Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কোনও ফাইল পড়ে নেই রাষ্ট্রপতির টেবিলে

ইয়াকুব মেমনের আগে আরও ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজ করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। পরে আরও ৮ জনের। এর মধ্যে ইয়াকুব, আফজল গুরু ও আজমল কসাব ছাড়া বাকিদের কেন ফাঁসি হয়নি, সে অন্য বিতর্ক। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখার কোনও দায় নিজের ওপর রাখলেন না রাষ্ট্রপতি।

শঙ্খদীপ দাস
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৫ ০৪:১৬
Share: Save:

ইয়াকুব মেমনের আগে আরও ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজ করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। পরে আরও ৮ জনের। এর মধ্যে ইয়াকুব, আফজল গুরু ও আজমল কসাব ছাড়া বাকিদের কেন ফাঁসি হয়নি, সে অন্য বিতর্ক। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে, সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখার কোনও দায় নিজের ওপর রাখলেন না রাষ্ট্রপতি। বরং এ ব্যাপারে তাঁর টেবিল পরিষ্কার রেখে হালফিলের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

রাইসিনা সূত্রের কথায়, প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালাম যখন অবসর নেন, তখনও মৃত্যুদণ্ড মকুবের প্রায় দু’ডজন ফাইল তাঁর টেবিলে পড়ে ছিল। প্রতিভা পাটিলের জমানায় ত্রিশ জনের ফাঁসির সাজা মকুব হলেও, সব ক’টি প্রাণভিক্ষার আর্জি নিয়ে তিনিও সিদ্ধান্ত নেননি। রাষ্ট্রপতি পদে প্রণববাবুর ঠিক তিন বছর হয়েছে। এর মধ্যেই ২৬টি প্রাণভিক্ষার আর্জি বিবেচনা করে দেখেছেন রাষ্ট্রপতি। ২৪ জনের মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি খারিজ করেছেন। আর দু’জনের ফাঁসির সাজা মকুব করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পক্ষে রায় দিয়েছেন। মেমনকে নিয়ে তাঁর তিন বছরের মেয়াদে তিন জনের ফাঁসিও হল। ফাঁসি মকুবের ব্যাপারে আর কোনও ফাইল আপাতত তাঁর কাছে নেই।

সংবিধানের ৭২ নম্বর ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি কারও ফাঁসির সাজা মকুব করতে পারেন ও তার পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাবাসের পক্ষে মত জানাতে পারেন। যদিও নিজে নয়, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তথা মন্ত্রিসভার পরামর্শেই এই সিদ্ধান্ত নেন রাষ্ট্রপতি। সাম্প্রতিক কালে দেখা গিয়েছে, মৃত্যুদণ্ড মকুবের আর্জি বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারটি অনেক সময়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও রাষ্ট্রপতির তরফে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আবেদন জানানোর কত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সে ব্যাপারে কোনও সময়সীমা বেঁধে দেওয়া নেই। তাই তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদে রাষ্ট্রপতি কালাম শুধু দু’টি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এক, ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসি মকুবের আর্জি খারিজ করে দেন তিনি। দুই, খেরাজ রাম নামে এক অপরাধীর ফাঁসি মকুব করে যাবজ্জীবন কারাবাসের পক্ষে মত দেন। কালামের আগে রাষ্ট্রপতি ছিলেন কে আর নারায়ণন। ’৯৭ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তাঁর মেয়াদে প্রাণভিক্ষার কোনও আবেদন নিয়েই তিনি সিদ্ধান্ত নেননি। তবে রাষ্ট্রপতি আর বেঙ্কটরমন ৪৪ জনের প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করে দিয়েছিলেন। এখনও পর্যন্ত কোনও রাষ্ট্রপতির পাঁচ বছরের মেয়াদে সেই পরিসংখ্যানটাই সর্বোচ্চ।

এই পরিস্থিতিতে আজ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকার প্রশংসা করে অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি বলেন, ‘‘এর আগে সরকার ও রাষ্ট্রপতির তরফে বহু প্রাণভিক্ষার আবেদন দিনের পর দিন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বর্তমান রাষ্ট্রপতি যে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, এটা খুবই ভাল।’’

একুশ শতকে দাঁড়িয়ে ফাঁসির সাজা আর প্রাসঙ্গিক ও মানবিক কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক চলছে। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী তারুর আজ বলেন, ফাঁসি দিয়ে অপরাধ দমন করা যায় না। কিন্তু রোহতগি তারুরের মন্তব্য খারিজ করে বলেন,
‘‘আদালত ফাঁসির নির্দেশ দেওয়ার পর তা নিয়ে এত টালবাহানা হয় যে, অপরাধীদের মনে ভীতি তৈরি
হয় না।’’

প্রণববাবু যে আরও ২১ জনের আবেদন খারিজ করেছেন,
তাঁদের আদৌ ফাঁসি হবে কি না বা কবে হবে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, ব্যাপারটা অনেকাংশে আদালত ও রাজ্য সরকারের ওপর নির্ভর করছে।
কারণ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তথা রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আর্জি খারিজ করার পর তা রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হয়। তারাই আদালতের সঙ্গে আলোচনা করে ফাঁসির দিন স্থির করে। অনেক ক্ষেত্রে অপরাধী আবার ফের আদালতের দ্বারস্থ হয়। তা ছাড়া গোটা ব্যাপারটাই যে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল তা-ও স্পষ্ট। তাই ক্রমিক সংখ্যা না মেনে কারও কারও ক্ষেত্রে প্রাণভিক্ষার আবেদন আগে খারিজ করে দেওয়া হয় ও ফাঁসিও হয়ে যায়। যেমন
আফজল গুরুর ক্ষেত্রে যা হয়েছে, এবং যা আজ ইয়াকুব মেমনের
ক্ষেত্রে হল। মেমনের আগে আরও ১৩ জনের আবেদন খারিজ হলেও তাঁদের ফাঁসি এখনও হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE