Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কুম্ভকোনমের স্কুলে অগ্নিকাণ্ডে জেল ১০ জনের

এক দশক আগে স্কুলের মধ্যেই জীবন্ত ঝলসে গিয়েছিল ৯৪ জন কচিকাঁচা। সেই মামলায় আজ ১০ জনকে কারাদণ্ডের শাস্তি দিল তামিলনাড়ুর জেলা ও দায়রা আদালত। শুনানি শেষে অবশ্য বেকসুর খালাস পেয়ে গিয়েছেন আরও ১১ জন। কুম্ভকোনমের কাশীরাম স্ট্রিটের সরু রাস্তায় পাশাপাশি চলত তিনটে স্কুল শ্রীকৃষ্ণ এডেড প্রাইভেট স্কুল, সরস্বতী নার্সারি ও প্রাইমারি স্কুল আর শ্রীকৃষ্ণ গার্লস হাইস্কুল।

সংবাদ সংস্থা
তাঞ্জাভুর শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৪ ০৩:১০
Share: Save:

এক দশক আগে স্কুলের মধ্যেই জীবন্ত ঝলসে গিয়েছিল ৯৪ জন কচিকাঁচা। সেই মামলায় আজ ১০ জনকে কারাদণ্ডের শাস্তি দিল তামিলনাড়ুর জেলা ও দায়রা আদালত। শুনানি শেষে অবশ্য বেকসুর খালাস পেয়ে গিয়েছেন আরও ১১ জন।

কুম্ভকোনমের কাশীরাম স্ট্রিটের সরু রাস্তায় পাশাপাশি চলত তিনটে স্কুল শ্রীকৃষ্ণ এডেড প্রাইভেট স্কুল, সরস্বতী নার্সারি ও প্রাইমারি স্কুল আর শ্রীকৃষ্ণ গার্লস হাইস্কুল। সব মিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ৭০০-র বেশি। ২০০৪-এর ১৬ জুলাই আগুন লাগে এদেরই খড়ের চাল দেওয়া রান্নাঘরে। মুহূর্তের মধ্যে লেলিহান শিখা ছুঁয়ে ফেলে স্কুলের দ্বিতীয় তলা। আগুন নেভানোর ব্যবস্থা মজুত রাখা তো দূরে থাক, স্কুল থেকে বেরোনোর পথও মোটে একটা। ওই রাস্তা দিয়েই হুড়মুড়িয়ে অনেকে বেরিয়ে এলেও বাইরে আসতে পারেনি ৯৪ জন। পরে জানা যায়, যে ছোট্ট শরীরগুলো আগুনে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছিল নয়ের গণ্ডি পার করেনি তারা কেউ-ই।

কোনও স্কুলে এমন ভয়াবহ অগ্নি-কাণ্ড আগে দেখেনি দেশবাসী। সমালোচনার মুখে পড়ে তড়িঘড়ি বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে তালিমনাড়ু প্রশাসন। দশ বছর অপেক্ষার পর মামলার রায় বেরোল আজ। প্রথমে ২৪ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হলেও কিছু দিনের মধ্যেই তিন জনের বিরুদ্ধে যাবতীয় চার্জ তুলে নেওয়া হয়।

বাকি ২১ জনের নামে অনিচ্ছাকৃত খুনের ষড়যন্ত্র-সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিল। বুধবার ভিড়ে ঠাসা আদালতে ১০ জনকে দোষী সাব্যস্ত করলেন জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক মহম্মদ আলি।

অপরাধীদের সাজা ঘোষণাও হয়েছে এ দিনই। স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পালানিস্বামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এর সঙ্গেই চলবে দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের শাস্তি। পাশাপাশি ৪৭ লক্ষ টাকা জরিমানাও দিতে হবে তাঁকে। বাকি সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন স্কুল প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত তথা পালানিস্বামীর স্ত্রী সরস্বতী, প্রধান শিক্ষিকা শান্তলক্ষ্মী, দুপুরের খাবারের দায়িত্বে থাকা বিজয়লক্ষ্মী এবং রাঁধুনি বাসন্তী। তাঁদের প্রত্যেকের পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। এই পাঁচ জনের মোট জরিমানার পরিমাণ ৩.৭৫ লক্ষ। এই টাকা মৃত ও আহতদের পরিবারের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিচারক আলি। আজ যাঁরা ছাড়া পেয়ে গেলেন, তাঁদের অধিকাংশই রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্মী।

দুই সন্তানকেই কেড়ে নিয়েছিল সে দিনের আগুন। দীর্ঘ দশ বছর লড়াইয়ের পর রায় শুনে হতাশ সেই মা। তাঁর প্রশ্ন, যে সরকারি অফিসাররা এক বারও স্কুলে না গিয়েই স্কুল খোলার ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা এ ভাবে মুক্তি পেয়ে যান কী ভাবে! আর এক বাবা-মা স্পষ্টই জানালেন, “বাচ্চাকে হারানোর যন্ত্রণা তো ছিলই। অপরাধীদের ছাড়া পেয়ে যাওয়ার যন্ত্রণাও এ বার যোগ হল তার সঙ্গে।” উচ্চতর আদালতে যাওয়ার কথা তাই ভাবছেন অনেকেই।

২০০৪-এর সেই অভিশপ্ত দিনে স্কুলে গিয়েছিল কৌশল্যা। সে তখন তৃতীয় শ্রেণিতে। বছর গড়িয়েছে কিন্তু দুঃস্বপ্ন কাটেনি আজও। “মাঝে মাঝেই মনে হয়, আর একটু হলেই আমিও ঢুকে পড়তাম মৃতের তালিকায়” কৌশল্যার গলায় এখনও আতঙ্কের স্বর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kumbhokonam fire in school thanjabhur punishment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE