Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ বার সোরেনের ঘাঁটিতে জিততে কৌশল বিজেপির

ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের শেষ পর্বে সাঁওতাল পরগনার ভোট যেন বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল। একের পর এক নির্বাচনে জিততে থাকা বিজেপি জার্মানির কায়দায় নতুন নতুন রণকৌশল নিয়ে জেএমএমের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। আর্জেন্তিনার মতো আক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা করছে জেএমএম।

দুমকায় নির্বাচনী প্রচারে শিবু সোরেন। চন্দন পালের তোলা ছবি।

দুমকায় নির্বাচনী প্রচারে শিবু সোরেন। চন্দন পালের তোলা ছবি।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
দুমকা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
Share: Save:

ঝাড়খণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের শেষ পর্বে সাঁওতাল পরগনার ভোট যেন বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল। একের পর এক নির্বাচনে জিততে থাকা বিজেপি জার্মানির কায়দায় নতুন নতুন রণকৌশল নিয়ে জেএমএমের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। আর্জেন্তিনার মতো আক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা করছে জেএমএম।

নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, রাজনাথ সিংহ, উমা ভারতী, সুষমা স্বরাজ, হেমা মালিনী, বাবুল সুপ্রিয়বিজেপি নেতাদের লম্বা লাইন সিধো-কানহুর সাঁওতাল পরগনায়। চলছে একের পর এক প্রচার সভা। অন্য দিকে, জেএমএমের পক্ষে লিওনেল মেসির মতো কার্যত একাই লড়ছেন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। যেখানে সঙ্কট তীব্র, সেখানে হাজির করছেন অসুস্থ, বৃদ্ধ পিতা, সাঁওতাল পরগনার ‘দিশম গুরু’ শিবু সোরেনকে।

কোনও এলাকা ফেলে রাখছে না বিজেপিও। পর পর প্রচারে ‘স্টার ক্যাম্পেনার’দের লাগাতার আক্রমণের পিছনে রয়েছেন অর্জুন মুন্ডা, রঘুবর দাস, রভিদার রাইদের মতো রাজ্যের শীর্ষ নেতারা। এমনকী উত্তরপ্রদেশ, বিহার থেকে আরএসএস প্রচারকরাও যাচ্ছেন প্রত্যন্ত গ্রামে। কোথাও নির্বাচনী ময়দানের এক ইঞ্চি জমিও যেন ফাঁকা না পায় জেএমএম! আসলে ৮১ আসনের ঝাড়খণ্ড বিধানসভার ২০টি আসনই সাঁওতাল পরগনায়। সে কারণেই রাজ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গড়তে নির্ধারকের ভূমিকা নিতে পারে ওই এলাকাই।

অন্য দিকে, সাঁওতাল পরগনা হাতছাড়া হওয়া মানে জেএমএমের অস্তিত্বের সঙ্কট। ফলে সোরেন পরিবারের ঘাঁটি রক্ষা করা এখন হেমন্তের কাছে বড় দায়। তা না হলে ‘গুরুপুত্রের’ নেতৃত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার মধ্যেই। সে কারণেই ঘুম নেই হেমন্তের চোখে। যেখানেই বিজেপির বড় জনসভা হচ্ছে, সেখানেই পাল্টা সভা করতে ছুটছেন তিনি। নয়তো পাঠানো হচ্ছে দলের গুরুজিকে। পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত জেএমএম নেতা-কর্মীদের অনেকেই। দুমকার খিজারা রোডের সোরেন নিবাসে কর্মীদের ভিড়ে হাজির বোকারোর কয়েক জন নেতা। এক জনের কথায়, “এ বারের লড়াই একেবারে অন্য রকম। ওদের (বিজেপি) একাধিক নেতা নির্বাচনে কাজ করছেন। আমাদের তো মাত্র দু’জন!”

ভোটে জিততে বিজেপি যে মরিয়া তার টাটকা উদাহরণ মিলেছে সাঁওতাল পরগনায়, বিশেষত দুমকায়। সেখানে বিজেপি নেতারা আচমকাই সোরেন পরিবারের বিরুদ্ধে আক্রমণের তেজ হঠাৎ কমিয়ে দিয়েছেন। ১৪ তারিখ রাজমহলে অমিত শাহ বলেছিলেন, “বাবা কয়লা চুরি করেছেন, ছেলে বালি।” ১৫ তারিখ দুমকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কিছুটা সুর বদলে সাঁওতাল ভোটারদের বললেন, “আপনারা ওঁদের যখন ভালবাসেন, তখন ওঁদের শোধরানোর জন্য এ বার অন্তত সাজা দিন। পরের বার ওরা নিশ্চয় শুধরে যাবেন।”

দেড় মাস আগে থেকে দুমকার মাটি কামড়ে পড়ে থাকা রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা টি এস রাওয়াতের কথায়, “এক এক জায়গায় এক এক রকম সমস্যা। আমরাও জায়গা অনুযায়ী কৌশল বদলাচ্ছি।” এক বিজেপি নেতার কথায়, “সাঁওতাল পরগনায় গুরুজি শিবু সোরেন কার্যত ‘মিথ’ হয়ে গিয়েছেন। অন্যান্য জায়গার মতো এখানে ওকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করা হলে, ভোটারদের মনে প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে। তাতে হিতে বিপরীত হবে।” রাওয়াতের কথায়, টেলিফোনে সাঁওতাল পরগনায় দলের গতিবিধির খোঁজ নিচ্ছেন অমিত শাহ। তাঁর নির্দেশে নেতা, প্রার্থী প্রত্যেককেই বুকে পদ্মফুল লাগানো প্রতীক পরে ঘুরছেন। সাঁওতাল পরগনার মানুষকে ‘পদ্ম’র সঙ্গে পরিচিত করাতে হবে। বিজেপির দেখাদেখি জেএমএম নেতা কর্মীরাও বুকে দলীয় প্রতীক ‘তির-ধনুক’ লাগিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। তাঁরা চাইছেন, এ ভাবেই আদিবাসী-অভিমান জাগিয়ে তুলতে। দুমকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় ‘এলইডি’ বসানো জেএমএমের প্রচার গাড়ি ঘুরছে। গান বাজছে তারস্বরে। হুলের গান, লড়াইয়ের গান, গুরু-বন্দনা।

বিজেপি চাইছে যে ভাবেই হোক জেএমএম দুর্গে ফাটল ধরাতে। দুর্গ রক্ষায় মরিয়া জেএমএম। ২০ তারিখ ভোট, ২৩ ডিসেম্বর গণনা। তার পরই বোঝা যাবে চূড়ান্ত খেলায় শেষ পর্যন্ত জিতল কে সোরেন না মোদী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dumka jharkhand Shibu Soren probal gangyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE