বিরোধী-ঐক্যে ভাঙন ধরিয়ে সংসদে জমি বিল পাশ করাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন নরেন্দ্র মোদী।
জমি বিল নিয়ে এককাট্টা বিরোধীদের ছত্রভঙ্গ করতে সরকার এখন দ্বিমুখী কৌশল নিচ্ছে। এক দিকে, সংসদের ভিতরে ও বাইরে কংগ্রেসের ‘দ্বিচারিতা’ তুলে ধরছে সরকার। পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মুলায়ম সিংহ যাদব, শরদ পওয়ারের মতো বিরোধী নেতানেত্রীদের সঙ্গেও আলাদা করে আলোচনা করে বিল নিয়ে তাঁদের বিরোধিতার সুর নরম করাতে চাইছে।
সেই সূত্র ধরেই আজ সংসদে আক্রমণ শানান প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম সেনাপতি অরুণ জেটলি। তিনি মনমোহন সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার লেখা একটি চিঠি পড়ে শোনান। আনন্দ এখন রোজ জমি বিলের বিরোধিতায় মুখর হচ্ছেন। সেই আনন্দই ২০১২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে লেখা চিঠিতে বলেছিলেন, কৃষকদের সম্মতি নিয়ে জমি নিতে গেলে পরিকাঠামো প্রকল্প ধাক্কা খাবে। নগরায়নের গতি স্তব্ধ হয়ে যাবে। ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সম্মতি নেওয়ার ব্যাপারে জোর দেওয়া হলে জমি অধিগ্রহণে দেরি হবে। প্রকল্প আটকেও যেতে পারে। এর ফলে উৎপাদন ও শিল্পায়নে সুদূর প্রসারী প্রভাব তো পড়বেই, জমির দাম বেড়ে যাবে।
এই চিঠি পড়ে শুনিয়ে জেটলি এ দিন বলেন, “এখন আমাদের কৃষক-বিরোধী বলা হচ্ছে। অথচ আনন্দ শর্মা তখন যা বলেছিলেন, এখন আমরা ঠিক সেই কথাই বলছি।” জেটলি বুঝিয়ে দেন, প্রকাশ্যে মোদী সরকারের জমি বিলের বিরোধিতা করলেও গত জমানার গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ কিন্তু ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় ভিন্ন কথা বলেন। রাজ্যসভার বিতর্কের মধ্যে এ ভাবে পুরনো চিঠি তুলে জেটলি যে অস্বস্তিতে ফেলতে পারেন, তার জন্য প্রস্তুতই ছিলেন না
আনন্দ শর্মা। জেটলির অভিযোগের জবাবে তিনি জানান, তিনি জাতীয় শিল্প করিডরের জন্য সওয়াল করেছিলেন, বেসরকারি প্রকল্পের জন্য নয়। দৃশ্যতই জেটলির আক্রমণে তখন হতভম্ব কংগ্রেস।
সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে যে কৃষকদের উপেক্ষা করার অভিযোগ আনছে, জেটলি তখন তারই জবাব দিয়ে চলেছেন। বলছেন, “ইউপিএ আমলের বিলেই ১৩টি এমন ক্ষেত্র ছিল, যেখানে কৃষকদের সম্মতি নেওয়ার কথা বলা ছিল না। মোদী সরকার সেখানে আরও পাঁচটি ক্ষেত্র যোগ করেছে মাত্র। আর সেগুলিও গরিব মানুষের উন্নয়নের জন্য।” এর পরেই জেটলি কংগ্রেস নেতাদের বলেন, “দেশে এমন পরিবেশ তৈরি করবেন না যেখানে মনে হবে শিল্প ও পরিকাঠামো নিয়ে কথা বলাও অপরাধ!” বিজেপির এক নেতা পরে জানান, সরকারের লক্ষ্য লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও বিলটি পাশ করানো। বাজেট পেশের পরেই সরকার এই বিলটি সংসদে নিয়ে আসবে আলোচনার জন্য। রাজ্যসভায় পরাস্ত হলে যৌথ অধিবেশন ডেকেও সরকার বিলটি পাশ করাতে পারে। তবে তার আগে বিরোধীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন আদায়ের চেষ্টাও করা হচ্ছে। ভোটাভুটির সময় কেউ যদি সভাকক্ষ ত্যাগ করে, এমনকী বিলের বিরুদ্ধে ভোটও দেয়, তাতেও ক্ষতি নেই। তখন সরকার যৌথ অধিবেশন ডেকে বিল পাশ করাতে পারবে।
কিন্তু বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করা না গেলে এ সব কিছুই সম্ভব নয়। তাই সরকার চাইছে, মমতা-মুলায়মদের বুঝিয়ে বিলটি যে ভাবেই হোক রাজ্যসভায় পেশ করতে। মোদী এর মধ্যেই মুলায়ম-লালুর পারিবারিক বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। শরদ পওয়ারের সঙ্গেও একমঞ্চে ছিলেন। নানা কারণে এই নেতারাও এখন কেন্দ্রের সঙ্গে সখ্য বজায় রাখতে চাইছেন। মুলায়ম আজ কিছুটা স্বস্তির বার্তা দিয়েছেন কেন্দ্রকে। শিবসেনা বাজেটের সমালোচনা করলেও মুলায়ম উল্টো পথে হেঁটে জানিয়েছেন, বকেয়া প্রকল্পগুলিই রূপায়ণের উপর যে জোর দেওয়া হয়েছে, সেটি ভাল কাজ।
সম্প্রতি একজোট হওয়া সাবেক জনতা পরিবারের মধ্যে থেকে কিছুটা জমি আয়ত্তে এনে দিনের শেষে খুশি হতেই পারেন মোদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy