চাপ আসছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে। তাই দিল্লি-আগরা সেমি হাই স্পিড ট্রেনের মহড়া সফল হওয়ার পরেই সারা দেশের আরও আটটি রুটে এই ধরনের ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রেল মন্ত্রক। আজ সংশ্লিষ্ট আটটি রুটের ডিভিশনাল ম্যানেজার (ডিআরএম)-দের ডেকে দু’সপ্তাহের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রাথমিক পর্বের ওই ন’টি রুটের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ নেই। তবে রেলকর্তারা আশা দিয়েছেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে শালিমার থেকে টাটানগর পর্যন্ত সেমি হাই স্পিড ট্রেন চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
গোটা দেশকে বুলেট ট্রেন দিয়ে জোড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তার জন্য চাই বিপুল অর্থ। স্রেফ মুম্বই-আমদাবাদ বুলেট ট্রেনের পরিকাঠামো নির্মাণেই খরচ হবে প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ কিলোমিটার পিছু একশো কোটি টাকারও বেশি। এ দিকে রেলের নুন আনতে পান্তা ফুরনোর দশা। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ ছাড়া এ দেশে বুলেট ট্রেন যে চালানো কার্যত অসম্ভব।
বুলেট ট্রেনের বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ বুঝেই সেমি হাই স্পিড ট্রেন চালানোয় বেশি জোর দিতে চাইছে কেন্দ্র। কারণ, বর্তমানে রেলের যে পরিকাঠামো (লাইন, ইঞ্জিন, কোচ, সিগন্যালিং ব্যবস্থা) রয়েছে, তাতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার গড় গতিবেগে (রেলের পরিভাষায় সেমি হাই স্পিডে) ট্রেন চালানো সম্ভব। তাই পরিকাঠামো অল্পবিস্তর আধুনিক করে গোটা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরকে অন্তত সেমি হাই স্পিড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জোড়ায় জোর দিচ্ছেন মোদী।
বস্তুত, রেল বাজেটেই ন’টি রুটে সেমি হাই স্পিড ট্রেন চালানোর ঘোষণা হয়েছিল। তার মধ্যে দিল্লি-আগরা পরীক্ষামূলক দৌড় সফল। এই বছরেই ওই রুটে অত্যন্ত দ্রুতগামী যাত্রিবাহী ট্রেন চালানো শুরু হওয়ার কথা। বাকি আটটি রুটের কাজও কেন তড়িঘড়ি সারতে চাইছে রেল মন্ত্রক?
এক কর্তার বক্তব্য, “সাপ্তাহিক ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে, বকলমে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেই সেমি হাই স্পিডের অগ্রগতি নিয়ে চাপ আসছে। তাই তড়িঘড়ি কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, সামনেই মহারাষ্ট্রে বিধানসভা নির্বাচন। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই মহারাষ্ট্র থেকে চারটি সেমি হাই স্পিড রুটকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে দিল্লি, তেলঙ্গানা, গুজরাত ও তামিলনাড়ুর বিভিন্ন রুট।
আজ এই হাই স্পিড রুটগুলির সংশ্লিষ্ট ডিআরএম-দের বৈঠক ডাকেন রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান অরুণেন্দ্র কুমার। পরে তিনি বলেন, “আগরা ও দিল্লির ডিআরএম বাকিদের বোঝান, কী ভাবে তাঁরা বর্তমান পরিকাঠামোর মধ্যে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালিয়েছেন। নতুন রুটগুলির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ডিআরএম-দের বলা হয়েছে, তাঁদের এলাকায় ওই গতিতে ট্রেন চালাতে গেলে কী কী সমস্যা হতে পারে, সে বিষয়ে দু’সপ্তাহের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে।”
মন্ত্রকের দাবি, বর্তমান পরিকাঠামোয় ১৬০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চালানো সম্ভব। লাইনের ‘অ্যালাইনমেন্ট’ ঠিক থাকলে অর্থাৎ লাইনটি সোজা ভাবে পাতা থাকলেই অর্ধেক সমস্যা মিটে যায়। লাইনে যত বেশি বাঁক থাকে, গাড়ির গতি তত কমে। অরুণেন্দ্র কুমার জানান, ওই আটটি রুটে প্রতি মিটার লাইনে গাড়ির সর্বোচ্চ গতি কত থাকছে, সে বিষয়ে একটি স্পিডোগ্রাফও বানাতে বলা হয়েছে। সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনে যেখানে লাইনে বাঁক রয়েছে, তা সোজা করার চেষ্টা হবে। তা ছাড়া স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা ও লাইনের দু’ধারে বেড়া থাকতে হবে, প্রহরীবিহীন লেভেল ক্রসিং থাকা চলবে না। লক্ষ্য একটাই গড় বেগ ১৬০ কিলোমিটারে ধরে রাখা।
মন্ত্রকের দাবি, গোটা দেশের মধ্যে মোট ১৭টি হাই স্পিড লাইনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্বে ন’টি রুটকে বাছা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আটটি রুটে দ্রুতগতির ট্রেন চালানো হবে। তারই মধ্যে রয়েছে শালিমার থেকে টাটানগর রুটটি। আপাতত তাই দ্রুতগতির সফরের রোমাঞ্চ থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে রাজ্যবাসীকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy