Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

চহ্বাণের ইস্তফা, রাজকে উদ্ধবের ফোনে জল্পনা

কুড়ি দিনও বাকি নেই ভোটের। প্রতি মুহূর্তে নাটকীয় মোড় নিচ্ছে মরাঠা রাজনীতি। দেড় দশকের জোট ভেঙে গত কালই মহারাষ্ট্র সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল শরদ পওয়ারের এনসিপি। তার ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই নৈতিক ভাবে এগিয়ে থাকতে আজ মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিলেন পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৫
Share: Save:

কুড়ি দিনও বাকি নেই ভোটের। প্রতি মুহূর্তে নাটকীয় মোড় নিচ্ছে মরাঠা রাজনীতি। দেড় দশকের জোট ভেঙে গত কালই মহারাষ্ট্র সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল শরদ পওয়ারের এনসিপি। তার ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই নৈতিক ভাবে এগিয়ে থাকতে আজ মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিলেন পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ।

রাজ্যপাল সি ভি রাও চহ্বাণের ইস্তফা গ্রহণ করে নিয়েছেন কি না তা অবশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। সম্ভবত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশে ফেরার পরেই পরিষ্কার হবে, চহ্বাণ বাকি ক’দিন তদারকি সরকার চালাবেন, নাকি রাষ্ট্রপতি শাসনে ভোট হবে মহারাষ্ট্রে। কিন্তু খুঁটিনাটি সেই

বিষয়কে পাশে সরিয়ে রাখলেও এ ব্যাপারে কোনও সংশয় নেই ভোটের মুখে এসে হঠাৎই জমে উঠেছে মরাঠা রাজনীতির খেলা।

মাত্র মাসখানেক আগেও অনেকে মনে করছিলেন, মহারাষ্ট্রে এ বার ভোট হবে সহজ অঙ্কে। দেড় দশক ধরে সরকার চালানোর পর প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার ঝড়েই কাত হবে কংগ্রেস-এনসিপি জোট সরকার। কার্যত ড্যাং ড্যাং করে জিতে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি-শিবসেনা জুটি। কিন্তু গত দু’সপ্তাহে পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোরালো হয়ে উঠেছে। কাল যেমন দীর্ঘ ২৫ বছরের জোট ভেঙে দিয়েছে বিজেপি ও শিবসেনা। ভেঙেছে কংগ্রেস-এনসিপি জোটও।

রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করেছে তার পর থেকেই। যার মূল কারণ উদ্ধব ঠাকরে ও রাজ ঠাকরে। বালসাহেব ঠাকরের বড় ছেলে ও ভাইপোর মধ্যে অনেক দিন ধরেই টানাপড়েন চলছে। কিন্তু সূত্রের খবর, বিজেপির সঙ্গে সম্পর্কে ফাটলের ইঙ্গিত পেয়েই ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টায় নামেন উদ্ধব। অসুস্থ রাজের খবর নিতে গত সপ্তাহেই এক বার তাঁকে ফোন করেছিলেন উদ্ধব। কাল বিজেপির সঙ্গে জোট ভাঙার পর ফের রাজকে ফোন করেন বালসাহেব-পুত্র। দুই ভাইয়ের এই যোগাযোগই মরাঠা রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের জল্পনা উস্কে দিয়েছে।

রাজনীতিকরা শুধু নন, মরাঠা-মনুসের অনেকেই মনে করেন রাজ চৌখস নেতা। তুখোর বক্তৃতা দেন। তিনিই বালসাহেবর যোগ্য উত্তরসূরি। এই অবস্থায় ফের দুই ভাই হাত মিলিয়ে যদি ‘মরাঠা-অস্মিতা’-কে সামনে রেখে ভোটে লড়েন, তা হলে ভোটের হিসেব অনেকটাই বদলে যাবে। সে ক্ষেত্রে গুজরাতি নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মরাঠাদের লড়াইকেই রাজনীতির অস্ত্র করতে চাইবেন দুই ভাই। তাতে কিছুটা হলেও চাপে পড়ে যাবে বিজেপি।

যদিও বিজেপির একটি সূত্র দাবি করছে, দুই ভাই হাত মেলানোর সম্ভাবনা বিশেষ নেই। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে রাজের সম্পর্ক বরাবরই ভালো। রাজ যাতে বিজেপির দিকে না ঝোঁকেন, তা নিশ্চিত করতেই ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন উদ্ধব। তা ছাড়া, বিজেপির এক শীর্ষ সারির নেতার কথায়, অমিত শাহ এ নিয়ে খুব বেশি ভাবছেন না। দলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা বলছে, একা লড়ে বিজেপি অন্তত ১২০টি আসন পাবে। সেই কারণেই ঝুঁকি নিয়েছেন তিনি। বাস্তবে তা করে দেখাতেই আদা-জল খেয়ে নামতে চাইছে বিজেপি।

আজ তারা ১৭২ জন প্রার্থীর নামও ঘোষণা করে দিয়েছে। এর পাশাপাশি, ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাজ, উদ্ধব, এমনকী, অজিত পওয়ারদের জন্যও দরজা খোলা রাখতে চাইছে বিজেপি। সে কারণেই তলে তলে এঁদের সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা হচ্ছে।

কংগ্রেসের ছবিটাও হঠাৎ করে পাল্টে গিয়েছে লক্ষ্যণীয় ভাবে। মহারাষ্ট্রে যে এ বার হারতে হবে, সেটা ধরেই নিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু এনসিপি-র সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়ার পর কংগ্রেস এখন দৃশ্যতই খুশি। তার একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, চার বা পাঁচমুখী লড়াইতে কোন আসনে কী ফল হবে, কেউ জানে না। তাই কংগ্রেসের সম্ভাবনা একেবারেই নেই এমনটা আর বলা যাচ্ছে না। উল্টে রাজ্যে কংগ্রেস কর্মীরা গত কাল থেকে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। তার প্রধান কারণ হল, ১৫ বছর পর এই প্রথম মহারাষ্ট্রের সব ক’টি অর্থাৎ ২৮৮টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ পাবে কংগ্রেস। দ্বিতীয়ত, কংগ্রেস ছাড়া আর কোনও দলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নেই। কংগ্রেসের কিছু নেতা পৃথ্বীরাজকে পছন্দ না করলেও, চহ্বাণের সততা প্রশ্নাতীত বলেই মনে করেন দলের অনেকে। তৃতীয়ত, রাজ্যে হিন্দু ভোট যখন চার দলের মধ্যে ভাগাভাগি হবে তখন সংখ্যালঘু ভোটের বেশির ভাগটাই পেতে পারে কংগ্রেস। আর সে কারণেই বিজেপির সঙ্গে শরদ পওয়ারের আঁতাঁতের গল্প আজ থেকে বেশি করে উস্কে দিতে শুরু করেছে কংগ্রেস। যাতে পওয়ারের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে মুসলিম মনে সংশয় তৈরি হয়। সেই সঙ্গে এই গল্পও কংগ্রেস ভোট-বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে যে, মোদী এবং এনসিপি নেতা প্রফুল্ল পটেল দু’জনেই গুজরাতি। আর দুই গুজরাতির মধ্যে সমন্বয় করছেন আর এক গুজরাতি শিল্পপতি। আর একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, সংখ্যালঘু ভোট করায়ত্ত করতে রাজ্যে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে কংগ্রেসের জোটের কথা আজ ঘোষণা করেছেন পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ।

তবে মহারাষ্ট্রে আসন সমঝোতা ভেস্তে গেলেও এখনও কিন্তু এনডিএ জোট ভাঙেনি বলেই করেছে বিজেপি ও শিবসেনা। মোদী সরকারে শিবসেনার নেতা অনন্ত গীতে ভারী শিল্প মন্ত্রী। তিনি এখনও ইস্তফা দেননি। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, অনন্ত গীতে ইস্তফা দেবেন কি না, তা স্থির করবেন প্রধানমন্ত্রী বা উদ্ধব ঠাকরে। আমেরিকা থেকে ফিরে মোদী এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন, যদি না তার আগেই উদ্ধব কোনও সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তাছাড়া, বিজেপি সূত্রের মতে, মহারাষ্ট্রে দু’টি পুরসভা, ৪টি জেলা পরিষদ ও ৮টি পঞ্চায়েতে এখনও জোট বেধে রয়েছে বিজেপি-শিবসেনা। জোট ভেঙে গেলে সেগুলিও ভাঙতে হবে। তাই এখন সর্বশক্তি দিয়ে ভোটে যথাসম্ভব বেশি আসন জেতার কথাই ভাবছে দু’দল। বাকি সব সিদ্ধান্ত ভোটের পর হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE