লম্বা ছুটি কাটিয়ে অবশেষে দেশে ফিরেছেন বটে! কিন্তু রাহুল গাঁধীকে ঘিরে কটাক্ষ আর সমালোচনার ঝড় থামছে কই? অবশ্য বেশির ভাগটাই আড়ালে-আবডালে! অনেকে আবার সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় সরব। কারও কটাক্ষ, ৫৬ ইঞ্চির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে লড়তে ৫৬ দিন ছুটি কাটিয়ে এলেন রাহুল! কেউ বলছেন, স্বাগত ‘ঘর ওয়াপসি’!
সমালোচনা-বিদ্ধ রাহুলকে আড়াল করতে আসরে নামতে হল সেই সনিয়া গাঁধীকেই! রাহুল গত কাল সকালে ব্যাঙ্কক থেকে দিল্লি ফিরলেও এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে দেখা যায়নি তাঁকে। কংগ্রেসের অন্দরে রাহুলের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, শনিবার হিন্দি বলয়ের একাধিক রাজ্যের কৃষক প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করার কথা কংগ্রেসের সহ-সভাপতির। তার পরে, রবিবার রামলীলা ময়দানে জনসভা করবেন তিনি। অর্থাৎ ‘ঘর ওয়াপসি’র পরে সে দিনই প্রথম প্রকাশ্যে আসবেন রাহুল! সে কারণে রামলীলার সভাকে কংগ্রেসের অনেকে রসিকতা করে ‘শুভ মহরৎ’-ও বলছেন! আর এই অনুষ্ঠানকে সফল করতেই সনিয়ার নির্দেশে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছেন কংগ্রেসের সব স্তরের নেতা।
রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতারা বলছেন, আগে রামলীলার পালা মিটুক, তার পরে দেখা যাবে। কী হবে তখন? কংগ্রেসের একাংশ বলছেন, এর পরেই রাহুলের আসল যুদ্ধ শুরু হবে। দলে নিজের অবস্থান জোরদার করতে কেন্দ্রে মোদী সরকারের ‘গরিব বিরোধী’ নীতির প্রতিবাদ করতে শিগগিরই রাজ্যওয়াড়ি সফরে বেরোবেন রাহুল। তাঁদের বক্তব্য, রাহুলের সেই রাজ্যওয়াড়ি সফরের মূল উদ্দেশ্য দু’টো। এক, মোদী-সরকারের নীতির বিরোধিতায় সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নেমে হতাশাগ্রস্ত কংগ্রেসকে টেনে তোলা। দুই, কংগ্রেসে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দলীয় সভাপতির পদ অর্জন করা। একটা সময় ঠিক ছিল, এপ্রিলেই কংগ্রেস সভাপতি পদে অভিষেক হবে রাহুলের। কিন্তু দশ জনপথ ঘনিষ্ঠরা মনে করছেন, স্রেফ সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ ভাবে রাহুলকে সভাপতি পদে বসিয়ে দেওয়া হলে তা নিয়েও কড়া সমালোচনা হবে। এমনিতেই দলের অন্দরে বসে শীলা দীক্ষিত, সন্দীপ দীক্ষিত, অমরেন্দ্র সিংহের মতো নেতারা প্রকাশ্যেই রাহুলের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে বলছেন, কংগ্রেস সভাপতি পদে এখনও সনিয়া গাঁধীর বিকল্প নেই। রাহুল-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, বিষয়টা বুঝে রাহুল রাজ্যওয়াড়ি সফরে নেমে এমন এক পরিবেশ তৈরি করতে চাইছেন যাতে এই ধরনের বিতর্কের মুখ বন্ধ করে দেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সাংগঠনিক পুনর্গঠন করে নতুন টিম গঠন করাও তাঁর পক্ষে সহজ হবে।
রাহুল-ঘনিষ্ঠরা ইতিমধ্যেই যুবরাজের সম্ভাব্য ‘টিম’ গঠনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। তলে তলে হলেও তার ইঙ্গিত পেতে শুরু করেছেন অনেকেই। যেমন দিগ্বিজয় সিংহ। তিনি আজ কংগ্রেসের এক বৈঠকে বলেন, ‘‘আমাদের অবসর নেওয়ার বয়স হয়েছে। প্রকৃতির নিয়ম হল পুরনো পাতা ঝড়ে গেলে নতুন পাতা গজায়। মাত্র ২৫ বছরের যুবক আহমেদ পটেলকে একদা রাজীব গাঁধী গুজরাতের প্রদেশ সভাপতি করেছিলেন। আমি প্রদেশ সভাপতি হই ৩৮ বছর বয়সে। এ বার রাহুল গাঁধীকেও সুযোগ দিতে হবে তরুণ নেতাদের নিয়ে টিম তৈরি করার।’’
বস্তুত গোটা কংগ্রেস দল এখন পরশুর সভার আয়োজনে ব্যস্ত। শেষ পর্যন্ত কত ভিড় হবে, তা রবিবারই বোঝা যাবে। কিন্তু কংগ্রেস নেতাদের দাবি, ৬টি রাজ্য থেকে যে সংখ্যায় কৃষক আসার সম্ভাবনা রয়েছে, অত ভিড় সাম্প্রতিক কালে দিল্লিতে কোনও সভায় হয়নি। এমনকী এআইসিসি-র এক সম্পাদক দাবি করেন, এতো ভিড় হবে যে, অর্ধেকের বেশি লোক রামলীলা ময়দানে ঢুকতে পারবেন না! রাস্তায় আটকে থাকবেন!
সন্দেহ নেই নতুন করে রাহুলের আত্মপ্রকাশের জমি তৈরি করে দিতেই এতো আয়োজন। আর সেই আয়োজনে কোনও খামতিই রাখতে চাইছেন না আহমেদ পটেল-দিগ্বিজয় সিংহ-ভূপেন্দ্র হুডা-সচিন পায়লটরা। এও বলা যেতে পারে, খামতি রাখতে দিচ্ছেন না স্বয়ং সনিয়া গাঁধী!
তবে তার পরেও উদ্বেগ থেকে যাচ্ছে খোদ রাহুলকে নিয়েই! কী বলবেন তিনি! তাঁর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা বদলে পরিণত রাজনীতিকের মতো আচরণ করবেন তো? না হলে শুধু রামলীলা নয়, হতাশায় ডুবে মাথা তোলার শক্তি হারাবে কংগ্রেসও!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy