Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কালামের স্মৃতিতে সংরক্ষণ চেয়ারের

আলোচনাচক্রে যোগ দিতে এসে তিনি এখানে কাটিয়েছিলেন মাত্র একটা দিন। আট বছর আগের সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। যেন মনে হয় এই তো সে দিনের ঘটনা— বলছেন দুর্গাপুরের কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর (সিএমইআরআই) কর্মী-আধিকারিকেরা। এপিজে আব্দুল কালাম সে দিন এখানে যে চেয়ার ব্যবহার করেছিলেন, তা সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে বলে জানান সংস্থার কর্তারা।

সিএমইআরআই-এ সে দিনের অনুষ্ঠানে। ফাইল চিত্র।

সিএমইআরআই-এ সে দিনের অনুষ্ঠানে। ফাইল চিত্র।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৫ ০২:৩২
Share: Save:

আলোচনাচক্রে যোগ দিতে এসে তিনি এখানে কাটিয়েছিলেন মাত্র একটা দিন। আট বছর আগের সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। যেন মনে হয় এই তো সে দিনের ঘটনা— বলছেন দুর্গাপুরের কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর (সিএমইআরআই) কর্মী-আধিকারিকেরা। এপিজে আব্দুল কালাম সে দিন এখানে যে চেয়ার ব্যবহার করেছিলেন, তা সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে বলে জানান সংস্থার কর্তারা।
২০০৭ সালের ২৯ নভেম্বর ছিল সেই আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্র। তার রাতেই দুর্গাপুরে চলে এসেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম। পর দিন সকালে আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করে বক্তৃতা করেন তিনি। জানিয়েছিলেন, ‘বেসিক সায়েন্স’-এর বিকাশ হলেই উদ্ভাবনী প্রতিভার বিকাশ সম্ভব। দুপুরে তিনি মিলিত হয়েছিলেন দুর্গাপুর ও লাগোয়া এলাকার ৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাছাই করা পড়ুয়াদের সঙ্গে। ভবিষ্যৎ ভারত নিয়ে মতামত দিয়েছিলেন। এর পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে ভবিষ্যতে কে কী হতে চায়, তার উত্তরে শিক্ষক, বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার, চিকিৎসক ইত্যাদি বলেছিল পড়ুয়ারা। কালাম প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘কেউ রাজনীতিতে নামতে চাও না?’’ মাত্র এক জন ছাত্রী জানায়, সে রাজনীতিতে উৎসাহী। কালাম হেসেছিলেন। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে ছাত্রছাত্রীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পরামর্শও দিয়েছিলেন। মঞ্চ থেকে নেমে গিয়ে হুইল চেয়ারে বসে থাকা প্রতিবন্ধী পড়ুয়াদের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন তিনি।
সিএমইআরআই-এ গড়া ১২ অশ্বশক্তির ছোট ট্রাক্টর ‘পুশান’-এর সে দিনই উদ্বোধন করেছিলেন কালাম। সংস্থার কাজকর্মের প্রশংসা করে জানিয়েছিলেন, দেশে এক লপ্তে থাকা জমির পরিমাণ কমছে। এমন যন্ত্রপাতি তৈরি করা দরকার যাতে ছোট জমিতে সহজেই বেশি মাত্রায় ফসল ফলাতে পারেন চাষিরা। সে দিন সিএমইআরআই-এর গবেষণাগারে সংস্থার বিজ্ঞানীদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথাবার্তা বলেন তিনি।

তিনি যে চেয়ারে বসেছিলেন সেটি এখনও রয়েছে। মঙ্গলবার তাতেই কালামের ছবি রেখে ফুল দিয়ে, মোমবাতি জ্বেলে তাঁকে স্মরণ করেন সংস্থার বিজ্ঞানী, আধিকারিক ও কর্মীরা। সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিরেক্টর পীযূষ পাল রায় জানান, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেই বিশেষ চেয়ারটি সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।

সেই চেয়ার। নিজস্ব চিত্র।

সেই সময় সংস্থায় মুখ্য নিরাপত্তা আধিকারিকের দায়িত্বে ছিলেন শঙ্কর রায়। তিনি জানান, তখন রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের সঙ্গে সহজ ভাবেই মিশেছিলেন কালাম। এমনকী, ডিরেক্টরের ঘরে বসে থাকার সময়ে তিনি চা খেতে চান। পাশের ঘর থেকে চা বানিয়ে এনে দিয়েছিলেন শঙ্করবাবু নিজেই। তিনি বলেন, ‘‘চায়ের স্বাদ কেমন হয়েছিল, আমি জানি না। কিন্তু উনি তৃপ্তি করেই পান করেছিলেন। আমি উত্তেজনায় প্রায় কাঁপছিলাম!’’ তিনি আরও জানান, অটোগ্রাফ চাওয়ায় নামের বানান জেনে নিয়েই অটোগ্রাফ দিয়েছিলেন। হেসে বলেছিলেন, ‘এক এক জন এক এক রকম বানান লেখেন। ভুল যাতে না করি তাই জেনে নিচ্ছি!’ আলোচনাচক্রে যোগ দেওয়ার আগে কালামের কোট ইস্ত্রি করে দিয়েছিলেন সিএমইআরআই-এর কর্মীরাই। তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে শোকস্তব্ধ সেই কর্মী-আধিকারিকেরা। সেই একটা দিনের স্মৃতি তাঁদের কাছে এখন বড় গর্বের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE