Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

করিমগঞ্জ জেলে উত্তেজনা

করিমগঞ্জ জেলা সংশোধনাগারে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। বন্দিরা অনশন শুরু করেছেন। জখম দুই কয়েদির চিকিৎসা করানো হয়েছে করিমগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
করিমগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৬ ০৩:১২
Share: Save:

করিমগঞ্জ জেলা সংশোধনাগারে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। বন্দিরা অনশন শুরু করেছেন। জখম দুই কয়েদির চিকিৎসা করানো হয়েছে করিমগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে।

গত কাল জেল সুপারের উপর হামলার ঘটনার পর আজও ফের উত্তেজনা ছড়ায় সংশোধনাগারে। মইনুল হক এবং সুজয় দাসকে জেলের রক্ষীরা বেঝড়ক মারধর করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। বন্দিদের একাংশের অভিযোগ, রমজান মাস উপলক্ষে সংখ্যালঘু কয়েকটি সংগঠনের তরফে মাছ খাওয়ার জন্য দুই কিস্তিতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ-প্রহরায় জেলবন্দি মইনুল হক এবং ইয়াসিন আলি মাছ কিনতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, জেল সুপার হবিবুর রহমান তাঁর জন্য দেশি মাছ কিনে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। মইনুলরা তাতে আপত্তি জানান।

তাঁদের বক্তব্য ছিল— শুধু সুপারের জন্য নয়, জেলর, সহকারী জেলরকেও মাছ খাওয়ানো হবে। সে জন্য ১২ টুকরো দেশি মাছ কিনে নিয়ে আসা হয়। অভিযোগ, জেল সুপার হবিবুর রহমানকে সবক’টি মাছই কেড়ে নেন। এ নিয়ে দু’পক্ষে বচসা শুরু হয়। অভিযোগ, জেলের এক রক্ষী এক বন্দির মাথা দেওয়ালে ঠুকে দেন। তা নিয়ে অন্য বন্দিরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন। জেল সুপার হবিবুর রহমানের উপর আক্রমণ করা হয় বলে অভিযোগ। গত কাল থেকেই বন্দিরা অনশন শুরু করেন। করিমগঞ্জের অতিরিক্ত জেলাশাসক ধ্রুবজ্যোতি দেব সংশোধনাগারে গিয়ে সমস্ত ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দেন।

কিন্তু তার পরও এ দিন সকালে মইনুল হক এবং সুজয় দাস নামে দুই বন্দিকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তার জেরে ফের অনশন শুরু করে বন্দিরা। জেল সুপারের বিরুদ্ধে জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়। নালিশ পাঠায় মানবাধিকার কমিশনেও। জেল সুপার এ বিষয়ে সংবাদমাধ্য়মের মুখোমুখি হতে চাননি।

এ দিকে, এক যুগ পর করিমগঞ্জে এলেন অসম পুলিশের ডিজি। ২০০৪ সালে ডিজি পি ভি সুমনের পর অন্য কোনও পুলিশ প্রধান করিমগঞ্জে আসেননি। প্রায় ১২ বছর পর আজ করিমগঞ্জে এলেন ডিজিপি মুকেশ সহায়।

করিমগঞ্জে এসে তিনি থানার ওসি, সার্কেল ইন্সপেক্টর-সহ অন্য পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের ডিজিপি বলেন, ‘‘করিমগঞ্জ একটি প্রান্তিক শহর। তাই অসমের অন্য জেলার তুলনায় এখানকার গুরুত্ব অনেক বেশি।’’ করিমগঞ্জ জেলায় থাকা পুলিশের ‘সেকেন্ড-লাইন অব ডিফেন্স’-কে আরও মজবুত করা হবে বলে তিনি জানান। এ নিয়ে বিএসএফের সঙ্গেও আলোচনা করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, জাতীয় নাগরিক পঞ্জির বিষয়ে পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। যারাই জাল নথিপত্র জমা দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। পুলিশের স্বল্পতা নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

বর্তমান পুলিশ প্রধান মুকেশ সহায় এক সময় করিমগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার পদে ছিলেন। আজ সুদীর্ঘ বছর পর করিমগঞ্জে এসে অনেকটা আবেগপ্রমণ হয়ে পড়েন তিনি। তাঁর কথায়, সেদিনের করিমগঞ্জ আর আজকের করিমগঞ্জের মধ্যে ফারাক অনেকটাই। অবশ্য সেটাকে যুগের পরিবর্তন বলেই উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, করিমগঞ্জে কর্মরত অবস্থায় অনেক কিছু শিখেছিলেন তিনি। যা আজও কাজে আসছে। পুলিশ প্রধানের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র দফতরের অফিসার মীনাক্ষি সুন্দরম ছাড়াও রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তা আর এম সিংহ, এ কে সিংহ কাশ্যপ, অনুরাগ আগরওয়াল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jail karimgunj Conflict
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE