Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আইএসের কাশ্মীর-যোগ রুখতে মরিয়া কেন্দ্র

গত বছর অক্টোবর মাসের ঘটনা। শ্রীনগরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মিছিলে দেখা গেল আইএসের পতাকা। সিরিয়া, ইরাকে সক্রিয় আইএস ভূস্বর্গে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা, তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু করলেন গোয়েন্দারা। জম্মু-কাশ্মীর সরকারের তরফে অবশ্য দাবি করা হল, পাকিস্তানি মদতপুষ্ট স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরই টাকা দিয়ে আইএসের পতাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ছবি: রয়টার্স।

ছবি: রয়টার্স।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০৪:০১
Share: Save:

গত বছর অক্টোবর মাসের ঘটনা। শ্রীনগরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মিছিলে দেখা গেল আইএসের পতাকা। সিরিয়া, ইরাকে সক্রিয় আইএস ভূস্বর্গে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা, তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু করলেন গোয়েন্দারা। জম্মু-কাশ্মীর সরকারের তরফে অবশ্য দাবি করা হল, পাকিস্তানি মদতপুষ্ট স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরই টাকা দিয়ে আইএসের পতাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাশ্মীরি যুবকদের মধ্যে আইএসের কোনও প্রভাব নেই।

তার পরেও কিন্তু আইএসের পতাকা মাঝে মাঝেই দেখা গিয়েছে কাশ্মীরে। জম্মু-কাশ্মীর সরকারের মতো বিষয়টি সহজে উড়িয়ে দেননি কেন্দ্রের কর্তারা। তখনই সেনার ১৫ কোরের জিওসি লেফটেন্যান্ট জেনারেল সুব্রত সাহা বলেছিলেন, ‘‘এটা গভীর চিন্তার বিষয়। নিরাপত্তা সংস্থাগুলির শীর্ষ কর্তাদের এ দিকে নজর দেওয়া উচিত। আইএসের ফাঁদে পড়া থেকে কাশ্মীরি যুবকদের আটকাতেই হবে।’’

এ বার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে স্পষ্টই স্বীকার করা হল, আদতে পশ্চিম এশিয়ায় সক্রিয় আইএস ভারতে প্রভাব বাড়াতে কাশ্মীরি যুবকদের দলে টানার চেষ্টা করছে। ওই প্রভাব থেকে কাশ্মীরিদের বাঁচাতে বিশেষ পরিকল্পনা তৈরি করছে মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব এল সি গয়াল গোপন নোট পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দফতরের বিশেষ সচিব অশোক প্রসাদকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এই বিষয়ে একটি বিশেষ পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। এতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরো (আইবি)-র প্রাক্তন ডিরেক্টর আসিফ ইব্রাহিমেরও সাহায্য নেওয়া হবে। শুধু এ দেশে নয়, অন্য দেশেও বসবাসকারী কাশ্মীরি তরুণদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

কেন এই আশঙ্কা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক? গোয়েন্দা কর্তারা জানিয়েছেন, এর একমাত্র কারণ উপত্যকায় আইএস-এর পতাকা উদয় হওয়া নয়। ওই সংগঠন গোটা বিশ্বেই মুসলিম তরুণদের মৌলবাদের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। কাশ্মীরি যুবকেরা তাদের কাছে সহজ লক্ষ্যবস্তু হতে পারে। গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, কাশ্মীর উপত্যকায় ফের জঙ্গিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দেওয়াল লিখন দেখা যাচ্ছে। ছোটখাটো ধর্মীয় সভা থেকেও উস্কানিমূলক বিবৃতি আসার ঘটনা ঘটছে। টিভি দেখা চলবে না, মহিলাদের মুখ ঢেকে বোরখা পরেই রাস্তায় বের হতে হবে বলে নির্দেশ জারি করছেন স্বঘোষিত নেতারা। আফগানিস্তানে তালিবান, ইরাক-সিরিয়ায় আইএস এই ধরনের নির্দেশ জারি করে।

গোয়েন্দাদের সন্দেহ, আইএস এখন ভারতের মাটিতে নাশকতা ঘটানোর চেষ্টা করছে। তা হলে তাদের পক্ষে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রভাব বিস্তার করা আরও সহজ হবে। শুধু বিস্ফোরণ বা ওই ধরনের নাশকতা নয়, এ দেশে বসবাসকারী তুরস্কের নাগরিক, কূটনীতিক বা তুরস্কের দূতাবাসের উপরেও হামলা হতে পারে। দু’সপ্তাহ আগেই এ বিষয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছে আইবি। পাশাপাশি বিজেপি ও আরএসএস নেতাদের উপরেও হামলা হতে পারে মনে করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, আইএসের গতিবিধি নিয়ে খবর পেতে নিয়মিত মার্কিন গোয়েন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। আইএসের কোনও মডিউল এ দেশে ঢুকে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কাও করা হচ্ছে। সেই জন্যই অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির সঙ্গে সমন্বয় আরও জরুরি। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ভারত থেকে ১১ জন ইরাক ও সিরিয়ায় লড়াইয়ে আইএসের হয়ে যোগ দিয়েছেন বলে জানতে পারা গিয়েছে। পাঁচ জন আইএসের হয়ে লড়তে গিয়ে মারাও গিয়েছেন।

সাইবার জগতে আইএসের ভাবধারা প্রচারও কেন্দ্রের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। আইএসের ভাবধারা প্রচারের অভিযোগে বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতার যুবক মেহদি মসরুর বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়। গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে, মেহদির মতো ভারতে অন্তত আরও ৩৫ জন আইএসের হয়ে সাইবার জগতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন নয় যে আইএস এঁদের মগজ ধোলাই করেছে। এঁরা নিজেরাই আইএসের আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, হায়দারাবাদ এবং কলকাতায় বসে কয়েক জন এই প্রচার চালাচ্ছেন।

গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের বক্তব্য, ভারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইএস-এর দলটির উপরে এ দেশে নাশকতা ঘটানোর জন্য চাপ বাড়ছে। বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলি থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ইউসুফ আল হিন্দি নামে এক জন এই দলটির দায়িত্বে রয়েছে। এত দিন সে আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে বসে কাজ চালাচ্ছিল। সম্প্রতি সিরিয়ায় পাড়ি দিয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, এই ইউসুফ আদতে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের হয়ে কাজ করত। পরে সে করাচি পালিয়ে যায়। পাকিস্তানে লস্কর ও অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলিও আইএস-কে ভারতে হামলার বিষয়ে সাহায্য করছে।

আইএসের তৎপরতা যে বাড়বে, সেই আশঙ্কায় কোনও নাশকতা ঘটার আগেই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাদের নিষিদ্ধ সংগঠনের তালিকাভুক্ত করেছে কেন্দ্র। বিদেশ মন্ত্রকের একাংশের তাতে আপত্তি ছিল। কারণ এখনও ইরাকে আইএসের হাতে আটক ৩৯ জন ভারতীয় শ্রমিকের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁদের উদ্ধার করতে নানা মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ওই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গেই দর কষাকষি করতে হচ্ছে দিল্লিকে। কিন্তু মূলত তিনটি কারণে আইএস-কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা জানিয়েছেন। এক, আইএস ভারতেও সংখ্যালঘু তরুণদের মগজ ধোলাইয়ের চেষ্টা করছে। দুই, এই তরুণরা মগজ ধোলাই হয়ে বা আইএসের হাতে প্রশিক্ষণ পেয়ে ভারতে ফিরে এলে তা নিরাপত্তার জন্য চিন্তাজনক। তিন, আইএস সরাসরি ভারতে নিরাপত্তার জন্য চিন্তার কারণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE