Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কপাল ফেটে রক্ত, বিমান খুঁজলেন ইয়েচুরিকে

কলকাতায় পুরভোটের বাজারে রক্তাক্ত হচ্ছেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। কলকাতা থেকে দূরে থেকেও কপাল ফেটে রক্ত ঝরল বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর। তাঁকে নিয়েই শুক্রবার হইচই পড়ে গেল সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে। বিমানবাবুর যা হয়েছে, তা অবশ্য নিছকই দুর্ঘটনা। হোটেলে নিজের ঘরে মাথায় আঘাত পাওয়ায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল ৭৪ বছরের এই সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্যকে।

বিশাখাপত্তনমের হোটেলে বিমান বসু। — নিজস্ব চিত্র।

বিশাখাপত্তনমের হোটেলে বিমান বসু। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিশাখাপত্তনম শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩১
Share: Save:

কলকাতায় পুরভোটের বাজারে রক্তাক্ত হচ্ছেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। কলকাতা থেকে দূরে থেকেও কপাল ফেটে রক্ত ঝরল বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর। তাঁকে নিয়েই শুক্রবার হইচই পড়ে গেল সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে।

বিমানবাবুর যা হয়েছে, তা অবশ্য নিছকই দুর্ঘটনা। হোটেলে নিজের ঘরে মাথায় আঘাত পাওয়ায় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল ৭৪ বছরের এই সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্যকে। কপালের ডান দিকে ক্ষতস্থানে তিনটি সেলাই পড়েছে। অকুতোভয় বিমানবাবু অবশ্য চিকিত্সকদের পরামর্শ মেনে হাসপাতালে থাকেননি। ভোররাতেই ফিরে এসেছেন হোটেলে। তবে দলীয় সতীর্থদের চাপাচাপিতে পার্টি কংগ্রেসের চতুর্থ দিন এক বেলা ঘরেই বিশ্রাম নিয়েছেন। কেউ খোঁজ নিতে গেলে ঈষত্ বিড়ম্বিত হয়েই বলেছেন, ‘‘আমি ঠিক আছি!’’

পার্টি কংগ্রেসে যোগ দিতে আসা সিপিএমের সব পলিটব্যুরো সদস্যেরই থাকার ব্যবস্থা হয়েছে বিশাখাপত্তনম শহরের সূর্যবাগ এলাকার একটি হোটেলে। দোতলায় করিডর জুড়ে দু’পাশের পর পর ঘরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন পলিটব্যুরোর সদস্যেরা। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা নাগাদ নিজের ঘরে বিছানা থেকে নামতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন বিমানবাবু। উঠে দাঁড়াতে গিয়ে ঘরের টেবিলের মার্বেল টপে সজোর মাথা ঠুকে যায়। কপাল থেকে গাল বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে টের পেয়ে তিনি নিজেই তোয়ালে দিয়ে ক্ষতস্থান চেপে ধরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। একটু ধাতস্থ হয়ে তার পরে বাইরে বেরিয়ে অন্য ঘরে গিয়ে ঘুম থেকে তোলেন সীতারাম ইয়েচুরিকে। স্বেচ্ছাসেবকদের খবর দিয়ে বিমানবাবুকে হাসপাতালে পাঠানোর বন্দোবস্ত করেন ইয়েচুরিই। খবর পেয়ে বিমানবাবুর কাছে আসেন দলের চিকিত্সক-নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও।

মাথায় সেলাই নিয়ে ফিরে এ দিন বিমানবাবু নিজে বলেছেন, ‘‘ঘুমচোখে ঘটে গিয়েছে। চিন্তার কিছু নেই। আমি ভাল আছি!’’ চিকিত্সকেরা দফায় দফায় পরীক্ষা করেছেন, বয়সের কারণেই উদ্বিগ্ন হয়ে সাবধানে থাকতে বলেছেন। সকাল সকাল প্রকাশ কারাট থেকে শুরু করে বাকি সব শীর্ষ নেতা তাঁর ঘরে ছুটে গিয়েছেন। বিমানবাবু অবশ্য অবিচলিত! কেন এমন দুর্ঘটনা ঘটল, তার কারণ নিজেই বিশদে বিশ্লেষণ করে দিয়েছেন!

এমনিতেই সরল-সোজা বিমানবাবুকে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা ভালবাসেন। তাঁর মাথা ফাটার খবরে হোটেলে ভিড় জমেছে। দরজার বাইরে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে। ভালবাসার অত্যাচার দেখে বিচলিত বিমানবাবু বলেন, ‘‘আমি কি খাঁচার জীব নাকি, সবাই দেখতে আসছে!’’ দ্রুত তিনি কাজে ফিরতে চান। কলকাতা থেকেও বাম নেতারা ফোন করেছেন। এ সবের মধ্যেও বিমানবাবু আত্মবিশ্বাস হারাননি!
একে তো হাসপাতাল থেকে রাতেই চলে এসেছেন চিকিত্সকদের পরামর্শকে আমল না দিয়ে। তার উপরে রাত-পাহারার জন্যও সঙ্গীও নিতে চাননি। চিকিত্সকদের উপদেশে
দলের এক সহকর্মী রাতে বিমানবাবুর সঙ্গে ওই ঘরে থাকবেন বলে ঠিক হয়েছিল। সিদ্ধান্ত উল্টে দিয়েছেন বিমানবাবুই। কারণ? নিজের শরীর সামলে নেবেন। কিন্তু ঘুমোনোর সময় সেই পরিচিত কর্মীর বিপুল নাসিকা গর্জন তিনি সামলাতে পারবেন না!

সে না হয় হল! কিন্তু অত রাতে বিপদের সময় ইয়েচুরির কথাই মনে পড়ল কেন? দলে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে নাকি? গুঞ্জন চলছে দলীয় মহলে! বিমানবাবুর অবশ্য যুক্তি— তেলুগু ভাষা জানার সুবাদে ইয়েচুরিই ঠিক জায়গায় যোগাযোগ করতে পারতেন। দলেই কারও কারও সবিস্ময় প্রতিক্রিয়া, মাথা ফেটে রক্তপাতের মধ্যেও তেলুগু-যুক্তি মাথায় ছিল বিমানবাবুর!

মাথা ফাটুক আর যা-ই ঘটুক, বিমান আছেন বিমানেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE