বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছ থেকে ছেলের দেহ নিতে সইসাবুদ মোহন সিংহের। আগরতলা চেকপোস্টে বাপি রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।
বাড়ি থেকে মাঝেমধ্যেই হারিয়ে যেতেন উত্তরপ্রদেশের ফতেপুরের মনোজ সিংহ। জাফরগঞ্জের কাপড়ের কলে কাজ করতেন বছর তেইশের ওই যুবক। মানসিক কিছু সমস্যা ছিল তাঁর। চার মাস আগে ফের নিখোঁজ হন। পরিজনরা ভেবেছিলেন কয়েক দিনেই বাড়ি ফিরে আসবেন। শেষে খোঁজও মিলল তাঁর। কিন্তু কফিনবন্দি নিথর দেহের!
ত্রিপুরার আখাউড়া সীমান্তে চার মাস পর ছেলের সঙ্গে দেখা হল মোহন সিংহের। ছেলে নয়, তাঁর দেহের সঙ্গে। আধময়লা ধুতি, সস্তা পাঞ্জাবি, গলায় গামছা বছর সত্তর ছুঁই ছুঁই মোহনবাবুর। বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছ থেকে ছেলের দেহ পাওয়ার পর, কফিন জড়িয়ে হাউহাউ করে কাঁদছিলেন বৃদ্ধ। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় তখন তাঁর চারপাশে জমেছে ভিড়।
নিজের মনে কী সব বলছিলেন মনোজের কাকা রাম সিংহ। প্রশ্নের জবাবে জানান, খোঁজাখুঁজি প্রথম কিছু দিন করা হয়েছিল। কিন্তু মনোজের হদিস মেলেনি। হঠাৎ খারাপ খবর আসে তাঁদের বাড়িতে। তারিখ ছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি। গুজরাটের সুরাতের জেলাশাসকের দফতর থেকে ফোনটা এসেছিল। তাতে জানানো হয়, বাংলাদেশের কুমিল্লার জেলে মৃত্যু হয়েছে মনোজের। দেহ পেতে হলে আগরতলার আখাউড়া সীমান্তে যেতে হবে। রামবাবু বলেন, “আমরা সবাই হতবাক। বুঝতেই পারছিলাম না ও কী করে বাংলাদেশে গেল। জেলেই বা ঢুকল কী ভাবে!”
ত্রিপুরা কোথায়, আগরতলাই বা কী ভাবে পৌঁছনো যায় কিছুই জানতেন না ফতেপুরের হতদরিদ্র, নিরক্ষর পরিবারটি। কোনও ক্রমে বুধবার এসে পৌঁছন আগরতলায়। তাঁদের জানানো হয়, বৃহস্পতিবার দেহ মিলবে। গত কাল সকালেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হাজির হন মোহন, রামবাবুরা। কফিন পৌঁছয় সন্ধেয়।
দেহ আত্মীয়দের হাতে তুলে দিতে এসেছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাসের দুই আধিকারিক। সঙ্গে ছিল মনোজের ডেথ-সার্টিফিকেট। সেটিতে লেখা ছিল গত বছর ৩১ ডিসেম্বর রাত ১০টা ১০ মিনিটে মনোজের মৃত্যু হয়। ওই দিন সন্ধেয় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এত দিন তাঁর দেহ রাখা ছিল কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে।
তবে, বাড়িতে আর ফেরা হল না মনোজের। আগরতলাতেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরছে মোহনবাবুর মুখে। কী ভাবে মৃত্যু হল তাঁর ছেলের? সেই প্রশ্নের উত্তর কোথাও মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy