্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেকে পেয়ারা বা নিমকাঠি দিয়ে দাঁত মাজেন। এতেও কোনও ক্ষতি নেই। তবে তা এ ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে ব্যবহার করতে হবে, যাতে মাড়িতে ক্ষত না হয় সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

প্রশ্ন: বাচ্চাদের দাঁত কখন বের হয়?

উত্তর: মোটামুটি সাড়ে পাঁচ মাস বয়স থেকে দাঁত বের হতে পারে। তিন বছরের মধ্যে সব দুধের দাঁত বেরিয়ে যায়। যদি কখনও দেখা যায় বাচ্চাদের দাঁত বের হতে দেরি হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে শক্ত জাতীয় খাবার দেওয়া দরকার। দুধের দাঁত পরে সাড়ে পাঁচ বছরের আগে স্থায়ী দাঁত বের হয়।

প্রশ্ন: গজদন্ত কী?

উত্তর: আমাদের উপরের কৃন্তক দাঁত ঠিক জায়গায় না বেড়িয়ে মাঝেমধ্যে মাড়ির উপর বের হয়। তখন সেটাকে গজদন্ত বলা হয়। গজদন্ত ঠিকমতো জায়গায় না হলে তা দেখতে খারাপ লাগে। সে ক্ষেত্রে তার বা বেল্ট দিয়ে তা ঠিকমত জায়গাতে আনার চেষ্টা করা হয়।

প্রশ্ন: আক্কেল দাঁত কী?

উত্তর: উপর-নীচের আট নম্বর জায়গা থেকে দাঁতটি আঠারো বছর বয়সের পরে বের হয়। অনেক সময় ঠিকমতো জায়গা পাওয়া না যাওয়ার জন্য দাঁত ঠিকমতো জায়গায় বের হয় না। তখন ওই দাঁতটি বের হওয়ার জন্য পাশের দাঁতে চাপ দেয়। সে ক্ষেত্রে যন্ত্রণা হয়। বারবার ওই দাঁতটি থেকে যন্ত্রণা হলে তখন ডাক্তারের পরামর্শ মত তা তুলে নেওয়া উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Teeth Doctor Tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE