Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

উষ্ণতা বাড়াতে চাই, আমেরিকাকে বার্তা মোদীর

ইতিহাস যা-ই হোক, ভারত ও আমেরিকা কৌশলগত ভাবে আরও কাছাকাছি আসতে পারে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আমেরিকা সফরের আগে একটি মার্কিন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। ওই সাক্ষাৎকারে ভারতীয় মুসলিমদের দেশপ্রেম প্রসঙ্গে মোদীর মন্তব্য নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। আজ পুরো সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে ওই চ্যানেল।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১৫
Share: Save:

ইতিহাস যা-ই হোক, ভারত ও আমেরিকা কৌশলগত ভাবে আরও কাছাকাছি আসতে পারে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আমেরিকা সফরের আগে একটি মার্কিন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।

ওই সাক্ষাৎকারে ভারতীয় মুসলিমদের দেশপ্রেম প্রসঙ্গে মোদীর মন্তব্য নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। আজ পুরো সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে ওই চ্যানেল। প্রশ্নকর্তা সাংবাদিক জানান, আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে আগে নানা বিরোধ হয়েছে। বিশ্বের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম গণতন্ত্র আরও ঘনিষ্ঠ মিত্র হতে পারে কি না তা মোদীর কাছে জানতে চান তিনি। মোদীর জবাব, “এক কথাতেই এর উত্তর দেওয়া যায়-হ্যা।”ঁ তাঁর মতে, গত শতাব্দীতে দু’টি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমেরিকায় সারা বিশ্বের মানুষ গিয়ে বাস করেছেন। আর বিশ্বের সব প্রান্তেই অন্তত এক জন ভারতীয় আছেন। এ থেকেই বোঝা যায়, দু’দেশের মানুষেরই অন্য পরিবেশে, ভিন্ন দেশ থেকে আসা মানুষের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “আগে আমাদের সম্পর্কে ওঠাপড়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে একবিংশ শতাব্দীর গোড়া পর্যন্ত সময়ে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক

অনেক বদলেছে। ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সূত্রে বাঁধা।”

ইতিমধ্যেই ভারত সফরে এসেছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের একাধিক কর্তা। কিন্তু মোদীর মতে, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক কেবল দিল্লি-ওয়াশিংটনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও নানা মাত্রা রয়েছে। দিল্লি ও ওয়াশিংটন এই বহুমাত্রিক সম্পর্ককে উৎসাহ দেয়।

চিনের মতো ৮-৯ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি ভারতে হবে বলে মনে করেন কি মোদী? বা চিনা সরকারের মতো ক্ষমতা হাতে পেলে কি খুশি হতেন তিনি? দক্ষিণ এশিয়ায় দুই বড় শক্তির ঠাণ্ডা লড়াইয়ের প্রেক্ষিতে মোদীকে পড়তে হয়েছে এই প্রশ্নের মুখেও। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “চিন যদি এক ধরনের নজির হয়, তবে গণতান্ত্রিক দেশগুলি অন্য ধরনের নজির তৈরি করেছে। গণতন্ত্রের শক্তিতে আমার ভরসা রয়েছে।” মোদীর মতে, ভারতের অন্য কোনও দেশের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। দেশে বিপুল জনসংখ্যা ও দক্ষতা রয়েছে। তাকে পরিচালনা করার মতো স্পষ্ট পরিকল্পনাও তাঁর সরকারের রয়েছে বলেই দাবি মোদীর।

ক্রাইমিয়া দখল ও ইউক্রেনে রাশিয়ার কার্যকলাপ নিয়ে ভারত তেমন সরব হয়নি কেন তা মোদীর কাছে জানতে চান প্রশ্নকর্তা সাংবাদিক। ইউক্রেনের আকাশে মালয়েশিয়ার একটি বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় যাত্রীদের মৃত্যুতে অভিযোগের আঙুল উঠেছিল রাশিয়ার দিকে। সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে মোদীর জবাব, “যাই ঘটে থাক বিমান ধ্বংস হয়ে বেশ কয়েক জন নিরীহ মানুষ মারা গিয়েছেন। ভারত চায় আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হোক।”

মোদীর কথায়, “তাদেরই কিছু উপদেশ দেওয়া শোভা পায় যারা নিজেরা ত্রুটিমুক্ত। এখন বিশ্বে অনেকেই উপদেশ দিতে চায়। কিন্তু দেখা যায় তারাও কোনও না কোনও ভাবে দোষী।”

মালয়েশীয় বিমানে হামলা ও ইউক্রেনে রুশ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সরব হয় আমেরিকা-সহ বিভিন্ন পশ্চিমী দেশ। কিন্তু আফগানিস্তান থেকে সেনা সরানোর আগে তালিবানের একাংশের সঙ্গে আলোচনা চালাতে চায় সেই আমেরিকাই। দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন নীতির ফলে অনেক বারই সমস্যায় পড়তে হয়েছে ভারতকে। তাই ইউক্রেন প্রসঙ্গে ‘দোষের’ কথা বলে মোদী আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দুনিয়াকেও বার্তা দিতে চাইলেন কি না তা নিয়ে কূটনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠেছে।

একমেরু বিশ্বে বরাবরই রাশিয়া, চিনকে সঙ্গে নিয়ে বহুমাত্রিক কূটনীতি করতে চেয়েছে দিল্লি। মোদীও ওয়াশিংটন-বেজিং-মস্কোর সঙ্গে সমান উষ্ণতা বজায় রাখারই চেষ্টা করছেন বলে মনে করেন কূটনীতিকরা। আমেরিকায় তিনি কী ভাবে এই পথে এগোন তা-ই এখন দেখার।

নয়া ভিসার প্রস্তাব সরকারের

আমেরিকার নাগরিকদের জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকার ‘দেশে এলে ভিসা’ (ভিসা অন অ্যারাইভাল) চালু করতে চায় বলে সরকারি সূত্রের খবর। প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফরের সময়েই এই বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা। যে সব মার্কিন নাগরিক ভারতে চাকরি করেন বা যাঁদের এ দেশে বাড়ি নেই কেবল তাঁদেরই এই ভিসা দেওয়া হবে। ভারতে বেড়াতে এলে বা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে এলে এই ভিসা ব্যবহার করতে পারবেন মার্কিন নাগরিকেরা। তাতে ৩০ দিন পর্যন্ত ভারতে থাকার অনুমতি পাবেন ওই নাগরিকরা। এখন জাপান-সহ ১১টি দেশের নাগরিকদের এই ভিসা দেয় নয়াদিল্লি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE